মালদা, 29 জুলাই : পৃথিবীকে বাঁচিয়ে রাখতে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে প্রকৃতির ভাল থাকা কত জরুরি, তা জানে গোটা বিশ্ব । উন্নত দেশগুলি তো বটেই, উন্নয়নশীল দেশগুলিরও এখন প্রধান লক্ষ্য প্রকৃতির স্বাস্থ্য ভাল রাখা । সেই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে কাজ চলছে বিশ্ব জুড়ে । কিন্তু মালদা জেলায় প্রকৃতির স্বাস্থ্যটা ঠিক কেমন ?
গঙ্গা-ফুলহর-মহানন্দায় ঘেরা মালদা জেলা । এর মধ্যে মহানন্দাই মালদার লাইফলাইন বলা যেতে পারে । এই মুহূর্তে মহানন্দা দেশের দূষিত নদীগুলির মধ্যে অন্যতম । পাহাড় থেকে বাংলাদেশে প্রবেশের আগে পর্যন্ত এই নদী মানুষের লালসার শিকার হয়ে উঠেছে । নদীর বুকে গজিয়ে উঠেছে ঘরবাড়ি ৷ অবৈজ্ঞানিক উপায়ে কেটে নেওয়া হচ্ছে নদীখাত ।
মহানন্দাকে বাঁচাতে গ্রিন ট্রাইবুনালে পরিবেশবিদ সুভাষ দত্তের দায়ের করা মামলায় সম্প্রতি অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি অমিত স্থালেকর ও বিশেষজ্ঞ সদস্য শৈবাল দাশগুপ্তের বেঞ্চ নির্দেশ দিয়েছে, শিলিগুড়ি এলাকায় মহানন্দা দখল করে বসবাস করা লোকজনকে সরাতে চার সপ্তাহের মধ্যে প্রশাসনকে ব্যবস্থা নিতে হবে । নদীর দূষণ ঠেকাতে পরামর্শের জন্য গঠন করতে হবে বিশেষজ্ঞ কমিটি । দূষিত জল নদীতে ফেলার আগে ট্রিটমেন্ট করতে হবে । এছাড়াও মহানন্দা রক্ষায় একাধিক নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে ।
আরও পড়ুন : বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবসে 512টি টিয়া পাখি উদ্ধার
জাতীয় পরিবেশ আদালতের এই নির্দেশে ভরসা পাচ্ছেন মালদার পরিবেশ আন্দোলনের কর্মীরাও । তাঁদের মনে হয়েছে, মহানন্দা বাঁচাতে শিলিগুড়িতে কাজ শুরু হলে তার প্রভাব মালদাতেও এসে পড়বে । কারণ, মহানন্দার গতিপথে রয়েছে এই জেলাও । এমনই এক সংগঠন সহকার-এর অন্যতম কর্তা, চিকিৎসক অসীম শর্মা বলেন, "বর্তমানে কৃষিক্ষেত্রে যথেচ্ছ কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের ব্যবহার প্রকৃতি দূষণে অনুঘটকের কাজ করছে । জলে ধুয়ে এসব মহানন্দায় মিশছে । তার সঙ্গে রয়েছে নদী দখল । নদীর বুকে তৈরি হয়েছে ঘরবাড়ি । খরা মরশুমে মহানন্দা নালায় পরিণত হয় । কালো জল দুর্গন্ধে ভরে যায় । নদীতে এখন বালি পাওয়া যায় না । পা ডুবে যায় মাটি কিংবা কাদায় । নদীতে মাছ কমে গিয়েছে । বাস্তুতন্ত্র হয়েছে বিপন্ন । শহরের দূষিত জল পড়ছে এই নদীতে ।"
এছাড়াও তিনি বলেন, "শুনলাম গ্রিন ট্রাইবুনাল মহানন্দা বাঁচাতে একাধিক নির্দেশিকা জারি করেছে । এই রায়ে আমরা আশায় বুক বাঁধছি । প্রকৃতি বাঁচাতে আমরা বছরের বিভিন্ন সময় একাধিক জায়গায় গাছ লাগাই । তবে গ্রামের থেকে শহরের প্রকৃতি বেশি বিপন্ন । সড়ক সম্প্রসারণে গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে । কিন্তু সেই জায়গায় নতুন গাছ লাগানো হচ্ছে না । ক’দিন আগে প্রশাসনিক কর্তাদের নিয়ে এক নাগরিক সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে । সেখানে জাতীয় সড়কের ধারে গাছ লাগানোর প্রস্তাব উঠে এসেছে । আমরাও তাতে অংশগ্রহণ করব বলে ঠিক করেছি ।"
আরও পড়ুন : এইমস-এ সপ্তম মালদার ধৌলি
মালদা জেলার প্রকৃতি যে বিপন্ন তা কার্যত স্বীকার করে নিয়েছেন সদর মহকুমাশাসক সুরেশচন্দ্র রানো । তাঁর কথায়, "মহানন্দা নিয়ে কতগুলি ভুল আমরা খুঁজে পেয়েছি তা স্বীকার করতে বাধ্য হচ্ছি । মালদা শহরের জল ছ’টি পয়েন্ট দিয়ে মহানন্দায় মেশে । শহরের জল যাতে ট্রিটমেন্ট করে মহানন্দায় ফেলা যায় তার জন্য সেচ বিভাগের সঙ্গে আমরা যৌথভাবে একটা প্রকল্প তৈরির চেষ্টা করছি । আর মহানন্দার বুকে প্রচুর অবৈধ বাড়ি তৈরি হয়েছে । এনিয়েও আমরা খোঁজখবর নিয়েছি । সেচ বিভাগ থেকে সম্প্রতি আমাদের চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে, এসব অবৈধ বাড়িঘর দ্রুত সরিয়ে ফেলতে হবে । আমরা দ্রুত নদীকে তার নিজের জায়গা ফিরিয়ে দেব । তবে গ্রিন ট্রাইবুনালের কোনও নির্দেশিকা এখনও আমরা পাইনি । আর জেলার বিভিন্ন জায়গায় বৃক্ষচ্ছেদনের যেসব অভিযোগ মিলছে, তা আমাদেরও নজরে এসেছে । বন বিভাগের অনুমতি ছাড়া গাছ কাটা যায় না । গাছ কাটা হলেও সেখানে নতুন গাছ লাগাতে হয় । তবে সব জায়গায় প্রশাসন পৌঁছতে পারে না । অভিযোগ পাওয়া গেলে আমরা তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নিই । তবে শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়ককে আরও সবুজ করে তুলতে আমরা কিছু ব্যবস্থা নিচ্ছি ।"
আরও পড়ুন : Gani Khan : ফিরছে গঙ্গাভবন, গনি খানের স্মৃতি ফেরাচ্ছেন মন্ত্রী সাবিনা
সম্প্রতি জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণ প্রকল্পে অসংখ্য গাছ কেটে নেওয়া হলেও সেখানে এখনও নতুন গাছ লাগানো হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে । এ প্রসঙ্গে বন বিভাগের মালদা রেঞ্জের অফিসার সুজিতকুমার চট্টোপাধ্যায় বলেন, "সরকারি নিয়ম মেনে এই জেলায় গাছ কাটা হলেও আইন মেনে দুটি করে গাছ লাগানো হয় । সড়ক সম্প্রসারণে আমাদের কিছু গাছ কাটতে হয়েছে । আমরা সেই জায়গায় নতুন গাছ লাগাতে শুরু করেছি । মধুঘাট থেকে সাহাপুর পর্যন্ত 12 নম্বর জাতীয় সড়কের 10 কিলোমিটার এলাকায় গাছ লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে । এবারও আমরা আরও কিছু এলাকায় গাছ লাগাচ্ছি । এছাড়া আমরা সরকারি হাসপাতালে সবুজশ্রী প্রকল্পে সদ্য মায়েদের হাতে গাছের চারা তুলে দিচ্ছি । হালনা নামে একটি গ্রামে বেশ কিছু বন্ধ্যা জমি ছিল । আমরা ওই জমিতে গাছ লাগিয়েছিলাম । সেই এখন ঘন সবুজে পরিণত হয়েছে । গত পরশু সেই দৃশ্য উপগ্রহ চিত্রে ধরা পড়েছে । শহর এলাকায় ঘরবাড়ি নির্মাণে কিছু গাছ কাটা পড়েছে তা ঠিক । আমরা শহরের বাসিন্দাদের ছাদে বাগান তৈরির জন্য আবেদন জানাচ্ছি । শহরের মধ্যে দিয়ে যাওয়া জাতীয় সড়কেও আমরা গাছ লাগাব বলে ঠিক করেছি ।"
আরও পড়ুন : hundred five years women death : মানিকচকে 105 বছরের বৃদ্ধার শেষকৃত্যে বাজল ডিজে, উড়ল আবির