মালদা, 18 ফেব্রুয়ারি: মা ছিলেন তাঁর জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ৷ অথচ সেই বয়স্ক মায়ের জন্যই তিনি কিছু করতে পারেননি ! এ নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই মানসিক অবসাদে ভুগছিলেন তিনি ৷ শেষমেশ বেছে নিলেন আত্মহত্যার পথ ৷ অবসাদেই শেষ পর্যন্ত গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মঘাতী হলেন যুবক ? প্রাথমিকভাবে অন্তত এমনটাই মনে করা হচ্ছে ৷ শনিবার সকালে বাড়ির অদূরেই একটি আমগাছে তাঁর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার করে পুলিশ ৷ ঘটনায় আলোড়ন পড়ে গিয়েছে পুরাতন মালদার মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মনোহরপুর গ্রামে (Youth Body Recovered in Malda) ৷ মায়ের জন্য কিছু করতে না-পারার যন্ত্রণা যে এক তরতাজা তরুণের জীবনে এমন পরিণতি ঘটাতে পারে, তা জেনে শোকস্তব্ধ এলাকাবাসী ৷ এই ঘটনা ভাবাচ্ছে পুলিশকেও ৷
মৃত যুবকের নাম একান্ত মণ্ডল ৷ বয়স 33 বছর ৷ পূর্বপুরুষের আমল থেকেই তাঁরা মনোহরপুর গ্রামের বাসিন্দা ৷ পেশায় রাজমিস্ত্রি ছিলেন একান্ত ৷ দুই দাদা তাঁদের নিজেদের পরিবার নিয়ে আলাদা থাকেন ৷ বয়স্কা মা সাবিত্রীদেবীকে নিয়ে থাকতেন একান্ত ৷ প্রতিবেশীরা জানালেন, দুই দাদা বিয়ের পর মা'কে ছেড়ে আলাদা সংসার পেতেছেন ৷ তা দেখে নিজে আর বিয়ে করেননি একান্ত ৷ তাঁর ভয় ছিল, পাছে তাঁর মা একা হয়ে যান ! একান্তর বন্ধুরা বলছেন, তিনি কোনও সাতে-পাঁচে থাকতেন না ৷ তবে, মাকে সুখে রাখতে না-পারার যন্ত্রণা তাঁকে কুড়ে-কুড়ে খেত ৷ কিছুদিন ধরেই ভুগছিলেন মানসিক অবসাদে ৷ সহকর্মীদের একান্ত বলেছিলেন, তাঁর কিছু হয়ে গেলে মায়ের খুব কষ্ট হবে ৷
আরও পড়ুন: লটারি জিতে বিক্রেতার কাছে প্রতারণার শিকার ! আসানসোলে আত্মঘাতী বিজেতা
শুক্রবার কাজ সেরে বাড়ি ফেরার পর ফের বাইরে বেরিয়ে যান একান্ত ৷ তারপর থেকে তাঁর আর কোনও খোঁজ মিলছিল না ৷ পরিবারের সদস্যরা মনে করেছিলেন, হয়তো তিনি শিবরাত্রি উপলক্ষে গঙ্গা থেকে জল আনতে গিয়েছেন ৷ কিন্তু, শনিবার সকালে এলাকারই কিছু বাসিন্দা বাড়ি থেকে খানিকটা দূরে একটি আমগাছে একান্তর দেহ ঝুলতে দেখেন ৷ তাঁরাই একান্তর পরিবার এবং স্থানীয় থানায় খবর দেন ৷ খানিক বাদে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে দেহটি উদ্ধার করে নিয়ে যায় ৷
একান্তর পকেট থেকে একটি চিঠি উদ্ধার করা হয়েছে ৷ সেটিকেই তাঁর সুইসাইড নোট বলে মনে করছে পুলিশ ৷ সেই সুইসাইড নোটের বয়ান উপস্থিত সকলের চোখে জল এনে দিয়েছে ৷ চিঠিতে একান্ত লিখেছেন, অনেক কষ্ট করে মা তাঁদের মানুষ করেছেন ৷ কিন্তু মা'কে তিনি কোনও সুখ কিংবা শান্তি দিতে পারলেন না ৷ তাই তিনি ছেলে হিসাবে কলঙ্ক ! চিঠির শেষে দাদা-দিদিদের উদ্দেশে একান্ত লিখেছেন, তাঁরা যেন মা'কে ভালো রাখে ৷ নিজেরাও ভালো থাকেন ৷
একান্তের ছোটবেলার বন্ধু প্রসেনজিৎ দেবনাথ বলেন, "আমরা একসঙ্গেই এই গ্রামে মানুষ ৷ একা খুব ভালো ছেলে ছিল ৷ কোনও ঝুট-ঝামেলায় থাকত না ৷ তবে খুব চাপা স্বভাবের ছিল ৷ আজ সকালে শুনলাম, গতকাল সন্ধে থেকে ও নাকি আর বাড়ি ফেরেনি ৷ আজ সকালে ওর মাও ওকে খুঁজতে বেরিয়েছিলেন ৷ তিনি ভেবেছিলেন, শিবরাত্রি উপলক্ষে হয়তো ও গতকাল রাতে শিবের মাথায় জল ঢালতে গিয়েছে ৷ তখনই কয়েকজন গ্রামবাসীর চোখে পড়ে, বাগানের আমগাছ থেকে ওর দেহ ঝুলছে ৷ ওর পকেট থেকে সুইসাইড নোটও পাওয়া গিয়েছে ৷ মাকে নিয়ে ও মানসিক অবসাদে ভুগছিল ৷ তার জন্যই হয়তো আমাদের ছেড়ে এভাবে চলে গেল !"