মালদা, 26 এপ্রিল : পিস্তল হাতে ভরা ক্লাসরুমে ঢুকে হুমকি দিয়ে সপ্তম শ্রেণির পড়ুয়াদের দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখল এক ব্যক্তি ৷ বুধবার ঘটনাটি ঘটেছে পুরাতন মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে ৷ খবর পেয়ে স্কুলে ছুটে যান জেলা পুলিশের কর্তারা ৷ দেব বল্লভ নামে ওই ব্যক্তিকে নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ ৷ জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির স্ত্রী রীতা বল্লভ পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য ৷
জানা গিয়েছে, এদিন দুপুরে যখন ঘটনাটি ঘটে তখন ক্লাস চলছিল ওই স্কুলে ৷ হঠাৎই স্কুলের সপ্তম শ্রেণির একটি কক্ষে ঢুকে পড়ে ওই ব্যক্তি ৷ তার কাঁধে ব্যাগ, হাতে খোলা পিস্তল ৷ চিৎকার করে সবাইকে হুমকি দিয়ে চলেছে সে ৷ তার রুদ্রমূর্তি দেখে ভয়ে কাঁপতে শুরু করে পড়ুয়ারা ৷ শিক্ষক-শিক্ষিকারাও হতভম্ব হয়ে পড়েন ৷ খবর যায় স্থানীয় থানায় ৷ থানার পুলিশ-সহ জেলা পুলিশের কর্তারা ঘটনাস্থলে ছুটে যান ওই স্কুলে ৷ শেষ পর্যন্ত ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান খানিকটা প্রাণের ঝুঁকি নিয়েই ওই ব্যক্তিকে কবজায় আনেন ৷ ঘটনার জেরে বুধবার দুপুরে তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে পুরাতন মালদার মুচিয়া চন্দ্রমোহন হাইস্কুলে ৷ স্থানীয় জনতার রোষেরও শিকার হয়েছে ওই ব্যক্তি ৷
এই প্রসঙ্গে স্কুলের শিক্ষক দেবাশিস শীল জানিয়েছেন, ওই ব্যক্তির নাম দেব বল্লভ ৷ তার স্ত্রী ও ছেলে প্রায় এক বছর ধরে নিখোঁজ ৷ স্ত্রী ও সন্তানের খোঁজ পেতে ওই ব্যক্তি একাধিকবার পুলিশের দ্বারস্থ হয়৷ সংবাদমাধ্যমেও আবেদন জানায়৷ কিন্তু তাকে নাকি কেউ সাহায্য করেনি ৷ আজ স্কুলের মেইন গেটের পাশে ছোট দরজা দিয়ে স্কুলে ঢুকে ব্যাগ থেকে পিস্তল বের করে হাতে নেয় ওই ব্যক্তি ৷ পিস্তল দেখিয়ে সে ক্লাস সেভেনের পড়ুয়াদের আটকে রাখে ৷ তার ব্যাগে কিছু পেট্রল বোমাও ছিল ৷ সেই সময় এক শিক্ষিকা ওই ক্লাস নিচ্ছিলেন ৷ তারপরেই ওই ব্যক্তি হাতে পিস্তল তুলে নেয় ৷ ওই ক্লাসে প্রায় ৮০ জন পড়ুয়া ছিল ৷ যে কোনও মুহূর্তে কোনও দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারত৷ ওই ব্যক্তি কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন হলেও পুরোপুরি মস্তিষ্ক বিকৃত, তা বলা যাবে না ৷
আরও পড়ুন: 'বামফ্রন্টের পুলিশ হলে গুলিতে মৃত্যুমিছিল হত', কালিয়াগঞ্জে হামলাকারীদের গ্রেফতারির দাবি কুণালের
ঘটনার সময় ওই ক্লাস নিচ্ছিলেন বাংলা শিক্ষিকা প্রতীক্ষা মণ্ডল ৷ তিনি বলেন, “ক্লাসে ঢোকার পরেই আমি ওই ব্যক্তিকে দেখি ৷ ভেবেছিলাম, সে অভিভাবক ৷ আমি ছেলেমেয়েদের কেবলমাত্র লিখতে দিয়েছি, হঠাৎ ওই ব্যক্তি ক্লাসে ঢুকে পড়ে ৷ আমাকে পিস্তল দেখিয়ে নড়তে বারণ করে সে ৷ একই কথা বলেন পড়ুয়াদেরও ৷ সে বলতে থাকে, তার ছেলেকে কিডন্যাপ করা হয়েছে ৷ সবাইকে গুলি করে মেরে ফেলবে ৷ আমার মাথা কাজ করছিল না ৷ পড়ুয়ারা সবাই কান্নাকাটি শুরু করে দেয় ৷ এরপরেই পুলিশ ওই ব্যক্তিকে কবজা করে ৷”
দেব বল্লভের বাড়ি মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতেরই নেমুয়া গ্রামে ৷ তাঁর স্ত্রী রীতা বল্লভ পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির বিজেপি সদস্য বলে জানা গিয়েছে ৷ দেব বল্লভের দাবি, বছর খানেক ধরে তার স্ত্রী ও ছাত্রের কোনও খোঁজ নেই ৷ স্ত্রী-সন্তানের খোঁজ পেতে কয়েক মাস আগেও দেববাবু এই ব্যক্তি সোশাল মিডিয়াতেও খোলা পিস্তল হাতে প্রশাসনকে হুমকি দেয় ৷ এর জেরে তাকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ ৷ যদিও পরে সে জামিনে মুক্তি পায়৷ প্রাথমিক তদন্তে পুলিশেরও ধারণা, ওই ব্যক্তি খানিকটা মানসিক ভারসাম্যহীন ৷
এদিন সাদা পোশাকে ক্লাসরুমে ঢুকে ওই ব্যক্তিকে কবজা করেন ডিএসপি (ডিএনটি) আজহারউদ্দিন খান ৷ সেই সময় উত্তেজিত কিছু স্থানীয় মানুষ তাকে বেধড়ক মারধর করে ৷ যদিও পুলিশ জনরোষের হাত থেকে তাঁকে উদ্ধার করে ৷ খবর পেয়ে স্কুলে চলে এসেছিলেন পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদবও ৷ তিনি বলেন,“আমরা ওই ব্যক্তিকে ধরে ফেলেছি ৷ তাঁর সঙ্গে থাকা যাবতীয় জিনিস আমরা নিজেদের হেফাজতে নিয়েছি ৷ পড়ুয়া ও শিক্ষকরা সবাই নিরাপদে রয়েছেন ৷ উদ্বিগ্ন অভিভাবকদের সঙ্গে স্থানীয় মানুষজন স্কুলের বাইরে ভিড় করেছিলেন ৷ তাঁদের সবাইকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ৷" পুলিশ সুপার আরও জানিয়েছেন, প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই ব্যক্তির পারিবারিক কিছু সমস্যা রয়েছে ৷ এর আগে ফেসবুকেও কিছু পোস্ট করার জন্য তাঁকে ধরা হয়েছিল ৷ পুরো বিষয়টি তদন্তেই বেরিয়ে আসবে ৷