মালদা, 4 ফেব্রুযারি : শিক্ষাঙ্গনে বিভিন্ন কারণে আন্দোলন অনেকেই দেখেছে৷ কিন্তু ঝাড়ু উঁচিয়ে আন্দোলন! দেশের কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এমন আন্দোলন দেখা গিয়েছে কি না তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে৷ সেই আন্দোলনের সাক্ষী থাকল গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়৷ তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার শিক্ষাকর্মীদের ঝাড়ু হাতে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল ও বিক্ষোভ প্রদর্শন করতে দেখা গেল ৷ নিজেদের দাবিতে ডেপুটি কন্ট্রোলারকে ঘেরাও করেন বিক্ষুব্ধরা ৷ সেখানেও ঝাড়ু হাতে গেছিলেন তাঁরা ৷ স্থানীয় সূত্রে খবর, সন্ধে নাগাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে দেন সাফাইকর্মীরা ৷ ডেপুটি কন্ট্রোলার বিনয় হালদারকে ঘেরাও করেন ৷ শেষ পাওয়া খবর, গতরাত ন'টা পর্যন্ত ঘেরাও মুক্ত হননি বিনয়বাবু ৷ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ে আসার কথা ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের ৷ তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে এলে শিক্ষাকর্মীদের আন্দোলনের ঝাঁঝ আরও বাড়বে বলে নিশ্চিত সবাই ৷
প্রসঙ্গত 10 দফা দাবিতে গত নভেম্বর থেকে টানা একমাস বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মবিরতি পালন করেন 121 জন শিক্ষাকর্মী ৷ সেই আন্দোলনে সামিল হয়েছিলেন 29 জন সাফাইকর্মীও৷ তাঁদের টানা আন্দোলনে কার্যত অচল হয়ে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়৷ স্বাভাবিক কাজকর্ম দূরের কথা, নিয়মিত বাথরুম সাফাই না হওয়ায় পড়ুয়ারাও চরম সমস্যায় পড়েছিলেন৷ গোটা বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর যেন নরকের চেহারা নিয়েছিল৷ এক মাস পর বিশ্ববিদ্যালয়ের EC বৈঠকে শিক্ষাকর্মীদের দাবিদাওয়া নিয়ে আলোচনার পর ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার জানান, শিক্ষাকর্মীদের দাবিগুলির প্রায় প্রতিটিই মেনে নেওয়া হয়েছে৷ আন্দোলনকারীদের দাবি, এগজ়িকিউটিভ কাউন্সিল তাঁদের রোপা 2019 অনুযায়ী বেতন প্রদানের কথা জানিয়েছে বলে তাঁদের আশ্বাস দেন রেজিস্ট্রার৷ কিন্তু পরে তিনি বেসুরো গান ৷ সেই সময় তিনি জানিয়েছিলেন, সাফাইকর্মীদের গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা হবে৷ পরবর্তীতে জানান, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওই কর্মীদের গ্রুপ ডি কর্মী হিসাবে বিবেচনা করা যাবে না ৷ রেজিস্ট্রারের এমন দু’মুখো নীতি নিয়ে তাঁরা ফের আন্দোলনের চিন্তাভাবনা শুরু করেছেন ৷
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষাকর্মীরা ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি সম্বলিত ব্যানার হাতে নিয়ে মিছিলে ঝাড়ু হাতে অংশ নেন সাফাইকর্মীরাও৷ তৃণমূল কংগ্রেস প্রভাবিত সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষাবন্ধু সমিতির ব্যানারে সেই মিছিল সংগঠিত হয় ৷ মিছিল থেকে ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে একাধিক স্লোগান ওঠে৷ সংগঠনের গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিট সভাপতি শুভায়ু দাস বলেন, “গত 24 জানুয়ারি কলকাতায় EC বৈঠক হয়েছে৷ সেদিন থেকে রেজিস্ট্রার আর এখানে আসেননি ৷ 10 দফা দাবিতে এর আগে আমরা এক মাস ধরে আন্দোলন করেছিলাম ৷ এক মাস পর তিনি মাইকে ঘোষণা করেছিলেন, ইসি আমাদের 10 দফা দাবিই মেনে নিয়েছে৷ গত EC বৈঠকের রেজুলেশন কপিও রেজিস্ট্রার এখনও আমাদের দেননি ৷ উলটে তিনি কলকাতায় বসে আমাদের একতা ভাঙার চেষ্টা করছেন ৷ তিনি আধিকারিকদের বলেছেন, সাফাইকর্মীরা নাকি গ্রুপ ডি কর্মীর মর্যাদা পেতে পারে না ৷ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এহেন মনোভাবের বিরুদ্ধেই আজ সাফাইকর্মীরা ঝাড়ু হাতে আন্দোলনে নেমেছেন ৷"
মিছিলে অংশগ্রহণকারী সাফাইকর্মী রাজু মোমিন বলেন, “এখন আমাদের বলা হচ্ছে, আমরা নাকি গ্রুপ ডি কর্মীর তকমা পাব না৷ আমাদের হাতে প্রমাণ রয়েছে, সরকারি অনেক দপ্তরেই সাফাইকর্মীদের গ্রুপ ডি কর্মীর মর্যাদা দেওয়া হয়েছে৷ আমরা সেই মর্যাদা চাই৷"
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মিছিল শেষে আন্দোলনকারীরা ঝাড়ু হাতে ডেপুটি কন্ট্রোলার বিনয় হালদারের ঘরেও ঢুকে পড়েন৷ তাঁর উদ্দেশ্যে একাধিক প্রশ্ন ছুড়ে দেওয়া হয় ৷ যদিও বিনয়বাবু সেই সময় নিশ্চুপই ছিলেন৷ এরপর সন্ধে নাগাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেইন গেটে তালা ঝুলিয়ে ডেপুটি কন্ট্রোলারকে ঘেরাও করে শুরু হয় আন্দোলন । অবস্থানকারীরা জানান, আজ রেজিস্ট্রারকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না ৷
সারা বাংলা তৃণমূল শিক্ষা বন্ধু সমিতির গৌড়বঙ্গ শাখার সম্পাদক শম্পা মিত্র জানান, “আমাদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে । সেই কারণে আমরা ডেপুটি কন্ট্রোলারকে ঘেরাও করে রেখেছি। আমাদের নানারকম প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল । আমাদের সমস্তরকম পাওনা নাকচ করে দেওয়ার চেষ্টা করে আমাদের অপমানিত করা হচ্ছে । ডেপুটি কন্ট্রোলার আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আমাদের দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হয়েছে । অথচ তিনি EC বৈঠকে মুখ খোলেননি । এরই প্রতিবাদে ডেপুটি কন্ট্রোলারকে ঘেরাও করে রেখেছি । আগামীকাল রেজিস্ট্রার যেন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ না করতে পারেন সেই কারণে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গেটে তালা মেরেছি। আমাদের সমস্ত দাবিদাওয়া নিয়ে যে সমস্যা তৈরি হয়েছে তার সমাধান করেই উনাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশ করতে হবে ।”
ডেপুটি কন্ট্রোলার বিনয় হালদার জানান, “শিক্ষাকর্মীরা ব্যক্তিগত স্বার্থের কারণে এই অবস্থান করছেন । আমি শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে নানান আলোচনা করেছিলাম । শিক্ষাকর্মীরা আমাকে জানিয়েছিল, তাঁদের রোপা দেওয়া হয়েছে । কিন্তু আমরা উচ্চপদস্থ নই । EC বৈঠকে যে সিদ্ধান্ত হবে সেটাই সকলকে মানতে হবে । আমি EC মেম্বার না হলেও সেদিন আমাকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল । EC বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল তাঁদের দাবি মানা সম্ভব নয় ।”
তবে ঘেরাও থাকার কথা মানতে নারাজ ডেপুটি কন্ট্রোলার । তাঁর দাবি, শিক্ষাকর্মীরা তাঁকে তাঁদের সঙ্গে থাকতে অনুরোধ করেছেন, তাই তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গে আছেন ।