মালদা, 7 মে : গতবারের স্মৃতি এখনও টাটকা ৷ দেশজুড়ে লকডাউনে সারা বছরের পেটের ভাত কেড়ে নিয়েছিল পুরাতন মালদার যাত্রাডাঙা, মাধাইপুর, রাজবর, ভাটরা সহ একাধিক গ্রামের চাষিদের ৷ শ্রমিকের অভাবে পাকা ধান জমিতেই পড়ে থেকেছিল ৷ ঘরে তুলতে পারেননি কেউ ৷ এবারও এলাকার কয়েক হাজার একর জমির ধান পেকে গিয়েছে ৷ মাঠ থেকে ধান ঘরে তোলার সময়ও হয়ে গিয়েছে ৷ কিন্তু করোনার দ্বিতীয় ঢেউ রুখতে আংশিক লকডাউনের পথে হেঁটেছে রাজ্য সরকার ৷ বেশ কিছু ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ করা হয়েছে ৷ যার জেরে অজানা আশঙ্কায় রাতের ঘুম উড়ে গিয়েছে চাষিদের ৷ তাঁদের অনুমান, যে হারে করোনা বাড়ছে, লোকজন মারা যাচ্ছেন, তাতে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা ৷ এখনও ভিনরাজ্য থেকে শ্রমিকের দল ধান কাটতে এলাকায় আসেননি ৷ এই পরিস্থিতিতে ফের সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা হলে এবারও ধান জমিতেই নষ্ট হবে ৷ তাই সরকারের কাছে এখনই লকডাউন ঘোষণা না করার আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা ৷
গত বছর মার্চ মাস থেকে দেশে করোনার প্রকোপ বাড়তে শুরু করে ৷ সেই পরিস্থিতিতে গোটা দেশে সম্পূর্ণ লকডাউন ঘোষণা করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ৷ থমকে যায় গোটা দেশ ৷ অর্থনীতিতে ধস নামে ৷ প্রভাব পড়ে কৃষিক্ষেত্রেও ৷ মালদার কৃষকরাও লকডাউনের প্রকোপ থেকে বাঁচতে পারেননি ৷ পুরাতন মালদায় বেশ কয়েকটি বড় বিল রয়েছে ৷ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল যাত্রাডাঙা, মাধাইপুর, ভাটরা, রাজবর বিল ৷ এছাড়াও ছোটখাটো আরও কয়েকটি বিল রয়েছে ৷ শীতের সময় বিলের জল শুকিয়ে গেলে সেই উর্বর মাটিতে ধান চাষ করেন স্থানীয় চাষিরা ৷ ধানের ফলনও খুব ভাল ৷ কিন্তু, লকডাউনে শ্রমিকের অভাবে গতবার জমির ধান ঘরে তুলতে পারেননি অধিকাংশ কৃষক ৷ এবারও ধান পেকে গিয়েছে ৷ তবে এখনও দেখা নেই বিহার ও ঝাড়খণ্ডের শ্রমিকদের ৷ কবে তাঁরা এলাকায় আসবেন, সেটাও কেউ জানে না ৷ স্থানীয়দের অনুমান, গতবার লকডাউনে যে অল্প সংখ্যক শ্রমিক ভিনরাজ্য থেকে এখানে এসেছিলেন, তাঁরা কাজ শেষ করে সময়মতো ঘরে ফিরতে পারেননি ৷ যানবাহনের অভাবে দীর্ঘদিন তাঁদের এখানেই থাকতে হয়েছিল ৷ সম্ভবত, সেকথা মাথায় রেখেই তাঁরা আংশিক লকডাউনে এই এলাকায় আসতে চাইছেন না ৷ তবে কারণ যাই হোক না কেন, শ্রমিকের অভাবে মাথায় হাত পড়েছে স্থানীয় ধান চাষিদের ৷
আরও পড়ুন, করোনাকে কিস্তিমাত করতে এবার টেরাকোটার আদলে দাবা
এলাকার বোরো ধানচাষি ওয়াহিদুর শেখ বলেন, “এবারও বিলে ধান খুব ভালো হয়েছে ৷ কিন্তু শ্রমিকদের দেখা নেই ৷ ধান কাটা ও ঝাড়ার খুব সমস্যা ৷ এরই মধ্যে লকডাউনের কথা শোনা যাচ্ছে ৷ এতে আমরা খুব চিন্তিত ৷ গত বছর লকডাউনের ধাক্কায় এখনও ঋণ শোধ করতে পারিনি ৷ এবারও যদি লকডাউনে ধান ঘরে তুলতে না পারি, তাহলে আমরা মারা পড়ব ৷ সরকারের কাছে আমাদের আর্জি, ধানচাষিদের কথা বিবেচনা করে লকডাউন কিছুদিন পিছিয়ে দেওয়া হোক ৷”
একই বক্তব্য আরেক ধানচাষি আসগর আলির ৷ তিনি বলেন, “শ্রমিকের অভাবে মাঠ থেকে ধান ঘরে তুলতে পারছি না ৷ গতবার ধান ঘরে তুলতে পারিনি ৷ এবারও সেই পরিস্থিতি হলে আমাদের বাঁচার কোনও জায়গা থাকবে না ৷”