ETV Bharat / state

Potato Farmers in Crisis: আলুর দাম তলানিতে, মাথায় হাত চাষিদের

আলুর দর 500 টাকারও নীচে ৷ এখনও সহায়ক মূল্যে কেনা শুরু করেনি সরকার ৷ ভোটবাজারে নতুন চিন্তা শাসকদলের ৷

potato cultivation
আলুর দাম কম
author img

By

Published : Apr 8, 2023, 10:17 PM IST

আলুর দাম তলানিতে

মালদা, 8 এপ্রিল: মরশুম গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু দাম বাড়া তো দূরের কথা, প্রতিদিনই একটু একটু করে আলুর দাম কমছে ৷ 1300 টাকা কুইন্টালের আলু এখন নেমে এসেছে 500 টাকারও নীচে ৷ এই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়ে গিয়েছেন কৃষকরা ৷ মহাজনের ঋণ তাঁরা কীভাবে শোধ করবেন, ভেবেই আকুল ৷ রাজ্য সরকারও এখনও পর্যন্ত সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেনি ৷ পঞ্চায়েতের আগে বিষয়টি যে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তাই এখন রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রকল্পের কথাও জেলা তৃণমূলের নেতাদের মুখে ৷

মালদা জেলায় পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকেই আলুর চাষ সর্বাধিক ৷ জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি মরশুমে জেলায় 10 হাজার 116 হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে ৷ অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এই মরশুমে আলুর উৎপাদনও গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এবার হেক্টর প্রতি প্রায় 30 কুইন্টাল আলুর ফলন ৷ ইতিমধ্যে 95 শতাংশ আলু জমি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৷ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মাঠ থেকে সম্পূর্ণ আলু তোলা হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তবে শুধু মালদা নয়, এবার পশ্চিমবঙ্গ তথা আলু উৎপাদক রাজ্যগুলিতেও ভালো ফলন হয়েছে ৷ ফলে এই মুহূর্তে আলুর তেমন চাহিদা নেই ৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশেও সেভাবে আলু রফতানি হচ্ছে না ৷ চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ার জন্যই এবার আলুর দাম তলানিতে ৷

Farmers facing tough time
আলুর দাম কমতে থাকায় চিন্তার ভাঁজ আলু চাষিদের কপালে

গাজোলের আলু চাষি প্রদীপ সরকার বলছেন, "বাজারে আলুর দাম না থাকার জন্যই আমাদের সমস্যা ৷ গত বছর প্রতি কুইন্টাল আলু 1300 টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ৷ এবার সেই দর 400-500 টাকা ৷ সরকারও আলু কিনছে না ৷ আমরা ঋণ নিয়ে জমি চাষ করি ৷ এবারও প্রচুর ঋণ করেছি ৷ আলুচাষে বিঘা প্রতি 25-30 হাজার টাকা খরচ হয় ৷ কিন্তু এই বাজারে এক বিঘার আলু বিক্রি করে 20-25 হাজার টাকা ঘরে আসছে ৷ প্রচুর ক্ষতি ৷ প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে ৷ হিমঘরে রাখারও খরচ রয়েছে ৷ সবার পক্ষে সেই খরচ করা সম্ভব নয় ৷ আমরা চাইছি, আলুর দাম বাড়ুক ৷ একইসঙ্গে সরকার সহায়ক মূল্যে আমাদের কাছ থেকে আলু কিনুক ৷"

জেলা কৃষি অধিকর্তা দেবনাথ মজুমদার জানাচ্ছেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হিমঘরগুলিতে 20 শতাংশ জায়গা রাখা ছিল ৷ জেলাশাসক সেটা বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করে দিয়েছিলেন ৷ প্রথমে আসলে দেওয়ার ভিত্তিতে তারা নোটিশ জারি করেছিলেন ৷ 20 মার্চের মধ্যে যত আবেদন এসেছিল, সেই আবেদনপত্রগুলি কৃষি বিপণন দফতরে পাঠানো হয়েছে ৷ তারা আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে জেলাশাসকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল ৷ সেই তালিকা সমস্ত হিমঘরেও পাঠানো হয়েছে ৷ আসলে এবার আলুর উৎপাদন যথেষ্ট ভালো ৷ সেকারণেই সম্ভবত প্রথম অবস্থায় বাজারে তেমন দাম নেই ৷ রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ তবে চাষিরা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ না নিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে ধার করে ভুল করছেন ৷ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পেও কেসিসি কার্ডের জন্য চাষিরা আবেদন জানাতে পারেন বলে তিনি জানান ৷

Farmers facing tough time
মরশুম শেষ হওয়ার আগে চরম সংকটে কৃষকরা

আলুর এই দর যে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু ৷ তিনি বলেন, "মহাজনি ঋণ না নেওয়ার জন্যই রাজ্য সরকার কৃষকবন্ধু প্রকল্প করেছে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার কিষান সম্মাননিধিও দিচ্ছে ৷ এতে আমাদের আপত্তি নেই ৷ আসলে আলুর দাম কমের পিছনে সেই চাহিদা-জোগান সম্পর্ক ৷ সরকার হিমঘরগুলিতে চাষিদের আলু রাখার চেষ্টা করছে ৷ আগামীতে বিকল্প চাষের বিষয়েও রাজ্য সরকার ও কৃষি দফতর ভাবছে ৷ বিরোধীরা সমালোচনা না করে বরং কৃষকদের জন্য নতুন কিছু ভাবুক ৷"

আরও পড়ুন: বাজারে দাম নেই, জায়গা নেই হিমঘরেও; সংকটে উত্তর দিনাজপুরের আলুচাষীরা

আলুর দাম তলানিতে

মালদা, 8 এপ্রিল: মরশুম গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু দাম বাড়া তো দূরের কথা, প্রতিদিনই একটু একটু করে আলুর দাম কমছে ৷ 1300 টাকা কুইন্টালের আলু এখন নেমে এসেছে 500 টাকারও নীচে ৷ এই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়ে গিয়েছেন কৃষকরা ৷ মহাজনের ঋণ তাঁরা কীভাবে শোধ করবেন, ভেবেই আকুল ৷ রাজ্য সরকারও এখনও পর্যন্ত সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেনি ৷ পঞ্চায়েতের আগে বিষয়টি যে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তাই এখন রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রকল্পের কথাও জেলা তৃণমূলের নেতাদের মুখে ৷

মালদা জেলায় পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকেই আলুর চাষ সর্বাধিক ৷ জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি মরশুমে জেলায় 10 হাজার 116 হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে ৷ অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এই মরশুমে আলুর উৎপাদনও গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এবার হেক্টর প্রতি প্রায় 30 কুইন্টাল আলুর ফলন ৷ ইতিমধ্যে 95 শতাংশ আলু জমি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৷ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মাঠ থেকে সম্পূর্ণ আলু তোলা হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তবে শুধু মালদা নয়, এবার পশ্চিমবঙ্গ তথা আলু উৎপাদক রাজ্যগুলিতেও ভালো ফলন হয়েছে ৷ ফলে এই মুহূর্তে আলুর তেমন চাহিদা নেই ৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশেও সেভাবে আলু রফতানি হচ্ছে না ৷ চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ার জন্যই এবার আলুর দাম তলানিতে ৷

Farmers facing tough time
আলুর দাম কমতে থাকায় চিন্তার ভাঁজ আলু চাষিদের কপালে

গাজোলের আলু চাষি প্রদীপ সরকার বলছেন, "বাজারে আলুর দাম না থাকার জন্যই আমাদের সমস্যা ৷ গত বছর প্রতি কুইন্টাল আলু 1300 টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ৷ এবার সেই দর 400-500 টাকা ৷ সরকারও আলু কিনছে না ৷ আমরা ঋণ নিয়ে জমি চাষ করি ৷ এবারও প্রচুর ঋণ করেছি ৷ আলুচাষে বিঘা প্রতি 25-30 হাজার টাকা খরচ হয় ৷ কিন্তু এই বাজারে এক বিঘার আলু বিক্রি করে 20-25 হাজার টাকা ঘরে আসছে ৷ প্রচুর ক্ষতি ৷ প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে ৷ হিমঘরে রাখারও খরচ রয়েছে ৷ সবার পক্ষে সেই খরচ করা সম্ভব নয় ৷ আমরা চাইছি, আলুর দাম বাড়ুক ৷ একইসঙ্গে সরকার সহায়ক মূল্যে আমাদের কাছ থেকে আলু কিনুক ৷"

জেলা কৃষি অধিকর্তা দেবনাথ মজুমদার জানাচ্ছেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হিমঘরগুলিতে 20 শতাংশ জায়গা রাখা ছিল ৷ জেলাশাসক সেটা বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করে দিয়েছিলেন ৷ প্রথমে আসলে দেওয়ার ভিত্তিতে তারা নোটিশ জারি করেছিলেন ৷ 20 মার্চের মধ্যে যত আবেদন এসেছিল, সেই আবেদনপত্রগুলি কৃষি বিপণন দফতরে পাঠানো হয়েছে ৷ তারা আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে জেলাশাসকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল ৷ সেই তালিকা সমস্ত হিমঘরেও পাঠানো হয়েছে ৷ আসলে এবার আলুর উৎপাদন যথেষ্ট ভালো ৷ সেকারণেই সম্ভবত প্রথম অবস্থায় বাজারে তেমন দাম নেই ৷ রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ তবে চাষিরা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ না নিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে ধার করে ভুল করছেন ৷ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পেও কেসিসি কার্ডের জন্য চাষিরা আবেদন জানাতে পারেন বলে তিনি জানান ৷

Farmers facing tough time
মরশুম শেষ হওয়ার আগে চরম সংকটে কৃষকরা

আলুর এই দর যে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু ৷ তিনি বলেন, "মহাজনি ঋণ না নেওয়ার জন্যই রাজ্য সরকার কৃষকবন্ধু প্রকল্প করেছে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার কিষান সম্মাননিধিও দিচ্ছে ৷ এতে আমাদের আপত্তি নেই ৷ আসলে আলুর দাম কমের পিছনে সেই চাহিদা-জোগান সম্পর্ক ৷ সরকার হিমঘরগুলিতে চাষিদের আলু রাখার চেষ্টা করছে ৷ আগামীতে বিকল্প চাষের বিষয়েও রাজ্য সরকার ও কৃষি দফতর ভাবছে ৷ বিরোধীরা সমালোচনা না করে বরং কৃষকদের জন্য নতুন কিছু ভাবুক ৷"

আরও পড়ুন: বাজারে দাম নেই, জায়গা নেই হিমঘরেও; সংকটে উত্তর দিনাজপুরের আলুচাষীরা

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.