মালদা, 8 এপ্রিল: মরশুম গড়িয়ে যাচ্ছে ৷ কিন্তু দাম বাড়া তো দূরের কথা, প্রতিদিনই একটু একটু করে আলুর দাম কমছে ৷ 1300 টাকা কুইন্টালের আলু এখন নেমে এসেছে 500 টাকারও নীচে ৷ এই পরিস্থিতিতে সংকটে পড়ে গিয়েছেন কৃষকরা ৷ মহাজনের ঋণ তাঁরা কীভাবে শোধ করবেন, ভেবেই আকুল ৷ রাজ্য সরকারও এখনও পর্যন্ত সরকারি সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কথা ঘোষণা করেনি ৷ পঞ্চায়েতের আগে বিষয়টি যে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ বুঝেছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তাই এখন রাজ্যের পাশাপাশি কেন্দ্রের প্রকল্পের কথাও জেলা তৃণমূলের নেতাদের মুখে ৷
মালদা জেলায় পুরাতন মালদা ও গাজোল ব্লকেই আলুর চাষ সর্বাধিক ৷ জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা যাচ্ছে, চলতি মরশুমে জেলায় 10 হাজার 116 হেক্টর জমিতে আলুর চাষ হয়েছে ৷ অনুকূল আবহাওয়া থাকায় এই মরশুমে আলুর উৎপাদনও গত বছরের তুলনায় পাঁচ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ এবার হেক্টর প্রতি প্রায় 30 কুইন্টাল আলুর ফলন ৷ ইতিমধ্যে 95 শতাংশ আলু জমি থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে ৷ আগামী সপ্তাহের মধ্যেই মাঠ থেকে সম্পূর্ণ আলু তোলা হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷ তবে শুধু মালদা নয়, এবার পশ্চিমবঙ্গ তথা আলু উৎপাদক রাজ্যগুলিতেও ভালো ফলন হয়েছে ৷ ফলে এই মুহূর্তে আলুর তেমন চাহিদা নেই ৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশেও সেভাবে আলু রফতানি হচ্ছে না ৷ চাহিদার তুলনায় জোগান বেশি হওয়ার জন্যই এবার আলুর দাম তলানিতে ৷
গাজোলের আলু চাষি প্রদীপ সরকার বলছেন, "বাজারে আলুর দাম না থাকার জন্যই আমাদের সমস্যা ৷ গত বছর প্রতি কুইন্টাল আলু 1300 টাকা দরে বিক্রি হয়েছে ৷ এবার সেই দর 400-500 টাকা ৷ সরকারও আলু কিনছে না ৷ আমরা ঋণ নিয়ে জমি চাষ করি ৷ এবারও প্রচুর ঋণ করেছি ৷ আলুচাষে বিঘা প্রতি 25-30 হাজার টাকা খরচ হয় ৷ কিন্তু এই বাজারে এক বিঘার আলু বিক্রি করে 20-25 হাজার টাকা ঘরে আসছে ৷ প্রচুর ক্ষতি ৷ প্রতিদিনই আলুর দাম কমছে ৷ হিমঘরে রাখারও খরচ রয়েছে ৷ সবার পক্ষে সেই খরচ করা সম্ভব নয় ৷ আমরা চাইছি, আলুর দাম বাড়ুক ৷ একইসঙ্গে সরকার সহায়ক মূল্যে আমাদের কাছ থেকে আলু কিনুক ৷"
জেলা কৃষি অধিকর্তা দেবনাথ মজুমদার জানাচ্ছেন, ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক কৃষকদের জন্য হিমঘরগুলিতে 20 শতাংশ জায়গা রাখা ছিল ৷ জেলাশাসক সেটা বিভিন্ন ব্লকে ভাগ করে দিয়েছিলেন ৷ প্রথমে আসলে দেওয়ার ভিত্তিতে তারা নোটিশ জারি করেছিলেন ৷ 20 মার্চের মধ্যে যত আবেদন এসেছিল, সেই আবেদনপত্রগুলি কৃষি বিপণন দফতরে পাঠানো হয়েছে ৷ তারা আবেদনপত্র খতিয়ে দেখে জেলাশাসকের অনুমোদনের জন্য পাঠিয়েছিল ৷ সেই তালিকা সমস্ত হিমঘরেও পাঠানো হয়েছে ৷ আসলে এবার আলুর উৎপাদন যথেষ্ট ভালো ৷ সেকারণেই সম্ভবত প্রথম অবস্থায় বাজারে তেমন দাম নেই ৷ রাজ্য সরকার সহায়ক মূল্যে আলু কেনার চেষ্টা চালাচ্ছে ৷ তবে চাষিরা কিষান ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে ব্যাংক ঋণ না নিয়ে মহাজনদের কাছ থেকে ধার করে ভুল করছেন ৷ দুয়ারে সরকার ক্যাম্পেও কেসিসি কার্ডের জন্য চাষিরা আবেদন জানাতে পারেন বলে তিনি জানান ৷
আলুর এই দর যে পঞ্চায়েত ভোটের মুখে বিরোধীদের হাতে অস্ত্র তুলে দিতে পারে, তা বিলক্ষণ জানেন জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র শুভময় বসু ৷ তিনি বলেন, "মহাজনি ঋণ না নেওয়ার জন্যই রাজ্য সরকার কৃষকবন্ধু প্রকল্প করেছে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার কিষান সম্মাননিধিও দিচ্ছে ৷ এতে আমাদের আপত্তি নেই ৷ আসলে আলুর দাম কমের পিছনে সেই চাহিদা-জোগান সম্পর্ক ৷ সরকার হিমঘরগুলিতে চাষিদের আলু রাখার চেষ্টা করছে ৷ আগামীতে বিকল্প চাষের বিষয়েও রাজ্য সরকার ও কৃষি দফতর ভাবছে ৷ বিরোধীরা সমালোচনা না করে বরং কৃষকদের জন্য নতুন কিছু ভাবুক ৷"
আরও পড়ুন: বাজারে দাম নেই, জায়গা নেই হিমঘরেও; সংকটে উত্তর দিনাজপুরের আলুচাষীরা