মালদা , 7 মে : প্রখ্যাত সাহিত্যিক শিবরাম চক্রবর্তীর ছেলেবেলা কেটেছিল মালদা জেলায় ৷ চাঁচলের পাহাড়পুরে ছিল তাঁদের বাড়ি ৷ এখনও তাঁর উত্তরসূরিরা সেখানেই থাকেন ৷ সেই উত্তরসূরিদের একজন পরিবার নিয়ে নিদারুণ কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ৷ লকডাউনে কোনওদিন অর্ধাহারে আবার কোনওদিন অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের ৷ সেই খবর পেয়েই আজ ওই বাড়িতে যান চাঁচলের মহকুমাশাসক, BDO সহ প্রশাসনিক কর্তারা ৷ তাঁরা ওই পরিবারের হাতে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন ৷ লকডাউন মিটলে তাঁদের সরকারি সমস্ত সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন মহকুমাশাসক ৷
চাঁচলের পাহাড়পুরে শিবরাম চক্রবর্তীর দাদার বাড়িতে দুই ছেলে নিয়ে থাকেন মৌসুমি চক্রবর্তী ৷ তাঁর শ্বশুরমশাই শিবসন্তোষ চক্রবর্তী দীর্ঘদিন আগে টানা 25 বছর চাঁচল গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান ছিলেন ৷ স্বামী শিবদাস চক্রবর্তী পুলিশে কাজ করতেন ৷ 2016 সালে তিনি মারা যান ৷ মৌসুমিদেবীর বড় ছেলে শিবজিৎ স্থানীয় সিদ্ধেশ্বরী ইনস্টিটিউশনের দশম শ্রেণির ছাত্র ৷ ছোটো ছেলে শিবসাগর ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে ৷ বিশাল বাড়িটা এখনও তাঁর পুরানো ঐতিহ্যের জানান দেয় ৷ তবে দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এখন ভেঙে পড়ছে সেই বাড়ি ৷ সময়মতো বিল পরিশোধ না করায় বিদ্যুতের সংযোগ ছিন্ন হয়েছে বেশ কয়েকদিন আগে ৷ শিবদাসবাবু কর্মরত অবস্থায় মারা গেলেও মৌসুমিদেবী চাকরি পাননি ৷ পেনশনও এখনও অধরা তাঁর ৷ এলাকাতেই তাঁর বাবার বাড়ি ৷ বাবা তাঁকে কিছু সাহায্য করেন ৷ আর ঘরে বাসা বাঁধা পায়রা বিক্রি করে সংসার চলে তাঁর ৷ এরই মধ্যে লকডাউন তাঁর সংসারের আলো যেন আরও কিছুটা কেড়ে নিয়েছে ৷ অবসরপ্রাপ্ত বাবা এখন আর সেভাবে সাহায্য করতে পারছেন না ৷ এখন পায়রাও বিক্রি করা যাচ্ছে না ৷ ফলে কোনওদিন অর্ধাহারে আবার কোনওদিন অনাহারে দিন কাটছে তাঁদের ৷
মৌসুমিদেবীর এই অসহায় অবস্থার কথা কোনওভাবে জানতে পারেন চাঁচলের মহকুমাশাসক সব্যসাচী রায় ৷ আজ তিনি মৌসুমিদেবীর বাড়িতে যান ৷ সঙ্গে ছিলেন চাঁচল 1-এর BDO সমীরণ ভট্টাচার্য ও চাঁচল 2-এর BDO অমিত সাউ ৷ তাঁরা দীর্ঘক্ষণ মৌসুমিদেবীর সঙ্গে কথা বলেন ৷ ঘুরে দেখেন গোটা বাড়ি ৷ কেন তিনি এখনও পেনশন পাচ্ছেন না তার খোঁজখবর নেন ৷ মৌসুমিদেবী তাঁদের জানান , স্বামীর মৃত্যুর পর সরকারি অনুদানের 40 হাজার টাকাও তিনি পাননি ৷ দুই ছেলের রেশন কার্ড হয়নি ৷ এখনও কোনও সরকারি ভাতার তালিকায় তাঁর নাম ওঠেনি ৷ পারিবারিক ঐতিহ্যের কথা ভেবে তিনি ভিক্ষে করতে পারেন না ৷ এই পরিস্থিতিতে সাহায্যের জন্য সরকারি আধিকারিকদের কাছে আর্জি জানান তিনি ৷
মহকুমাশাসক বলেন , “আজ এই ঐতিহ্যবাহী পরিবারের পরিস্থিতি দেখে সত্যিই খুব খারাপ লাগছে ৷ আজ BDO-র মাধ্যমে পরিবারটিকে কিছু খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হয়েছে ৷ পরিবারে মাত্র একজনের রেশন কার্ড রয়েছে ৷ দুই ছেলের কার্ড হয়নি ৷ ফুড সাপ্লাই ইন্সপেকটরের সঙ্গে কথা বলে দুই ছেলের জন্যও চালের বন্দোবস্ত করছি ৷ দুই ছেলের স্কুলে টিউশন ফি যাতে মকুব করা হয় তার চেষ্টা করছি ৷ ওনার স্বামী পুলিশে কাজ করতেন শুনলাম ৷ লকডাউনের পর তাঁকে BDO-র সঙ্গে দেখা করতে বলা হয়েছে ৷ সরকারি নিয়ম মেনে যদি মৌসুমিদেবীকে ভাতা দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায় , সেটাও আমরা দেখব ৷”
মৌসুমিদেবী বলেন , “শিবরাম চক্রবর্তী আমার দাদাশ্বশুর ৷ বর্তমানে আমার পরিস্থিতি খুব খারাপ ৷ আমার স্বামী মারা গিয়েছেন ৷ দুই ছেলেকে নিয়ে আমার সংসার ৷ আর্থিক সামর্থ্য বলতে কিছুই নেই ৷ দিন এনে দিন খাওয়ার মতো পরিস্থিতিও আমার নেই ৷ আমি কোনও কাজ করি না ৷ বাবার বাড়ির সাহায্যেই দিন চলছে কোনওরকমে ৷ ঘরবাড়ি ভেঙে পড়ছে ৷ ব্যাঙ্ক ব্যালেন্স বলে কিছুই নেই ৷ এখনও আমার পেনশন হয়নি ৷ কোনও ভাতার তালিকায় আমার নাম এখনও ওঠেনি ৷ চিন্তায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়ছি ৷ দুই ছেলেকে নিয়ে কীভাবে চলব , বুঝতে পারছি না ৷ তার মধ্যে বড় ছেলে এবার মাধ্যমিক পরীক্ষা দেবে ৷ দুই ছেলেকে ঠিকমতো পড়াশোনা করাতে পারছি না ৷ ঘরে বিদ্যুৎ নেই ৷ খাবারের কোনও ব্যবস্থা নেই ৷ লকডাউনে সমস্যা আরও বেড়েছে ৷”