ETV Bharat / state

সবার আড়ালেই পূজিত হন রহস্যে মোড়া "ঝাপড়িকালী" - কেউ বলে দুশো, কেউ বলে তিনশো বছরের পুরোনো। মাখন ডাকাত প্রবর্তিত কালীপুজোয় এখনও ওঠে না মূর্তি, হয় না হোম।

কথিত আছে, বড় কোনও ডাকাতি করার আগে মাখন দলবল নিয়ে কালীপুজো করত । ডাকাতি সেরে ফিরে আসার পর ফের তারা সবাই বসত মায়ের আরাধনায় । পুরোটাই হত লোকচক্ষুর অন্তরালে ।

famous traditional kalipuja without any idol in old malda
পুরাতন মালদায় মূর্তি ছাড়াই জাগ্রত কালীপুজো ' ঝাপড়িকালী '
author img

By

Published : Nov 11, 2020, 8:54 AM IST

মালদা, 10 নভেম্বর : কেউ বলে 200, কেউ বা 300 । সঠিক সময়টা কেউই জানে না । সবাই জানে, পুরাতন মালদার সাহাপুরে আমবাগানের মধ্যে রয়েছেন ঝাপড়িকালী । দেবী নাকি খুবই জাগ্রত । আগে নরবলি হত । এখন বলি হয় কি না কেউ জানে না । তবে সেবাইতরা বলছেন, এখনও বলি হয় । নিভৃতে, লোকচক্ষুর অন্তরালে । ঠিক যেমনটা হত মাখন ডাকাতের আমলে ৷ মাখন ডাকাতের দলে ছিল বিভিন্ন ধর্মের ডাকাত ৷ সেই ডাকাতরা নীরবে মায়ের পুজো করত ৷ এখনও সেভাবেই মায়ের পুজো হয় । সর্বধর্ম সমন্বয়ের পুজো ৷ এখানে দেবীর কোনও মূর্তি নেই । বছরের পর বছর পুজো চললেও এখনও গড়ে ওঠেনি কোনও মন্দির । পুজো ঘিরে এই অন্তরালই ঝাপড়িকালীকে ঘিরে রেখেছে রহস্যের জালে ।

সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেতু মোড় এলাকা পেরিয়ে বুলবুলচণ্ডীর দিকে যেতে রাস্তার দু'পাশে আমবাগান । বাম দিকে আমবাগানের ভিতর ঢুকে খানিকটা যেতেই দেখা যাবে প্রাচীন একটি শিমূল গাছের নীচে বাঁধানো বেদি । বেদিতে রয়েছে কালীর থান । বেদি থেকে মাত্র দেড়'শ মিটার দূরে বয়ে যাচ্ছে মহানন্দা । জেলার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যাচ্ছে, কোনও এক সময় এই এলাকায় রাজত্ব চলত মাখন ডাকাতের । তখন এখানে কোনও আমবাগান কিংবা জনবসতি ছিল না । গোটা এলাকা ছিল জঙ্গলে মোড়া । রাত হলে এলাকার দখল নিত হিংস্র শ্বাপদের দল । মাখনের দলে শতাধিক ডাকাত ছিল । বিভিন্ন ধর্মের, জাতের । এলাকা শুধু নয়, এলাকার বাইরেও তারা দলবল-সহ ডাকাতি করতে যেত । কখনও জঙ্গলপথে, কখনও নদীপথে । বাংলাদেশ পর্যন্ত ছিল তাদের অবাধ গতিবিধি ।

পুরাতন মালদায় মূর্তি ছাড়াই হয় "ঝাপড়িকালী"

কথিত আছে, বড় কোনও ডাকাতি করার আগে মাখন দলবল নিয়ে কালীপুজো করত । ডাকাতি সেরে ফিরে আসার পর ফের সবাই বসত মায়ের আরাধনায় । পুরোটাই হত লোকচক্ষুর অন্তরালে । পুজোর বিষয়টি যাতে নবাবের লোকজন না জানতে পারে তার জন্য তারা কখনও মূর্তি কিংবা হোমের আয়োজন করত না । তা ছাড়া দলে থাকা মুসলমানরা মূর্তিপুজোয় বিশ্বাসীও ছিল না । সব চিন্তাভাবনা করে ডাকাত সর্দার মূর্তি ছাড়াই মায়ের আরাধনা করত । সেই রীতি এখনও চলে আসছে । কবে থেকে জানা নেই ৷ তবে বংশানুক্রমিক তাঁরা ঝাপড়িকালীর পুজো করে আসছেন ৷ এমনটাই জানালেন সাহাপুর দোলমঞ্চ পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণকমল চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "মাখন ডাকাতই এই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠাতা । ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় ও ফিরে আসার পর সে দলবল নিয়ে ঝাপড়িমায়ের আরাধনা করত । তবে প্রথম থেকেই এখানে ঘটপুজো হয় । ঝোপঝাড়ের মধ্যে থাকার জন্য এর নাম ঝাপড়িকালী । যেখানে ঝাপড়িকালীর বেদি রয়েছে, তার অদূরেই রয়েছে রাস্তা । এখন সেখান দিয়েই মালদা-বুলবুলচণ্ডী রাজ্য সড়ক তৈরি হয়েছে । এই রাস্তাও অতি প্রাচীন । সম্ভবত রাস্তার কাছে বেদির অবস্থান হওয়ায় এখানে কখনও মূর্তিপুজোর প্রচলন করেনি ডাকাতরা । একসময় এখানে বলিপ্রথা ছিল । শোনা যায়, ডাকাতরা এখানে নরবলিও দিত । এখনও বলি দেওয়া হয় । তবে সেই বলি কাউকে দেখতে দেওয়া হয় না । "

এই কালী নিয়ে এখনও যে স্থানীয় বাসিন্দারা রহস্যের গন্ধ খোঁজে, তার প্রমাণ মিলেছে এলাকাবাসীর কথায় । স্থানীয় এক বাসিন্দা কালীচরণ চৌধুরি বলছেন, " প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেদিতে মায়ের পুজো হয় । তবে কালীপুজোর দিন ঠিক কেমন পুজো হয় তা জানতে পারিনি কখনও । রাত দশটা পর্যন্ত মানুষ এখানে আসে । তারপর আর কেউ থাকে না । মা খুব জাগ্রত । মায়ের কাছে মানত করে অনেকেরই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে । তাই প্রতিবছর কালীপুজোর দিন এলাকার মানুষের সঙ্গে অনেকে মানত পূরণের পুজো দিতে আসে । এভাবেই দু'শো বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পুজো হয়ে আসছে । তবে এখানে মায়ের কোনও মূর্তি ওঠে না । কেন, তা জানি না । হয়তো এলাকার বয়স্ক মানুষজন সে কথা বলতে পারবে । "

স্থানীয় আর এক বাসিন্দা রতন হালদার বলেন, "ছোটো থেকেই এই পুজো দেখছি । এই পুজোর বয়স দু'শো, কিংবা তিনশোও হতে পারে । আমরা শুনেছি, ডাকাতরা এখানে এই পুজো করত । পরে আমবাগান তৈরির পর মানুষ এখানে যাওয়া-আসা শুরু করে । আগে এখানে গৌড়ীয় ইটের একটি বেদি ছিল । 10-12 বছর আগে তার উপর নতুন বেদি তৈরি করা হয় । আগে তো এখানে প্রচুর জঙ্গল ছিল । শিয়ালের দল দিনদুপুরে চরে বেড়াত । এখন সেই জঙ্গল নেই, শিয়ালের পালও নেই । তাই মানুষের ভয় কমেছে । কালীপুজোর সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত লোকজন এখানে আসে । প্রসাদ দিয়ে চলে যায় । এই পুজোয় বলি আমি কোনওদিন হতে দেখিনি । হয় কি না তাও জানি না । এখানে প্রতিমাও কখনও ওঠে না । কেন, সেটাও জানি না । "

মালদা, 10 নভেম্বর : কেউ বলে 200, কেউ বা 300 । সঠিক সময়টা কেউই জানে না । সবাই জানে, পুরাতন মালদার সাহাপুরে আমবাগানের মধ্যে রয়েছেন ঝাপড়িকালী । দেবী নাকি খুবই জাগ্রত । আগে নরবলি হত । এখন বলি হয় কি না কেউ জানে না । তবে সেবাইতরা বলছেন, এখনও বলি হয় । নিভৃতে, লোকচক্ষুর অন্তরালে । ঠিক যেমনটা হত মাখন ডাকাতের আমলে ৷ মাখন ডাকাতের দলে ছিল বিভিন্ন ধর্মের ডাকাত ৷ সেই ডাকাতরা নীরবে মায়ের পুজো করত ৷ এখনও সেভাবেই মায়ের পুজো হয় । সর্বধর্ম সমন্বয়ের পুজো ৷ এখানে দেবীর কোনও মূর্তি নেই । বছরের পর বছর পুজো চললেও এখনও গড়ে ওঠেনি কোনও মন্দির । পুজো ঘিরে এই অন্তরালই ঝাপড়িকালীকে ঘিরে রেখেছে রহস্যের জালে ।

সাহাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সেতু মোড় এলাকা পেরিয়ে বুলবুলচণ্ডীর দিকে যেতে রাস্তার দু'পাশে আমবাগান । বাম দিকে আমবাগানের ভিতর ঢুকে খানিকটা যেতেই দেখা যাবে প্রাচীন একটি শিমূল গাছের নীচে বাঁধানো বেদি । বেদিতে রয়েছে কালীর থান । বেদি থেকে মাত্র দেড়'শ মিটার দূরে বয়ে যাচ্ছে মহানন্দা । জেলার ইতিহাস ঘেঁটে জানা যাচ্ছে, কোনও এক সময় এই এলাকায় রাজত্ব চলত মাখন ডাকাতের । তখন এখানে কোনও আমবাগান কিংবা জনবসতি ছিল না । গোটা এলাকা ছিল জঙ্গলে মোড়া । রাত হলে এলাকার দখল নিত হিংস্র শ্বাপদের দল । মাখনের দলে শতাধিক ডাকাত ছিল । বিভিন্ন ধর্মের, জাতের । এলাকা শুধু নয়, এলাকার বাইরেও তারা দলবল-সহ ডাকাতি করতে যেত । কখনও জঙ্গলপথে, কখনও নদীপথে । বাংলাদেশ পর্যন্ত ছিল তাদের অবাধ গতিবিধি ।

পুরাতন মালদায় মূর্তি ছাড়াই হয় "ঝাপড়িকালী"

কথিত আছে, বড় কোনও ডাকাতি করার আগে মাখন দলবল নিয়ে কালীপুজো করত । ডাকাতি সেরে ফিরে আসার পর ফের সবাই বসত মায়ের আরাধনায় । পুরোটাই হত লোকচক্ষুর অন্তরালে । পুজোর বিষয়টি যাতে নবাবের লোকজন না জানতে পারে তার জন্য তারা কখনও মূর্তি কিংবা হোমের আয়োজন করত না । তা ছাড়া দলে থাকা মুসলমানরা মূর্তিপুজোয় বিশ্বাসীও ছিল না । সব চিন্তাভাবনা করে ডাকাত সর্দার মূর্তি ছাড়াই মায়ের আরাধনা করত । সেই রীতি এখনও চলে আসছে । কবে থেকে জানা নেই ৷ তবে বংশানুক্রমিক তাঁরা ঝাপড়িকালীর পুজো করে আসছেন ৷ এমনটাই জানালেন সাহাপুর দোলমঞ্চ পাড়ার বাসিন্দা কৃষ্ণকমল চক্রবর্তী । তিনি বলেন, "মাখন ডাকাতই এই কালীপুজোর প্রতিষ্ঠাতা । ডাকাতি করতে যাওয়ার সময় ও ফিরে আসার পর সে দলবল নিয়ে ঝাপড়িমায়ের আরাধনা করত । তবে প্রথম থেকেই এখানে ঘটপুজো হয় । ঝোপঝাড়ের মধ্যে থাকার জন্য এর নাম ঝাপড়িকালী । যেখানে ঝাপড়িকালীর বেদি রয়েছে, তার অদূরেই রয়েছে রাস্তা । এখন সেখান দিয়েই মালদা-বুলবুলচণ্ডী রাজ্য সড়ক তৈরি হয়েছে । এই রাস্তাও অতি প্রাচীন । সম্ভবত রাস্তার কাছে বেদির অবস্থান হওয়ায় এখানে কখনও মূর্তিপুজোর প্রচলন করেনি ডাকাতরা । একসময় এখানে বলিপ্রথা ছিল । শোনা যায়, ডাকাতরা এখানে নরবলিও দিত । এখনও বলি দেওয়া হয় । তবে সেই বলি কাউকে দেখতে দেওয়া হয় না । "

এই কালী নিয়ে এখনও যে স্থানীয় বাসিন্দারা রহস্যের গন্ধ খোঁজে, তার প্রমাণ মিলেছে এলাকাবাসীর কথায় । স্থানীয় এক বাসিন্দা কালীচরণ চৌধুরি বলছেন, " প্রতি শনি ও মঙ্গলবার বেদিতে মায়ের পুজো হয় । তবে কালীপুজোর দিন ঠিক কেমন পুজো হয় তা জানতে পারিনি কখনও । রাত দশটা পর্যন্ত মানুষ এখানে আসে । তারপর আর কেউ থাকে না । মা খুব জাগ্রত । মায়ের কাছে মানত করে অনেকেরই ইচ্ছাপূরণ হয়েছে । তাই প্রতিবছর কালীপুজোর দিন এলাকার মানুষের সঙ্গে অনেকে মানত পূরণের পুজো দিতে আসে । এভাবেই দু'শো বছরের বেশি সময় ধরে এখানে পুজো হয়ে আসছে । তবে এখানে মায়ের কোনও মূর্তি ওঠে না । কেন, তা জানি না । হয়তো এলাকার বয়স্ক মানুষজন সে কথা বলতে পারবে । "

স্থানীয় আর এক বাসিন্দা রতন হালদার বলেন, "ছোটো থেকেই এই পুজো দেখছি । এই পুজোর বয়স দু'শো, কিংবা তিনশোও হতে পারে । আমরা শুনেছি, ডাকাতরা এখানে এই পুজো করত । পরে আমবাগান তৈরির পর মানুষ এখানে যাওয়া-আসা শুরু করে । আগে এখানে গৌড়ীয় ইটের একটি বেদি ছিল । 10-12 বছর আগে তার উপর নতুন বেদি তৈরি করা হয় । আগে তো এখানে প্রচুর জঙ্গল ছিল । শিয়ালের দল দিনদুপুরে চরে বেড়াত । এখন সেই জঙ্গল নেই, শিয়ালের পালও নেই । তাই মানুষের ভয় কমেছে । কালীপুজোর সন্ধে থেকে রাত দশটা পর্যন্ত লোকজন এখানে আসে । প্রসাদ দিয়ে চলে যায় । এই পুজোয় বলি আমি কোনওদিন হতে দেখিনি । হয় কি না তাও জানি না । এখানে প্রতিমাও কখনও ওঠে না । কেন, সেটাও জানি না । "

For All Latest Updates

TAGGED:

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.