মালদা, 25 নভেম্বর: ইটিভি ভারতের খবরের জের ৷ 20 বছর পর শিকলবন্দি দশা কাটতে চলেছে মালদার যুবক বরুণ রামের ৷ চিকিৎসার জন্য মালদা মেডিক্যালে নিয়ে যাওয়া হবে এই যুবককে ৷ পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় হবে তাঁর সেই চিকিৎসা ৷ এমনটাই জানিয়েছেন মালদার জেলাশাসক নীতিন সিংঘানিয়া ৷
বরুণের বিষয়ে ইটিভি ভারত জেলা প্রশাসনিক মহলে যোগাযোগ করেছিল ৷ তারপরেই নড়েচড়ে বসেন খোদ জেলাশাসক ৷ শনিবার তিনি বলেন, "ঘটনাটি কানে আসতেই আমি ওই গ্রামে লোক পাঠিয়েছিলাম ৷ তিনি আমাকে রিপোর্ট দিয়েছেন ৷ আমরা ওই যুবকের চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করেছি ৷ তাঁর পরিবারকে সরকারিভাবে সবরকম সুযোগ সুবিধে দেওয়ার ব্যবস্থাও করা হয়েছে ৷ পরিবারের লোকজন চাইলে আগামিকাল তাঁকে মালদা মেডিক্যালে ভরতি করা হতে পারে ৷ প্রশাসনই তাঁর চিকিৎসার সমস্ত ব্যবস্থা করবে ৷"
পুরাতন মালদা ব্লকের মুচিয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের বাড়ুইপাড়া গ্রামের বাসিন্দা বরুণ রাম ৷ বয়স 28 বছর ৷ জন্মের সময় আর পাঁচটা বাচ্চার মতোই স্বাভাবিক ছিলেন তিনি ৷ যখন তাঁর বয়স সাত কিংবা আট, একদিন দুপুরে ইলিশ মাছ আর ভাত খেয়ে বাবার বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ৷ তা দেখে মা হ্যাঁচকা টান দিয়ে স্বামীর বুক থেকে ছেলেকে তুলে দেন ৷ তারপর থেকেই তাঁর মাথায় গোলমাল ৷
বরুণের মা সেমি রাম জানান, "ছোটতে এমনটা ছিল না ৷ আট বছর বয়স থেকে ওর মাথার গণ্ডগোল ৷ ছেড়ে দিলেই ছেলে পালিয়ে যাবে ৷ তাই 20 বছর ধরে ওকে আমরা শিকলে বেঁধে তালা মেরে রেখেছি ৷ একবার তো হারিয়েই গিয়েছিল ৷ আমি মানুষের বাড়িতে কাজ করি ৷ স্বামী শ্রমিকের কাজ করে ৷ স্বামীর অত্যাচার সহ্য করতে না-পেরে এক মেয়ে ছেলেমেয়ে নিয়ে আমাদের সঙ্গে থাকে ৷ আমরা গরিব মানুষ ৷ খাব না ছেলের চিকিৎসা করাব ! ভালো চিকিৎসা করানোর ক্ষমতা আমাদের নেই ৷ আপনারা যদি পারেন, আমার ছেলেটাকে ভালো করে দিন ৷ আমরা জানি না, সরকারও এসব রোগীদের চিকিৎসা করায় ৷"
বরুণের বাবা 65 বছর বয়সি শিবশংকর জানান, প্রধান আর পঞ্চায়েত সদস্যের কাছে ছেলের চিকিৎসা করানোর আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু ওরা কেউ তাঁর কথা কানেই তোলেননি ৷ তাই ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি ৷ পাশেই বাংলাদেশ ৷ যদি বর্ডারে চলে যায়, তবে গুলিতে প্রাণটাই চলে যাবে ছেলের ৷ তার থেকে এই ভালো বলে তিনি জানান ৷
এলাকার পঞ্চায়েত সদস্য মনোজ মণ্ডলের বাড়ি এই গ্রামেই ৷ তিনি বলেন, "আমি সবে পঞ্চায়েত সদস্য হয়েছি ৷ এর আগে গ্রামবাসীদের তরফে রাম দম্পতিকে বলেছিলাম ছেলের চিকিৎসা করাতে ৷ কিন্তু আর্থিক সহযোগিতা না-পেয়ে তাঁরা বরুণের চিকিৎসা করাতে পারেননি ৷ ওর চিকিৎসার প্রয়োজন ৷ আমি আপনাদের কাছেও সাহায্যপ্রার্থী ৷ এখনও পর্যন্ত বিষয়টি প্রধান বা বিডিওকে জানাতে পারিনি ৷ তবে বিষয়টি জানাতে জেলাশাসকের কাছে যাব ৷ শিবশংকরবাবু একবার বার্ধক্য ভাতা পেয়েছেন ৷ ওটা চালু করা গিয়েছে ৷ কিন্তু আবাস যোজনায় কেন তাঁদের নাম নেই, সেটা আমাকে দেখতে হবে৷ আমি নিজের সাধ্যমতো পরিবারটির পাশে থাকব ৷"
আরও পড়ুন: