কালিয়াচক, 19 সেপ্টেম্বর : ফের রুদ্রমূর্তি ধারণ করল গঙ্গা ৷ ফলে, ভাঙন শুরু হল কালিয়াচক-3 ব্লকে ৷ গতকাল বিকেল থেকে বীরনগর-1 গ্রাম পঞ্চায়েতের ভীমাগ্রামে গঙ্গার ভাঙন শুরু হয় ৷ গঙ্গার ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্কে রয়েছেন এলাকাবাসী ৷
চলতি মরশুমে ওই গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় তিনবার গঙ্গার ভাঙন হয়েছে ৷ তাতে 75টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ গৃহহীন হয়েছে অন্তত 250 পরিবার ৷ গতকাল থেকে ভীমাগ্রামের গঙ্গাপাড়ের বাসিন্দারা নিজেদের ঘরবাড়ি সরিয়ে নিতে শুরু করেছেন ৷ খবর পেয়ে সন্ধে নাগাদ ঘটনাস্থান পরিদর্শন করতে যান BDO ৷ 30 অগাস্ট বীরনগর-1 গ্রাম পঞ্চায়েতের চিনাবাজার গ্রামে গঙ্গায় প্রথম ভাঙন দেখা দেয় ৷ মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে সেদিন সকালে প্রায় 50টি বাড়ি নদীতে তলিয়ে যায় ৷ আতঙ্কে এলাকার প্রায় 200 বাড়ি থেকে বাসিন্দারা সরে যান ৷ তার দু’দিন পর পাশের দুর্গারামটোলায় আছড়ে পড়ে গঙ্গা ৷ ঘণ্টা দু'য়েকের তাণ্ডবে নদীগর্ভে চলে যায় অন্তত 25টি বাড়ি ৷ সেখান থেকে প্রায় 50টি পরিবার নিজেদের বাড়িঘর সরিয়ে নিতে বাধ্য হয় ৷ এরপর বেশ কয়েকদিন শান্ত ছিল নদী ৷ গতকাল বিকেল থেকে হঠাৎ ফুঁসে ওঠে ৷ তবে কোনও বাড়ি নদীগর্ভে মিলিয়ে যায়নি ৷ কিছু জমি নদীতে ভেঙে পড়েছে ৷
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভাঙনের ফলে ভীমাগ্রামের প্রায় 50 মিটার এলাকা নদীতে তলিয়ে গেছে ৷ তারপরে বেশ কিছু সময় ধরে অল্প-বিস্তর ভাঙন চলে । এদিকে গঙ্গায় বারবার ভাঙনের ফলে এলাকার মানুষজন ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন ৷ ওই এলাকায় গঙ্গার ভাঙন রোধের দায়িত্বে রয়েছে কেন্দ্রীয় সংস্থাটি ৷ স্থানীয় জুলফিকার আলি, সামিউল শেখদের বক্তব্য, 2017 সালে ওই এলাকায় সরকারটোলায় প্রথমবার গঙ্গায় ভাঙন দেখা দেয় ৷ সেই সময় অন্তত 200 বাড়ি গঙ্গায় তলিয়ে যায় ৷ নদী গিলে নিয়েছিল এলাকার বিধায়কের বাড়ি ৷ ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ নদীর পাড়ে ছাই ফেলে তখনকার মতো এলাকাকে বাঁচায় ৷ কিন্তু ভেঙে যাওয়া মার্জিনাল বাঁধটি। যা এখনও মেরামত করা হয়নি ৷ সেই জায়গায় পরপর তিনবার ভাঙন দেখা দেল । কেন সেই বাঁধ মেরামত করা হচ্ছে না, তা কেউ জানে না ৷ যদিও এলাকার বিধায়ক স্বাধীন সরকার বলছেন, “ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষ ঠিকভাবে কাজ করছে ৷ কিন্তু বাঁধের কাজ শেষ করার আগে গঙ্গার পাড় ভাঙছে ৷ আমরা এই নিয়ে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলেছি ৷ তারা জানিয়েছে, ওই বাঁধ দ্রুত মেরামত করার চেষ্টা করা হচ্ছে ৷”
এদিকে গত সাতদিন ধরে চিনাবাজার ও দুর্গারামটোলার ভাঙনে গৃহহীনদের খাবারের ব্যবস্থা করেছে INTTUC ৷ সংগঠনের কালিয়াচক-3 ব্লক সভাপতি সামায়ুন রেজ়া বলেন, “শুক্রবার বিকেল থেকে হঠাৎ ভীমাগ্রামে গঙ্গার পাড় ভাঙতে শুরু করেছে ৷ কোনও বাড়ি তলিয়ে যায়নি ঠিক । কিন্তু নদী থেকে মাত্র 20 মিটার দূরে রয়েছে বাড়িঘর ৷ তাই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে ৷ অনেকে বাড়িঘর সরিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু করে দিয়েছেন ৷ ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির জন্য বারবার এই এলাকা গঙ্গার ভাঙনের কবলে পড়ছে ৷ ভেঙে যাওয়া ওই মার্জিনাল বাঁধ পাকাপাকিভাবে তৈরি না করলে গঙ্গার ভাঙন চলতে থাকবে ৷”
গতকালের ভাঙন নিয়ে কালিয়াচক-3-এর BDO গৌতম দত্ত বলেন, “গঙ্গার ভাঙনে ভীমাগ্রামে কোনও বাড়িঘরের ক্ষতি হয়নি ৷ দপ্তরের কর্মীদের নিয়ে আমি এলাকা ঘুরে এসেছি ৷ পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে ৷ ইতিমধ্যে ফরাক্কা ব্যারেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আমরা কথা বলেছি ৷ এই বিষয়ে জেলাশাসক, সেচ দপ্তরসহ জেলা প্রশাসনের কর্তাদের জানানো হয়েছে ৷"