মালদা, 11 জানুয়ারি: দুয়ারে পঞ্চায়েত নির্বাচন ৷ তার আগে শাসকদলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষে উত্তপ্ত হয়ে উঠল ইংরেজবাজার ব্লকের কাজিগ্রাম গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর এলাকা ৷ ভাঙচুর করা হয় তৃণমূলেরই পার্টি অফিস ৷ এ নিয়ে গতকাল রাতে রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় লক্ষ্মীপুর ৷ সংঘর্ষে আহত হয়েছেন অন্তত 11 জন ৷ তাঁদের মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে (Malda Medical College and Hospital) ভর্তি করা হয়েছে ৷
এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত আটজনকে আটক করেছে ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে প্রবল অস্বস্তিতে তৃণমূল নেতৃত্ব ৷ তবে এই ঘটনা যে দলেরই গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, তা স্বীকার করে নিয়েছেন তাঁরা ৷ গোটা ঘটনা নিয়ে কটাক্ষ করেছে বিজেপি ৷ তাদের বক্তব্য, কাটমানির ভাগাভাগি নিয়েই এই ঝামেলা (TMC Factionalism in Malda) ৷ জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত নির্বাচন (Panchayat Election) নিয়ে মঙ্গলবার রাতে লক্ষ্মীপুরে সদ্য উদ্বোধন হওয়া পার্টি অফিসে কাজকর্ম করছিলেন তৃণমূলের কর্মীরা ৷
ক'দিন আগেই সেই পার্টি অফিসের উদ্বোধন করেছিলেন দলের জেলা সভাপতি আবদুররহিম বকসি ৷ সেই সময় স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য মইনুল শেখ ও তাঁর দলবল সেই পার্টি অফিসে হামলা চালান বলে অভিযোগ ৷ দলীয় কর্মীদের তাঁরা নাকি বেধড়ক মারধর করেন ৷ ভেঙে ফেলা হয় ওই অফিসে থাকা টেবিল-চেয়ার, ফ্যান থেকে শুরু করে যাবতীয় সামগ্রী ৷ এমনকী সেখানে থাকা মোটরবাইকগুলিও হামলার শিকার হয় ৷ প্রতিরোধ গড়ে তোলেন মইনুল বিরোধীরাও ৷
দু'পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত 11 জন শাসকদলের কর্মী আহত হন (Eleven party workers injured ) ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় ইংরেজবাজার থানার পুলিশ ৷ তবে তার আগেই সেখান থেকে মইনুল শেখরা সরে পড়েন ৷ এই ঘটনার প্রতিবাদে আক্রান্তদের তরফে ওই রাতেই মালদা-মানিকচক রাজ্য সড়ক অবরোধ করা হয় ৷ যদিও পুলিশের হস্তক্ষেপে অবরোধ দীর্ঘস্থায়ী হয়নি ৷ ঘটনাস্থল থেকেই পুলিশ মইনুল শেখের বাবাকে আটক করে ৷ পরে আরও সাতজনকে আটক করে ইংরেজবাজার থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে খবর ৷ এর মধ্যে রয়েছেন খোদ মইনুল শেখও ৷ যদিও তাঁর সমর্থকদের দাবি, তিনি নিজে থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন ৷
আরও পড়ুন: গোষ্ঠীদ্বন্দ্বে ভন্ডুল দিদির দূত নিয়ে সাংবাদিক বৈঠক, কড়া বার্তা জুনের
আক্রান্তদের তরফে রকি শেখ বলেন, "আমরা পার্টি অফিসে ছিলাম ৷ সেই সময় মইনুল শেখ ও তার দলবল আমাদের উপর হামলা চালায় ৷ আমাদের মারধর করে ৷ পার্টি অফিসে ভাঙচুর চালায় ৷ অফিসে থাকা 20 হাজার টাকা লুট করে ৷ ওরা আমাদের বাড়িতেও হামলা চালিয়েছে ৷ প্রাণের ভয়ে আমরা বাগানে লুকিয়ে ছিলাম ৷ মইনুল তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য ৷ আমরাও তৃণমূল করি ৷"
এই ঘটনায় বিব্রত তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কৃষ্ণেন্দুনারায়ণ চৌধুরী ৷ তিনি বলেন, "দলেরই দুটি গোষ্ঠীর গণ্ডগোল হয়েছে ৷ এক পক্ষ হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে ৷ আক্রান্তরা তৃণমূলের কর্মী ৷ কেন এমন হচ্ছে, তা আমরা দেখব ৷ যারা এ ধরনের কাজ করে সমাজকে নষ্ট করছে, দলকে শেষ করে দিতে চাইছে, তাদের বিরুদ্ধে দল কঠোর ব্যবস্থা নেবে ৷"
আরও পড়ুন: জয়নগরে শাসকদলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, বিধায়ক অনুগামীদের হাতে মার খেয়ে হাসপাতালে তৃণমূল কর্মী
এই ঘটনার তীব্র কটাক্ষ করেছে বিজেপি (BJP) ৷ দলের জেলা মুখপাত্র অম্লান ভাদুড়ি বলেন, "মালদা জেলায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সর্বজনবিদিত ৷ মুখ্যমন্ত্রী নিজে অনেক চেষ্টা করেও এই দ্বন্দ্ব মেটাতে পারেননি ৷ আর এই ঘটনার পিছনে রয়েছে টাকার ভাগাভাগির লড়াই ৷ ওই অঞ্চলে মনরেগা থেকে শুরু করে আবাস যোজনা পর্যন্ত বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা নয়ছয় হয়েছে ৷ সেই টাকার ভাগ নিয়েই এই গোলমাল ৷ ক'দিন আগেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি সেখানে এক পঞ্চায়েত সদস্যের পার্টি অফিসের উদ্বোধন করেছেন ৷ আরেক পঞ্চায়েত সদস্যের দল ওই পার্টি অফিস ভাঙচুরের পাশাপাশি বোমাবাজি করেছে ৷ গুলিও চালিয়েছে ৷ কিন্তু পুলিশ এখনও নিশ্চুপ ৷ তারা তৃণমূলের নির্দেশের অপেক্ষা করছে ৷ মানুষ সবই বুঝতে পেরেছে ৷ আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারলে তাঁরা এসবের জবাব দেবেন ৷"