মালদা, 1 জুন : করোনা (Covid Pandemic) শেষে সবেমাত্র স্কুল-কলেজ খুলেছিল । কিন্তু সরকারি নির্দেশে ফের শুরু হয়ে যায় গরমের ছুটি । একটানা 45 দিন । পড়াশোনায় ফের পিছিয়ে যাচ্ছে পড়ুয়ারা । এমনটাই অভিযোগ তুলেছিলেন অভিভাবকদের একাংশ । এরই মধ্যে কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলি অফলাইন পরীক্ষা (Offline Exam) নেওয়ার কথা ঘোষণা করতেই রে রে করে ওঠেন পড়ুয়াদের একাংশ । বিভিন্ন জায়গায় শুরু হয়ে যায় ছাত্র আন্দোলন ।
সেই আন্দোলনের চাপে পিছিয়ে আসতে কার্যত বাধ্য হয় সরকার । পড়ুয়াদের অনলাইন পরীক্ষার (Online Exam) দাবি মেনে নেওয়া হয় । পড়ুয়াদের একাংশের বক্তব্য ছিল, প্রায় দু’বছর তাঁরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সুযোগ পাননি । তার উপর করোনা আবার চোখ রাঙাচ্ছে । তাই এই পরিস্থিতিতে অনলাইনেই পরীক্ষা নেওয়া হোক ।
তাঁদের এই দাবি সরকার মেনে নিলেও দেখা যাচ্ছে, বিভিন্ন কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে চলছে অনুষ্ঠান । উপচে পড়ছে ভিড় । যেমন ভিড় আজ লক্ষ্য করা গিয়েছে পুরাতন মালদার গৌড় মহাবিদ্যালয়েও । এনিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষকদের একাংশ (Educationists Raise Concerns About Online Exams in Bengal Colleges and Universities) ।
আজ গৌড় কলেজের বাংলা বিভাগের তরফে কলেজে হলে রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী উদ্যাপন করা হয় । সেখানে পাঁচশোরও বেশি পড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন । বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ক্ষিতীশ মাহাতো বলেন, “কলেজের বাংলা বিভাগের তরফে আজ রবীন্দ্র-নজরুল জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে । অনুষ্ঠানের থিম, সমাজে রবীন্দ্র ও নজরুল দর্শনের প্রভাব । ছাত্রছাত্রীরা যাতে এই দু’জনের দর্শনের প্রভাব জানতে পারেন, দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে পারেন, তার জন্যই আমরা এই থিম রেখেছি । অনুষ্ঠানে পাঁচ থেকে ছ’শো ছাত্রছাত্রী অংশ নিয়েছেন । আমাদের অ্যাকাডেমিক শিডিউলের মধ্যেই এমন অনুষ্ঠানের বিষয় রয়েছে । অনলাইন আর অফলাইন অন্য বিতর্কের বিষয় । এক্ষেত্রে বিশ্ববিদ্যালয় অন লাইনে পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে সঠিক কাজই করেছে ।”
কলেজে এমন অনুষ্ঠান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে শিক্ষক মহলে । এনিয়ে বিশ্বজিৎ মণ্ডলের বক্তব্য, “করোনাকালে অনলাইনে পরীক্ষা গ্রহণের দাবি উঠেছিল । কারণ, সেই সময় পড়ুয়ারা পড়াশোনার ক্ষেত্রে অনেক সমস্যার মুখোমুখি হয়েছিলেন । পরবর্তীতে স্কুল-কলেজ খুলে যায় । কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই গরম আর করোনার অজুহাত দেখিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ফের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দেন । অথচ আজ গৌড় কলেজে কয়েকশো পড়ুয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছে । পড়ুয়ারা যদি কলেজে এসে অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পারেন, তবে তাঁরা অফলাইনে পরীক্ষাও দিতে পারবেন । কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন, এবার পরীক্ষা অনলাইনে হবে । এতেই বোঝা যাচ্ছে, তিনি আদপে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার চেষ্টা করছেন ।”
আরেক শিক্ষক বাসুদেব ঘোষ বলেন, “করোনায় দু’বছর সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার পর ফের যখন ক্লাস শুরু হল, তখনই গরমের জন্য মুখ্যমন্ত্রী ফের স্কুল-কলেজ বন্ধ করে দিলেন । বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠন স্কুল-কলেজ খোলার দাবিতে ডেপুটেশন দিয়েছে । কিন্তু গরম আর করোনা পরিস্থিতির কারণ দেখিয়ে তিনি নিজের সিদ্ধান্তে অটল থাকেন । এই সময় কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জমায়েত করা যাবে না বলে সরকারি নির্দেশ রয়েছে । তার পরেও সরকারি কিংবা সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কীভাবে শতাধিক পড়ুয়াকে একত্রিত করে অনুষ্ঠান করতে পারে, তা আমার ঠিক জানা নেই ।’’
একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘যদি সরকারি নির্দেশ মেনেই এই অনুষ্ঠান হয়ে থাকে, তবে সরকারের উচিত, যারা অফলাইন পরীক্ষার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন, তাঁদের অফলাইনেই পরীক্ষা দিতে বাধ্য করা । আমরা গ্রামীণ এলাকায় শিক্ষকতা করি । এই রাজ্যের ছেলেমেয়েরা কীভাবে সর্বভারতীয় স্তরে পিছিয়ে পড়ছে, তা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি । এভাবে যদি শিক্ষা ব্যবস্থাকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাওয়া হয়, তবে এই রাজ্যের ভবিষ্যৎ খুব খারাপ । আর গ্রামীণ ছেলেমেয়েরা শিক্ষার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনার উপরেই সম্পূর্ণ নির্ভরশীল । তাঁদের ভবিষ্যৎ কেন এভাবে নষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে ?”
আরও পড়ুন : WB Madrasah Exam Result : মাদ্রাসা পরীক্ষায় প্রথম শরিফা খাতুন, প্রথম দশে মালদা জেলারই ছেলেমেয়েরা