ETV Bharat / state

দুর্গাপুজোর কেনাকাটায় কোরোনার থাবা, চিন্তায় মালদার বস্ত্র ব্যবসায়ীরা

সামনেই দুর্গাপুজো । কিন্তু ভিড় নেই জামাকাপড়ের দোকানে । ইদেও একইরকম ক্ষতির মুখোমুখি হয়েছিল ব্যবসা । পুজোর আগেও তারা ক্ষতির মুখেই । বিক্রি নেই অন্যবারের মতো ।

author img

By

Published : Sep 25, 2020, 8:57 PM IST

malda
মালদা

মালদা, 25 সেপ্টেম্বর : হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন । তারপরই শুরু হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব । কিন্তু কোরোনা এবার সেই উৎসব কতটা প্রাণবন্ত করে তুলবে তা নিয়ে দ্বিধায় আছে সবাই । কারণ, কোরোনার প্রভাব এখনও বিশ্বজুড়ে । বাদ নেই এই জেলাও । আতঙ্কে রয়েছে মানুষ । আনলক পর্বেও অনেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী । তবে এবারের দুর্গাপুজো যে জেলার বস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না, তা নিয়ে কারও কোনও দ্বিধা নেই । কারণ, দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটানোর চিন্তায় দিন কাটছে অধিকাংশের । দোকানপাট খুললেও ক্রেতার দেখা নেই পুজোর ক'দিন আগেও । তাই ইদের মতো পুজোতেও এই জেলায় কয়েকশো কোটি টাকার জামাকাপড়ের ব্যবসা নষ্ট হতে চলেছে ।

জেলা প্রশাসনের তথ্য, মালদা জেলার 15টি ব্লকে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ রয়েছে প্রায় 42 শতাংশ । কিন্তু শুধু হিন্দু নয়, এই জেলায় দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও । অনেক মুসলিম ইদের মতো পুজোতেও নতুন জামাকাপড় কেনে । এটা এই জেলার অনেক পুরোনো ঐতিহ্য । কিন্তু কোরোনা এবার সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে । ইদে এই জেলায় কয়েকশো কোটি টাকার বস্ত্র ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল । পুজোতেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা । ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে চলেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের । বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।

malda
শপিংয়েও মানতে হচ্ছে কোরোনা বিধি

মালদার এক ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ী টোটন দত্ত বলেন, "এবার পুজোর বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ । এখনও রাস্তাঘাটে লোকজন দেখা যাচ্ছে না । আমরা মালপত্র ঠিকমতো আনতে পারছি না । একদিকে যেমন যাতায়াতের সমস্যা, অন্যদিকে কোরোনার জন্য মাল আনতে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি । অন্যান্য বছর পুজোয় লাখ তিনেক টাকার ব্যবসা হয় । এবার তার কিছুই হয়নি । ব্যবসা ওঠার সম্ভাবনাও দেখছি না । এখনও ক্রেতার দেখা নেই । মানুষের হাতে কেমন টাকাপয়সা আছে বুঝতে পারছি না । তাই মালপত্র তুলতেও ভয় পাচ্ছি । কোরোনার জন্য আমাদের বেশ কিছুদিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল । এতে অর্থনৈতিকভাবে আমরা এমনিতেই অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছি । 22-23 বছর ধরে ব্যবসা করছি । এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি । কোরোনার জন্যই এই অবস্থা । মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে । আমরাও মহাজনের টাকা শোধ করতে হবে ভেবে মাল তুলতে ভয় পাচ্ছি । আমরা মহাজনের উপর নির্ভর করেই ব্যবসা করি ।"

ক্ষতির মুখে মালদার বস্ত্র ব্যবসা

এক মহিলা বস্ত্র ব্যবসায়ী মঞ্জু কুণ্ডু বলেন, প্রায় 12 বছর ধরে ব্যবসা করছি । আমার দোকানে পেটিকোট, ব্লাউজ় ইত্যাদি রাখি । এবার পুজোর বাজার খুবই খারাপ । কোরোনার জন্য মাঝেমধ্যে সব বন্ধ হচ্ছে । মানুষের কাছে টাকাপয়সা নেই । যা ছিল, এতদিন ঘরে বসে খেয়েছে । কার ঘরে কত টাকা থাকতে পারে? এখনও ঘরে যা সামান্য টাকা রয়েছে, ভবিষ্যতে খাওয়ার জন্য রাখছে । যারা সরকারি চাকরি করছে, তারা হয়ত পুজোয় কিছু জামাকাপড় কিনতে পারছে । কিন্তু যাদের কিছু নেই, তারা কীভাবে বাজার করবে? আগে খাবে, নাকি পোশাক কিনবে? হাতে আর কয়েকটা দিন । এখনও বাজারে লোক নেই । এবার আর পুজোর বাজার উঠবে না । শেষের দিকে বাজার উঠবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ।" একই বক্তব্য দোকান মালিক নরেন্দ্রনাথ সাহারও ।

এ তো গেল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা । বড় ব্যবসায়ীরাও এবার পুজোয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন । তেমনই এক ব্যবসায়ী জয় কুণ্ডু বলেন, "পুজোর বাজারে এখনও পর্যন্ত মানুষের সাড়া পাইনি । সত্যিই আমরা এবার একটা কালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । বর্তমানে দেশের GDP-ও অনেক নেমে গিয়েছে । GDP-র এত হ্রাস আমার অভিজ্ঞতায় নেই । তবু আমরা আশা করছি, অক্টোবর মাসে বাজার কিছুটা তেজি হতে পারে । কোরোনা আর লকডাউনে এবার আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি নষ্ট হতে বসেছে । ইদ আর পয়লা বৈশাখে মানুষ আতঙ্কে ছিল । বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিল । সেই সময় লকডাউনে আমরাও দোকান খুলতে পারিনি । কিছু সময় দোকান খোলা থাকলেও ব্যবসা হয়নি । এই মুহূর্তে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একেবারেই নেই । ফলে পুজোর বাজারে যে এর প্রভাব পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।"

বস্ত্র ব্যবসায়ী দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, "এবার সবে পুজোর বাজার শুরু হয়েছে । আশা করছি, কোরোনার জন্য এবার এতদিন ধরে ব্যবসায় যা ক্ষতি হয়েছে, পুজোর বাজারে তার কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে । তবে পয়লা বৈশাখ কিংবা ইদের বাজারের লোকসান সামাল দেওয়া যাবে না । এমনকী গত বছর পুজোর বাজারে যে ব্যবসা হয়েছিল, এবার সেটাও হবে না । কারণ, মানুষের কাজ নেই, হাতে টাকা নেই । কোথায় থেকে জিনিস কিনবে? তবে সবচেয়ে মার খাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা । তাদের ব্যবসা সামাল দেওয়ার কোনও জায়গা নেই ।"

মালদা ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বপন বারোড়ি বলছেন, "এবার ইদের বাজারে আমাদের প্রায় 350 কোটি টাকার ব্যবসা মার খেয়েছে । ইদের জিনিস এখনও বস্তাবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে । তখন 300-400 টাকায় যে মাল কিনেছিলাম, এখন সেটা 100 টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না । হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও পুজোর বাজার জমে ওঠেনি । কোরোনা আবহ এখনও চলছে । মানুষ কিংবা ব্যবসায়ী, কারোর হাতেই পয়সা নেই । শুধু দু'একটি শপিং মলে ভিড় হচ্ছে । কিন্তু সেই ছবি পুজোর বাজার নির্ধারণ করে না । একটি চুড়িদার কিনতে আমাদের 1000 থেকে 1200 টাকা দিতে হয় । সেই মালে আমাদের অন্তত 100 টাকা লাভ করতে হবে । কিন্তু 1300 টাকা দিয়ে সেই চুড়িদার কেনার খরিদ্দার এখন পাওয়া যাচ্ছে না । বাজারে 25 শতাংশ ক্রেতা নেই । আমাদের মনে হয় না, বাজার আর উঠবে । কারণ, গ্রামের পরিস্থিতি অসম্ভব খারাপ । কৃষকদের হাতে টাকা নেই । একই অবস্থা শ্রমিকদের । তাদের এখন জামাকাপড় কেনার ক্ষমতা নেই ।"

মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডুর বক্তব্য, "আমাদের জেলার বস্ত্র ব্যবসায় কোরোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । চৈত্র সেল, জামাইষষ্ঠী ও ইদের বাজার আগেই মাটি হয়েছে । এবার পুজোর বাজারেও কোরোনা প্রভাব ফেলতে চলেছে । মধ্যবিত্তরা দু'মাস আগে থেকে অল্প অল্প করে কাপড় কিনতে থাকে । এবার মধ্যবিত্তরা বাজারে আসা যেন ভুলেই গিয়েছে । শুধুমাত্র খাবার কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া মধ্যবিত্তরা কিছু কেনাকাটা করছে না । আমার মনে হয় না, এবার পুজোয় বস্ত্র ব্যবসায়ীদের ভালো কিছু হবে । এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারত কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার । এই ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোনও সরকারই এনিয়ে কিছু ভাবেনি ।"

মালদা, 25 সেপ্টেম্বর : হাতে গোনা আর কয়েকটা দিন । তারপরই শুরু হবে বাঙালির প্রাণের উৎসব । কিন্তু কোরোনা এবার সেই উৎসব কতটা প্রাণবন্ত করে তুলবে তা নিয়ে দ্বিধায় আছে সবাই । কারণ, কোরোনার প্রভাব এখনও বিশ্বজুড়ে । বাদ নেই এই জেলাও । আতঙ্কে রয়েছে মানুষ । আনলক পর্বেও অনেকে স্বেচ্ছায় ঘরবন্দী । তবে এবারের দুর্গাপুজো যে জেলার বস্ত্র ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফোটাতে পারবে না, তা নিয়ে কারও কোনও দ্বিধা নেই । কারণ, দু'বেলা দু'মুঠো খাবার জোটানোর চিন্তায় দিন কাটছে অধিকাংশের । দোকানপাট খুললেও ক্রেতার দেখা নেই পুজোর ক'দিন আগেও । তাই ইদের মতো পুজোতেও এই জেলায় কয়েকশো কোটি টাকার জামাকাপড়ের ব্যবসা নষ্ট হতে চলেছে ।

জেলা প্রশাসনের তথ্য, মালদা জেলার 15টি ব্লকে হিন্দু সম্প্রদায়ভুক্ত মানুষ রয়েছে প্রায় 42 শতাংশ । কিন্তু শুধু হিন্দু নয়, এই জেলায় দুর্গাপুজোয় মেতে ওঠে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষও । অনেক মুসলিম ইদের মতো পুজোতেও নতুন জামাকাপড় কেনে । এটা এই জেলার অনেক পুরোনো ঐতিহ্য । কিন্তু কোরোনা এবার সবকিছু ওলটপালট করে দিয়েছে । ইদে এই জেলায় কয়েকশো কোটি টাকার বস্ত্র ব্যবসার ক্ষতি হয়েছিল । পুজোতেও তার ব্যতিক্রম হবে না বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা । ক্ষতির পরিমাণ বেশি হতে চলেছে ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের । বড় ব্যবসায়ীরাও ক্ষতির মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন ।

malda
শপিংয়েও মানতে হচ্ছে কোরোনা বিধি

মালদার এক ক্ষুদ্র বস্ত্র ব্যবসায়ী টোটন দত্ত বলেন, "এবার পুজোর বাজারের অবস্থা খুবই খারাপ । এখনও রাস্তাঘাটে লোকজন দেখা যাচ্ছে না । আমরা মালপত্র ঠিকমতো আনতে পারছি না । একদিকে যেমন যাতায়াতের সমস্যা, অন্যদিকে কোরোনার জন্য মাল আনতে বাইরে যেতে ভয় পাচ্ছি । অন্যান্য বছর পুজোয় লাখ তিনেক টাকার ব্যবসা হয় । এবার তার কিছুই হয়নি । ব্যবসা ওঠার সম্ভাবনাও দেখছি না । এখনও ক্রেতার দেখা নেই । মানুষের হাতে কেমন টাকাপয়সা আছে বুঝতে পারছি না । তাই মালপত্র তুলতেও ভয় পাচ্ছি । কোরোনার জন্য আমাদের বেশ কিছুদিন দোকান বন্ধ রাখতে হয়েছিল । এতে অর্থনৈতিকভাবে আমরা এমনিতেই অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়েছি । 22-23 বছর ধরে ব্যবসা করছি । এমন পরিস্থিতিতে কখনও পড়িনি । কোরোনার জন্যই এই অবস্থা । মানুষ অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েছে । আমরাও মহাজনের টাকা শোধ করতে হবে ভেবে মাল তুলতে ভয় পাচ্ছি । আমরা মহাজনের উপর নির্ভর করেই ব্যবসা করি ।"

ক্ষতির মুখে মালদার বস্ত্র ব্যবসা

এক মহিলা বস্ত্র ব্যবসায়ী মঞ্জু কুণ্ডু বলেন, প্রায় 12 বছর ধরে ব্যবসা করছি । আমার দোকানে পেটিকোট, ব্লাউজ় ইত্যাদি রাখি । এবার পুজোর বাজার খুবই খারাপ । কোরোনার জন্য মাঝেমধ্যে সব বন্ধ হচ্ছে । মানুষের কাছে টাকাপয়সা নেই । যা ছিল, এতদিন ঘরে বসে খেয়েছে । কার ঘরে কত টাকা থাকতে পারে? এখনও ঘরে যা সামান্য টাকা রয়েছে, ভবিষ্যতে খাওয়ার জন্য রাখছে । যারা সরকারি চাকরি করছে, তারা হয়ত পুজোয় কিছু জামাকাপড় কিনতে পারছে । কিন্তু যাদের কিছু নেই, তারা কীভাবে বাজার করবে? আগে খাবে, নাকি পোশাক কিনবে? হাতে আর কয়েকটা দিন । এখনও বাজারে লোক নেই । এবার আর পুজোর বাজার উঠবে না । শেষের দিকে বাজার উঠবে কি না তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে ।" একই বক্তব্য দোকান মালিক নরেন্দ্রনাথ সাহারও ।

এ তো গেল ক্ষুদ্র ও মাঝারি ব্যবসায়ীদের কথা । বড় ব্যবসায়ীরাও এবার পুজোয় ক্ষতির আশঙ্কা করছেন । তেমনই এক ব্যবসায়ী জয় কুণ্ডু বলেন, "পুজোর বাজারে এখনও পর্যন্ত মানুষের সাড়া পাইনি । সত্যিই আমরা এবার একটা কালো সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি । বর্তমানে দেশের GDP-ও অনেক নেমে গিয়েছে । GDP-র এত হ্রাস আমার অভিজ্ঞতায় নেই । তবু আমরা আশা করছি, অক্টোবর মাসে বাজার কিছুটা তেজি হতে পারে । কোরোনা আর লকডাউনে এবার আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি নষ্ট হতে বসেছে । ইদ আর পয়লা বৈশাখে মানুষ আতঙ্কে ছিল । বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছিল । সেই সময় লকডাউনে আমরাও দোকান খুলতে পারিনি । কিছু সময় দোকান খোলা থাকলেও ব্যবসা হয়নি । এই মুহূর্তে মানুষের ক্রয় ক্ষমতা একেবারেই নেই । ফলে পুজোর বাজারে যে এর প্রভাব পড়বে তা বলার অপেক্ষা রাখে না ।"

বস্ত্র ব্যবসায়ী দেবাশিস কুণ্ডু বলেন, "এবার সবে পুজোর বাজার শুরু হয়েছে । আশা করছি, কোরোনার জন্য এবার এতদিন ধরে ব্যবসায় যা ক্ষতি হয়েছে, পুজোর বাজারে তার কিছুটা সামাল দেওয়া যাবে । তবে পয়লা বৈশাখ কিংবা ইদের বাজারের লোকসান সামাল দেওয়া যাবে না । এমনকী গত বছর পুজোর বাজারে যে ব্যবসা হয়েছিল, এবার সেটাও হবে না । কারণ, মানুষের কাজ নেই, হাতে টাকা নেই । কোথায় থেকে জিনিস কিনবে? তবে সবচেয়ে মার খাচ্ছে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা । তাদের ব্যবসা সামাল দেওয়ার কোনও জায়গা নেই ।"

মালদা ক্লথ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক স্বপন বারোড়ি বলছেন, "এবার ইদের বাজারে আমাদের প্রায় 350 কোটি টাকার ব্যবসা মার খেয়েছে । ইদের জিনিস এখনও বস্তাবন্দী হয়ে পড়ে রয়েছে । তখন 300-400 টাকায় যে মাল কিনেছিলাম, এখন সেটা 100 টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে না । হাতে গোনা কয়েকদিন বাকি থাকলেও এখনও পুজোর বাজার জমে ওঠেনি । কোরোনা আবহ এখনও চলছে । মানুষ কিংবা ব্যবসায়ী, কারোর হাতেই পয়সা নেই । শুধু দু'একটি শপিং মলে ভিড় হচ্ছে । কিন্তু সেই ছবি পুজোর বাজার নির্ধারণ করে না । একটি চুড়িদার কিনতে আমাদের 1000 থেকে 1200 টাকা দিতে হয় । সেই মালে আমাদের অন্তত 100 টাকা লাভ করতে হবে । কিন্তু 1300 টাকা দিয়ে সেই চুড়িদার কেনার খরিদ্দার এখন পাওয়া যাচ্ছে না । বাজারে 25 শতাংশ ক্রেতা নেই । আমাদের মনে হয় না, বাজার আর উঠবে । কারণ, গ্রামের পরিস্থিতি অসম্ভব খারাপ । কৃষকদের হাতে টাকা নেই । একই অবস্থা শ্রমিকদের । তাদের এখন জামাকাপড় কেনার ক্ষমতা নেই ।"

মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডুর বক্তব্য, "আমাদের জেলার বস্ত্র ব্যবসায় কোরোনার ব্যাপক প্রভাব পড়েছে । চৈত্র সেল, জামাইষষ্ঠী ও ইদের বাজার আগেই মাটি হয়েছে । এবার পুজোর বাজারেও কোরোনা প্রভাব ফেলতে চলেছে । মধ্যবিত্তরা দু'মাস আগে থেকে অল্প অল্প করে কাপড় কিনতে থাকে । এবার মধ্যবিত্তরা বাজারে আসা যেন ভুলেই গিয়েছে । শুধুমাত্র খাবার কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস ছাড়া মধ্যবিত্তরা কিছু কেনাকাটা করছে না । আমার মনে হয় না, এবার পুজোয় বস্ত্র ব্যবসায়ীদের ভালো কিছু হবে । এই পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ীদের বাঁচাতে পারত কেন্দ্র কিংবা রাজ্য সরকার । এই ব্যবসায়ীদের সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল কিন্তু কোনও সরকারই এনিয়ে কিছু ভাবেনি ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.