হরিশ্চন্দ্রপুর, 18 জুন : 10 বছর ধরে রাস্তার কোনও সংস্কার হয়নি ৷ বছর চারেক আগে বন্যায় রাস্তার চিত্রটা কঙ্কালের মতো । বর্ষায় রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে মরণফাঁদের মতো । অথচ ভোট এলে নেতারা এসে কয়েকদিনের মধ্যেই রাস্তার কাজ শুরু করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান ৷ রাস্তায় এখনও ঢোকে না কোনও চারচাকার যান, এমনকি অ্যাম্বুলেন্সও৷
আর তাই অ্যাম্বুলেন্স না ঢোকায় মৃত্যু হয়েছে গ্রামের এক বৃদ্ধের৷ এই ঘটনার পর নিজেদের মৃত্যুফাঁদ সংস্কারের দাবিতে এদিন গর্জে উঠেছেন গ্রামবাসীরা৷ ঘটনাটি ঘটেছে মালদার হরিশ্চন্দ্রপুরে ।
গ্রামীণ রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করা হয়েছে, তেমনই ধানের চারা পুঁতে রাস্তার বাস্তব পরিস্থিতি তুলে ধরেছেন গ্রামের মানুষজন৷ তবে আজও স্থানীয় জেলা পরিষদ সদস্যের প্রতিশ্রুতি, কয়েকদিনের মধ্যেই নাকি রাস্তা সংস্কারের কাজ শুরু হবে ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর ১ নম্বর ব্লকের কুশিদা গ্রাম পঞ্চায়েতের লক্ষ্মীপুর গ্রাম ৷ এই গ্রামের এক বৃদ্ধ, নাম সনাতন থোকদার দিন পনেরো ধরে অসুস্থ ছিলেন৷ গতকাল রাতে তিনি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে যেতে অ্যাম্বুলেন্স ডাকেন তাঁর ছেলে ৷ অ্যাম্বুলেন্স প্রায় গ্রামের কাছে চলে এলেও রাস্তার পরিস্থিতি দেখে চালক গাড়ি নিয়ে বাড়িতে যেতে রাজি হননি, অগত্যা ফিরে যান তিনি৷ অবশেষে একটি অটোতে চাপিয়ে সনাতনবাবুকে হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল৷ কিন্তু মাঝরাস্তাতেই মারা যান তিনি৷
আরও পড়ুন...জমি বিবাদের জের, মালদায় প্রতিবেশীদের হাতে যুবক খুন
তাঁর ছেলে টিটুন থোকদার জানান, “বাবা হঠাৎ বেশি অসুস্থ হয়ে যায়৷ অ্যাম্বুলেন্স ডেকেছিলাম৷ কিন্তু রাস্তা দেখে চালক আসেননি । শেষ পর্যন্ত কোনওরকমে একটা অটো নিয়ে এসে বাবাকে হাসপাতাল নিয়ে যাচ্ছিলাম৷ কিন্তু ঝাঁকুনিতে রাস্তাতেই বাবা মারা গেল৷”
গ্রামের বাসিন্দা নকুলচন্দ্র থোকদার তাঁর বলেন “এমনিতেই 10 বছর আগে শেষবার সংস্কার হয়েছিল রাস্তা এখন এই অবস্থা ৷ সতেরো সালের বন্যার পর রাস্তাটা দিয়ে চলার উপায় নেই৷ সব দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন, সবার কাছে বলেছি ৷ কারও কোনও হুঁশ নেই ৷ এই রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্সও ঢোকে না ৷ শুধু আমাদের গ্রাম নয়, এই রাস্তা দিয়ে গাররা, ভাটোল, চণ্ডীপুর সহ একাধিক গ্রাম তো বটেই, বিহারের লোকজনও যাতায়াত করেন ৷ রাস্তার জন্য গতকাল এক রোগী মারাও গিয়েছে ৷
রাতবিরেতে প্রসূতি দের হাসপাতাল নিয়ে যাওয়া যায় না ৷ এই রাস্তা তিন কিলোমিটার তাতেও সংস্কারে সরকারের কোনও হুঁশ নেই ৷ তাই আমরা ঠিক করেছি, যতক্ষণ না এই রাস্তা সংস্কার করা হচ্ছে, ততক্ষণ রাস্তা বন্ধ রাখা হবে ৷ কাউকে যেতে দেব না ৷”
আরও পড়ুন...নিকাশি ব্যবস্থা স্বাভাবিক করতে বেআইনি দোকান উচ্ছেদ মালদা প্রশাসনের
অন্যদিকে আশ্বাস দেওয়া থেকে বেরতে পারেননি স্থানীয় জেলা পরিষদের সদস্য সন্তোষ চৌধুরী ৷ তাঁর দাবি, “উন্নয়নের কাজ থেমে নেই ৷ ১০ বছরে এখানে প্রচুর রাস্তা তৈরি হয়েছে ৷ কাপাইচণ্ডী থেকে লক্ষ্মীপুর যাওয়ার রাস্তাটা সংস্কারের অভাবে খারাপ হয়ে রয়েছে ৷ জেলা পরিষদে বিষয়টি জানানো আছে ৷ গতকালই সভাধিপতির বিরুদ্ধে অনাস্থা আনা হয়েছে ৷ নতুন সভাধিপতি চেয়ারে বসলেই আমরা রাস্তাটা ঠিক করে দেব ৷”