মালদা, 17 মে : লক্ষ্য স্থির দ্রোণাচার্যের ৷ ধনুকে শর সংযোগ নয়, তাঁর নিশানায় শুধুই গরিব মানুষের পেট ভরানোর সংকল্প ৷ সেই লক্ষ্য নিয়েই হরিশ্চন্দ্রপুরের পাড়ায় পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন তিনি ৷
দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ বাড়ি হরিশ্চন্দ্রপুরের পিপলা গ্রামে ৷ পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ৷ দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ ৷ করোনা কেড়েছে তাঁর পেশাগত দিনপঞ্জি ৷ ঠাকুরদা-ঠাকুমা ছিলেন গান্ধিবাদী স্বাধীনতা সংগ্রামী ৷ তাঁদের কাছ থেকে পেয়েছেন সমাজসেবার শিক্ষা ৷ সেই শিক্ষা থেকেই করোনাকালে নেমে পড়েছেন আর্তের সেবায় ৷
হরিশ্চন্দ্রপুর আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়া এলাকা হিসাবে চিহ্নিত ৷ অসংখ্য গরিব মানুষের বাস ৷ করোনা সেই ভেদাভেদ মানে না ৷ প্রচুর গরিব মানুষ ভাইরাসের হামলার শিকার ৷ তাঁরা কাজে বেরোতে পারছেন না ৷ বেশ কয়েকটি পরিবারের প্রত্যেক সদস্যই করোনা আক্রান্ত ৷ অসুস্থ শরীরে রান্না করার সামর্থ নেই অনেকেরই ৷ হাসপাতালেও জায়গা নেই ৷ এই পরিবারগুলির কাছেই এখন পারানির কড়ি হয়ে উঠেছেন দ্রোণাচার্যবাবু ৷ নিজের টাকায় গত সাতদিন ধরে মানুষগুলিকে দু’বেলা রান্না করা খাবার খাওয়াচ্ছেন ৷ এখনও পর্যন্ত 35 জনকে নিয়মিত খাবার জোগাচ্ছেন তিনি ৷ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ফোন নম্বর দিয়ে আবেদন জানিয়েছেন, এমন পরিস্থিতির শিকার হলে যে কেউ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন ৷ খাবার পৌঁছে যাবে দরজায় ৷
আরও পড়ুন: কিছুটা স্বস্তি, পরপর দু’দিন নামল করোনা আক্রান্তের গ্রাফ
দ্রোণাচার্য বন্দ্যোপাধ্যায় অর্থাৎ, এলাকার সকলের বিট্টুদা বলেন, “আমি একজন শিক্ষক ৷ বহুদিন ধরে স্কুল বন্ধ ৷ কিন্তু প্রতি মাসে মাইনেটা পেয়ে যাচ্ছি ৷ অর্থাৎ কাজ না করেও বেতন পাচ্ছি ৷ বিবেকের তাড়নায় ভুগছি ৷ সিদ্ধান্ত নিই, বেতনের কিছু অংশ দিয়ে কোভিড আক্রান্ত গরিব মানুষকে দু’বেলা খাওয়াব ৷ সেই কাজ শুরু করছি ৷ আমার স্ত্রী-ছেলে আর গ্রামের দুটি ছেলে এই কাজে আমাকে সহযোগিতা করছে ৷ যতদিন পারি, এভাবেই মানুষের পাশে দাঁড়াব ৷ সমস্ত শিক্ষকদের বার্তা দিতে চাই, সবাই যেন এই সংকটকালে গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ান ৷”
সকাল সকাল নিজের হাতেই বাজার করেন বিট্টুদা ৷ সোমবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি ৷ এদিনের মেনুতে ছিল ভাত, ডাল, ভাজা, আলু-ফুলকপির তরকারি আর ডিমের ঝোল ৷ রান্নার পর খাবার অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে ভরে করে হাতে ঝুলিয়ে পথে বেরিয়ে পড়েন শিক্ষক ৷ নিরন্নকে পৌঁছে দেন খাবার ৷
দ্রোণাচার্যর স্ত্রী চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, নতুন কোনও বিষয় নয়, তাঁর স্বামী দীর্ঘদিন ধরেই এই ধরনের কাজ করে থাকেন ৷ এখন করোনা সংক্রমিত দুঃস্থদের বাড়িতে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ৷ তিনিও রান্না সহ অন্যান্য কাজে হাত লাগিয়ে সহযোগিতা করেন ৷ চৈতালি বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "সংকটের মুহূর্তে মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারলে ভালো লাগে ৷"