মালদা, 9 মার্চ: নারী দিবসের পরের দিনেই নারী নির্যাতনের সাক্ষী থাকল মালদা ৷ পারিবারিক কলহের জেরে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী'র গায়ে ফুটন্ত জল ঢেলে দিল স্বামী ৷ বধূর চিৎকারে পড়শিরা ছুটে আসতেই 'বীরপুরুষ' স্বামী পালানোর চেষ্টা করে ৷ তবে ব্যর্থ হয়েছে সে ৷ প্রতিবেশীরা তাকে ধরে বেধড়ক মারধর করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছে ৷ বধূ নির্যাতনের এমন মর্মান্তিক ছবি দেখে আঁতকে উঠেছেন প্রতিবেশী থেকে শুরু করে ধৃত স্বামীর আত্মীয়রাও ৷ প্রত্যেকে জানিয়ে দিয়েছেন, নির্যাতিতা বধূর সম্মতি ছাড়া আদালত থেকে জামিন পেলেও তাঁরা কেউ স্বামীকে এলাকায় ঢুকতে দেবেন না ৷ ঘটনাটি ঘটেছে হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের মহেন্দ্রপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের ইসলামপুর গ্রামে (Malda Domestic Violence)৷
নির্যাতিতা বধূর নাম টুম্পা সাহা ৷ পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর চারেক আগে ইসলামপুর গ্রামের দুলাল সাহার সঙ্গে বিহারের বাসিন্দা টুম্পার বিয়ে হয় ৷ তাঁদের দু'টি পুত্রসন্তান রয়েছে ৷ টুম্পা বর্তমানে পাঁচ মাসের অন্তঃসত্তা ৷ অভিযোগ, বিয়ের পর থেকেই নানা আছিলায় টুম্পার উপর নির্যাতন চালাত তাঁর স্বামী ও শাশুড়ি ৷ এ নিয়ে পরিবারিক কলহ চলছিলই ৷ আজ দুপুরে সেই কলহের জেরেই টুম্পার পিঠে ফুটন্ত জল ঢেলে দেয় দুলাল (Violence Against Women) ৷ প্রতিবেশীরাই অগ্নিদ্বগ্ধ টুম্পাকে স্থানীয় হরিশ্চন্দ্রপুর গ্রামীণ হাসপাতালে ভরতি করেন ৷ এই ঘটনায় স্বামীর বিরুদ্ধে হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন টুম্পা ৷ তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে দুলালকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ৷
টুম্পা বলেন, "গতকাল আমার শাশুড়ি একটা ক্যানে জল ভরে রেখেছিল ৷ বড় ছেলেটা সেই ক্যান উলটে দিয়েছিল ৷ আমি ফাঁকা ক্যান শাশুড়ির খাটের নীচে রেখে দিয়েছিলাম ৷ আজ সকালে শাশুড়ি ক্যান খুঁজে না-পেয়ে বলতে থাকে, আমি নাকি, ক্যানটা আমার শোকেসে ভরে রেখেছি ৷ এ নিয়ে দুপুরে আমার সঙ্গে শাশুড়ির ঝামেলা হয় ৷ তখন আমি রান্না করছিলাম ৷ শাশুড়ি এ নিয়ে আমার স্বামীকে নালিশ করছিল ৷ তখনই আমার স্বামী আমার গায়ে গরম জল ঢেলে দেওয়ার হুমকি দেয় ৷"
আরও পড়ুন: অর্থ ও সন্তান কামনায় বধূকে খাওয়ানো হল মানবদেহের ছাই ! কাঠগড়ায় স্বামী-সহ আট
তিনি আরও বলেন, "তখন আমি কড়াইয়ে আলু সিদ্ধ করছিলাম ৷ হঠাৎ আমার স্বামী সেই ফুটন্ত জল আমার পিঠে ঢেলে দেয় ৷ মটরশুঁটি ছাড়াতে ব্যস্ত থাকায় আমি সেটা দেখতে পাইনি ৷ যখন শরীর জ্বলে যাচ্ছিল, তখন চিৎকার করে উঠি ৷ পাড়ার লোকজন ছুটে আসলে স্বামী পালানোর চেষ্টা করে ৷ কিন্তু ধরা পড়ে যায় ৷ আমি আর ওর ঘরে আরব থাকতে চাই না ৷" এপ্রসঙ্গে চাঁচল মহকুমা পুলিশ আধিকারিক শুভেন্দু মণ্ডল জানিয়েছেন, অভিযুক্তকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ নির্যাতিতা বধূর অভিযোগের ভিত্তিতে ধৃতের বিরুদ্ধে নির্দিষ্ট ধারায় মামলা রুজু করে পুলিশি তদন্ত শুরু করা হয়েছে ৷"