ETV Bharat / state

কেন্দ্রীয় বাজেটে উপেক্ষিত, বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি মালদার আমচাষিদের - মালদার খবর

প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন রোগের হামলায় গত তিন বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই চাষ । তিন বছরে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 3500 কোটি টাকা । অনেকেই ভেবেছিল, আমচাষের স্বার্থে এগিয়ে আসবে কেন্দ্র । কিন্তু নির্মলা সীতারমনের বাজেটের পর কার্যত নিরাশ হয়েছেন আমচাষীরা ।

Malda news
ছবি
author img

By

Published : Feb 5, 2021, 9:33 PM IST

মালদা, 5 ফেব্রুয়ারি : আশাহত কৃষকরা, আশাহত ব্যবসায়ীরাও । সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছেন। এবারের বাজেটে উত্তরবঙ্গ ও অসমের চা শ্রমিকদের উন্নয়নে 1000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এতে চা শিল্পে জোয়ার আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্র । কিন্তু এবারও ব্রাত্য মালদার আম । এই চাষের জন্য এবারও কোনও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি । ফলে এই জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসলের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চাষি থেকে ব্যবসায়ী মহলে ।

মালদা জেলার অর্থনীতির বুনিয়াদ আমচাষ । জেলায় 31 হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রয়েছে আমবাগান । প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেলার প্রায় 80 শতাংশ মানুষ । কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে আমচাষ । প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন রোগের হামলায় গত তিন বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই চাষ । তিন বছরে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 3500 কোটি টাকা । এই পরিস্থিতিতে সবাই ভেবেছিল, জেলার আমচাষের স্বার্থে এগিয়ে আসবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার । ঘোষণা হতে পারে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের । কিন্তু আশাহত হয়েছে সবাই । সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে এনিয়ে কোনও উচ্চারণ শোনা যায়নি । তবে এবারও চলে এসেছে আমের মরশুম। এখন থেকেই অনেক বাগানে শুরু হয়ে গিয়েছে কীটনাশক স্প্রে'র কাজ। আরও একবার প্রকৃতির ভরসায় ময়দানে নেমে পড়েছেন আমচাষিরা ।

Malda news
বিগত কয়েক বছর ধরেই সেভাবে লাভের মুখ দেখছেন না মালদার আমচাষিরা

পুরাতন মালদার আমচাষি যতীন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, "চাষি হিসাবে আমরা যা করার তা করছি। কিন্তু উৎপাদিত আম কোথায় বিক্রি করব তা ভেবে পাই না । আম বিক্রির কোনও নিশ্চয়তা নেই। আমের রং ঠিক না থাকলে তা বিক্রি হয় না। কী করলে আমরা ভালো বাজার ধরতে পারব কিংবা মালদার আমের সুনাম বাড়াতে পারব, সেবিষয়ে আমাদের কিছু জানানোর জন্য পিছনে লোক থাকা প্রয়োজন। গত তিন বছর ধরে আমরা মার খাচ্ছি। এই অবস্থায় অনেকে আম চাষ বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। প্রতি বছর বলা হয়, মালদার আম বিদেশে যাবে। কিন্তু যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করলে দুই তরফেরই লাভ আছে। কিন্তু আমের মরশুমে কাউকে দেখতে পাওয়া যায় না। কেন্দ্র যদি আমাদের একটু সাহায্য করে তাহলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হব।"

আরও পড়ুন : কীটনাশক প্রয়োগ করে চাষ, মলিন করছে মালদার আমের ভাগ্যলক্ষ্মীকে


ইংরেজবাজার থানা এলাকার আমচাষি অপূর্বকুমার চৌধুরি, মনোতোষ সরকাররা বলছেন, "মালদা জেলার প্রায় 85 শতাংশ মানুষ আমের উপর নির্ভরশীল। গত 3-4 বছর ধরে আমরা আমচাষে প্রচুর ক্ষতির শিকার হয়েছি। নিপা ভাইরাস, কোরোনা ভাইরাস আমাদের চাষে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রকৃতির মার। সব মিলিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট ঘোষণা করেছে। তাতে চা শিল্পে 1000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে চা চাষ নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবে। কিন্তু মালদা-মুর্শিদাবাদ জেলার আমচাষে বাজেটে এক টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি। এতে আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বছরের পর বছর মার খেয়ে কৃষকরা ঋণ নিয়ে কিংবা সোনার গয়না বন্ধক রেখে চাষ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আজ সর্বস্বান্ত। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। তারপরেও সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এই চাষে এবারও কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। সেটা হলে আমচাষিরা ভীষণ উপকৃত হত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমচাষের ক্ষেত্রেও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক। তাতে আমরা খানিকটা বাঁচব। তা না হলে জেলার আমচাষ সামনের দিকে এগোতে পারবে না। পিছতেই থাকবে।"

আরও পড়ুন : কয়েক মিনিটের ঝড়ে আম চাষের সর্বনাশ মালদায়

জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডুর বক্তব্য, "এবার কেন্দ্রীয় সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তাতে মালদা জেলার ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত হতাশ। আম ও রেশমচাষের উপর মালদা জেলার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে এই দুই চাষের উপর কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের বক্তব্য, এই জেলায় উৎপাদিত আমের গুণগত মান ঠিক না থাকায় তা বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। কিন্তু চাষিদের বক্তব্য, আমের গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য কেন্দ্রের তরফে আধুনিক প্যাকেজের প্রয়োজন। এতে আগামী দিনে গোটা রাজ্যে আমকে ভিত্তি করে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হতে পারে কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এদিকে কোনও নজর নেই। এতে এই জেলার অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে। পরপর তিন বছর জেলার আমচাষে 3500 কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলার আম বাইরে যেতে পারেনি। আমরা চাইছি, আমচাষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করুক। মালদা জেলায় তিনজন সাংসদ থাকলেও তাঁরা জেলার আমচাষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও বার্তা দিচ্ছেন না। এটা খুব দুঃখজনক। জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে কারও মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতাই নেই।"

মালদা, 5 ফেব্রুয়ারি : আশাহত কৃষকরা, আশাহত ব্যবসায়ীরাও । সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী বাজেট পেশ করেছেন। এবারের বাজেটে উত্তরবঙ্গ ও অসমের চা শ্রমিকদের উন্নয়নে 1000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এতে চা শিল্পে জোয়ার আসবে বলে মনে করছে কেন্দ্র । কিন্তু এবারও ব্রাত্য মালদার আম । এই চাষের জন্য এবারও কোনও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি । ফলে এই জেলার প্রধান অর্থনৈতিক ফসলের ভবিষ্যৎ কী, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে চাষি থেকে ব্যবসায়ী মহলে ।

মালদা জেলার অর্থনীতির বুনিয়াদ আমচাষ । জেলায় 31 হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে রয়েছে আমবাগান । প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িয়ে রয়েছে জেলার প্রায় 80 শতাংশ মানুষ । কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে প্রবল ক্ষতির মুখে পড়েছে আমচাষ । প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিভিন্ন রোগের হামলায় গত তিন বছর ধরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এই চাষ । তিন বছরে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় 3500 কোটি টাকা । এই পরিস্থিতিতে সবাই ভেবেছিল, জেলার আমচাষের স্বার্থে এগিয়ে আসবে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার । ঘোষণা হতে পারে বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের । কিন্তু আশাহত হয়েছে সবাই । সম্প্রতি কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর ঘোষিত বাজেটে এনিয়ে কোনও উচ্চারণ শোনা যায়নি । তবে এবারও চলে এসেছে আমের মরশুম। এখন থেকেই অনেক বাগানে শুরু হয়ে গিয়েছে কীটনাশক স্প্রে'র কাজ। আরও একবার প্রকৃতির ভরসায় ময়দানে নেমে পড়েছেন আমচাষিরা ।

Malda news
বিগত কয়েক বছর ধরেই সেভাবে লাভের মুখ দেখছেন না মালদার আমচাষিরা

পুরাতন মালদার আমচাষি যতীন্দ্রনাথ পোদ্দার বলেন, "চাষি হিসাবে আমরা যা করার তা করছি। কিন্তু উৎপাদিত আম কোথায় বিক্রি করব তা ভেবে পাই না । আম বিক্রির কোনও নিশ্চয়তা নেই। আমের রং ঠিক না থাকলে তা বিক্রি হয় না। কী করলে আমরা ভালো বাজার ধরতে পারব কিংবা মালদার আমের সুনাম বাড়াতে পারব, সেবিষয়ে আমাদের কিছু জানানোর জন্য পিছনে লোক থাকা প্রয়োজন। গত তিন বছর ধরে আমরা মার খাচ্ছি। এই অবস্থায় অনেকে আম চাষ বন্ধ করে অন্য পেশায় চলে গিয়েছে। প্রতি বছর বলা হয়, মালদার আম বিদেশে যাবে। কিন্তু যায় না। কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করলে দুই তরফেরই লাভ আছে। কিন্তু আমের মরশুমে কাউকে দেখতে পাওয়া যায় না। কেন্দ্র যদি আমাদের একটু সাহায্য করে তাহলে আমরা আর্থিকভাবে লাভবান হব।"

আরও পড়ুন : কীটনাশক প্রয়োগ করে চাষ, মলিন করছে মালদার আমের ভাগ্যলক্ষ্মীকে


ইংরেজবাজার থানা এলাকার আমচাষি অপূর্বকুমার চৌধুরি, মনোতোষ সরকাররা বলছেন, "মালদা জেলার প্রায় 85 শতাংশ মানুষ আমের উপর নির্ভরশীল। গত 3-4 বছর ধরে আমরা আমচাষে প্রচুর ক্ষতির শিকার হয়েছি। নিপা ভাইরাস, কোরোনা ভাইরাস আমাদের চাষে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। এর সঙ্গে রয়েছে প্রকৃতির মার। সব মিলিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সম্প্রতি কেন্দ্রীয় সরকার বাজেট ঘোষণা করেছে। তাতে চা শিল্পে 1000 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এতে চা চাষ নিশ্চিতভাবে উপকৃত হবে। কিন্তু মালদা-মুর্শিদাবাদ জেলার আমচাষে বাজেটে এক টাকাও বরাদ্দ করা হয়নি। এতে আমরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। বছরের পর বছর মার খেয়ে কৃষকরা ঋণ নিয়ে কিংবা সোনার গয়না বন্ধক রেখে চাষ চালিয়ে যাচ্ছে। তারা আজ সর্বস্বান্ত। ঋণ পরিশোধ করতে না পেরে অনেকে আত্মহত্যা পর্যন্ত করেছে। তারপরেও সরকারের কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই। এই চাষে এবারও কোনও প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়নি। সেটা হলে আমচাষিরা ভীষণ উপকৃত হত। সরকারের কাছে আমাদের দাবি, আমচাষের ক্ষেত্রেও আর্থিক প্যাকেজ ঘোষণা করা হোক। তাতে আমরা খানিকটা বাঁচব। তা না হলে জেলার আমচাষ সামনের দিকে এগোতে পারবে না। পিছতেই থাকবে।"

আরও পড়ুন : কয়েক মিনিটের ঝড়ে আম চাষের সর্বনাশ মালদায়

জেলার বণিকসভা, মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অব কমার্সের সম্পাদক জয়ন্ত কুণ্ডুর বক্তব্য, "এবার কেন্দ্রীয় সরকার যে বাজেট ঘোষণা করেছে তাতে মালদা জেলার ব্যবসায়ীরা অত্যন্ত হতাশ। আম ও রেশমচাষের উপর মালদা জেলার অর্থনীতি দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু এবারের কেন্দ্রীয় বাজেটে এই দুই চাষের উপর কোনও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। কেন্দ্রের বক্তব্য, এই জেলায় উৎপাদিত আমের গুণগত মান ঠিক না থাকায় তা বিদেশে রপ্তানি করা যায় না। কিন্তু চাষিদের বক্তব্য, আমের গুণগত মান ঠিক রাখার জন্য কেন্দ্রের তরফে আধুনিক প্যাকেজের প্রয়োজন। এতে আগামী দিনে গোটা রাজ্যে আমকে ভিত্তি করে শিল্প গড়ে উঠতে পারে। লক্ষাধিক কর্মসংস্থান হতে পারে কিন্তু কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর এদিকে কোনও নজর নেই। এতে এই জেলার অর্থনীতি সম্পূর্ণভাবে ভেঙে পড়বে। পরপর তিন বছর জেলার আমচাষে 3500 কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে। জেলার আম বাইরে যেতে পারেনি। আমরা চাইছি, আমচাষের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করুক। মালদা জেলায় তিনজন সাংসদ থাকলেও তাঁরা জেলার আমচাষকে এগিয়ে নিয়ে যেতে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে কোনও বার্তা দিচ্ছেন না। এটা খুব দুঃখজনক। জেলার সামগ্রিক উন্নয়নে কারও মধ্যে একসঙ্গে কাজ করার মানসিকতাই নেই।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.