ETV Bharat / state

No Permission to Enter Village: রাস্তা তৈরি না-হওয়ায় নেতা-মন্ত্রীদের গ্রামে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা গ্রামবাসীদের - পুরাতন মালদা ব্লক

মন্ত্রী এবং নেতাদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না। পঞ্চায়েত ভোটের আগে এই মর্মে দেওয়াল লিখলেন গ্রামবাসীরা । মালদার মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশিপাড়া এলাকার বাসিন্দারা তাঁদের রাস্তা তৈরি না-হওয়ায় কোনও নেতা বা মন্ত্রীকে গ্রামে ঢুকতে দেবেন না বলে জানিয়েছেন (Political Leaders and Ministers Have No Permission to Enter Village) ৷

No Permission to Enter Village
দেওয়ালে লিখে নেতা মন্ত্রীদের গ্রামে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা
author img

By

Published : Jan 23, 2023, 11:05 PM IST

দেওয়ালে লিখে নেতা মন্ত্রীদের গ্রামে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা

মালদা, 23 জানুয়ারি: গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ ঝাঁ চকচকে ৷ কিন্তু সেই রাস্তার ধারে থাকা এই গ্রামে বসতি স্থাপনের পর কোনও রাস্তাই তৈরি হয়নি ৷ 70-80 বছর ধরে কাঁচা রাস্তাতেই যাতায়াত করেন পুরাতন মালদা ব্লকের (Old Malda Block) মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশিপাড়া গ্রামের শ’দেড়েক পরিবারের সদস্যরা ৷ চলার মতো রাস্তা তৈরির দাবিতে বহুবার পঞ্চায়েতে হত্যে দিয়েছেন তাঁরা ৷ আবেদন জানিয়েছেন ব্লক অফিসেও ৷ কিন্তু তাতেও কাজ না-হওয়ায় দু'বার জাতীয় সড়ক অবরোধও করেছেন ৷ পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের বিডিওর কাছে নিয়ে গিয়েছে ৷ বিডিও গ্রামে রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতিকে ৷ কিছুদিন আগেও গ্রামবাসীদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এবার রাস্তা হবে ৷ টেন্ডারের তালিকায় সেই রাস্তা ধরা রয়েছে ৷ কিন্তু পরে গ্রামের সবাই জানতে পারেন, তাঁদের মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷

তাই এবার এককাট্টা হয়েছেন সবাই ৷ গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দেওয়া হয়েছে, "এখানে নেতা-মন্ত্রীদের প্রবেশ নিষেধ ৷" শুধু তাই নয়, এবার গ্রামকে পঞ্চায়েত ভোটের আঙিনা থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যকেও এখন কার্যত পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ৷ পাশিপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের 90 শতাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের ৷ কেউ দিনমজুর, কেউ সবজি বিক্রেতা ৷ গ্রামে বিদ্যুতের তার গিয়েছে ৷ কিন্তু পায়ের তলায় পাকা রাস্তা নেই ৷

এনিয়ে ক্ষিপ্ত উমা চৌধুরী নামে এক গ্রামবাসী ৷ তাঁর সাফ কথা, "কোনও নেতা-মন্ত্রী গ্রামে আসলে আমি ওদের ঝাঁটার বাড়ি মারব ৷ কেন এতদিনেও আমাদের রাস্তা হচ্ছে না? রাস্তা তৈরি না-করে গ্রামে যাতে কোনও নেতা-মন্ত্রী না-ঢোকে, তার জন্য আমরা গ্রামের সবাই এক হয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দিয়েছি ৷ একের পর এক ভোট হয়েছে, রাস্তা আর হয়নি ৷ রাস্তার জন্য পথ অবরোধ করেছি ৷ পুলিশও রাস্তা তৈরির আশ্বাস দিয়েছিল ৷ সেই আশ্বাসে আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু কতবার আমরা পথ অবরোধ করব! এই গ্রামে কেউ ভোট চাইতে এলেই বলব, রাস্তা না-তৈরি করে কেন গ্রামে ঢুকেছ ৷ রাস্তা তৈরি হলেই আমরা ভোট দেব ৷"

গ্রামের আরেক বাসিন্দা সনাতন চৌধুরী বলেন, "পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে ৷ গ্রামে গ্রামে নেতা-মন্ত্রীরাও ঢুকতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু আমরা এই গ্রামে কোনও নেতা-মন্ত্রীকে ঢুকতে দেব না ৷ কারণ, এতদিনেও আমাদের গ্রামের রাস্তা তৈরি হয়নি ৷ শুধু মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ৷ রাস্তার দাবিতে এর আগে দু'বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছি ৷ বিডিওর কাছে গিয়েছি ৷ মালদা থানার আইসি আমাদের বিডিওর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ বিডিও আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হারেজ আলিকে ডেকে রাস্তা তৈরি করে দিতে বলেছিলেন ৷ কিছুদিন পর বিভিন্ন কাজের টেন্ডার হল ৷ হারেজ আলি জানালেন, সেই কাজের তালিকায় আমাদের গ্রামের রাস্তাও রয়েছে ৷ পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে গিয়ে জানতে পারি, ওই তালিকায় আমাদের গ্রামের রাস্তা নেই ৷ তাই আমরা গ্রামের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার এই গ্রামে কোনও ভোট হবে না ৷ নেতা-মন্ত্রীরাও ঢুকবে না ৷"

আরও পড়ুন: চড়কাণ্ডে ড্যামেজ কন্ট্রোল, সাইবনা মন্দির সংলগ্ন রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ

পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি হারেজ আলি বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন ৷ তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি জানিয়েছেন, "ঘটনাটি আমি জানি ৷ এর আগেও ওই গ্রামের রাস্তা নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে ৷ গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত দফতরেও অভিযোগ জমা করেছিলেন ৷ কিন্তু সমস্যাটা হল, ওই গ্রামের বাসিন্দারা যাঁকে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন, তিনি বিজেপির ছিলেন ৷ তিনি এলাকার উন্নয়নে কোনও কাজই করেননি ৷ পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে মানুষের কাজ করছেন ৷ আমরা গ্রামবাসীদের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি ৷ যেহেতু আমাদের অ্যানুয়াল অ্যাকশন প্ল্যান আগেই তৈরি হয়ে যায়, তাই আগের তালিকায় এই রাস্তাকে যুক্ত করা যায়নি ৷ তার উপর কেন্দ্রীয় সরকার 100 দিনের কাজের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থে মানুষের জন্য অন্তত 50 শতাংশ কাজ তৈরি করতে হবে ৷ তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও রয়েছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি সেই টেন্ডার হতে চলেছে ৷ এক মাসের মধ্যেই ওই গ্রামে রাস্তা তৈরি করা হবে ৷"

দেওয়ালে লিখে নেতা মন্ত্রীদের গ্রামে ঢোকায় নিষেধাজ্ঞা

মালদা, 23 জানুয়ারি: গ্রামের পাশ দিয়েই গিয়েছে 12 নম্বর জাতীয় সড়ক ৷ ঝাঁ চকচকে ৷ কিন্তু সেই রাস্তার ধারে থাকা এই গ্রামে বসতি স্থাপনের পর কোনও রাস্তাই তৈরি হয়নি ৷ 70-80 বছর ধরে কাঁচা রাস্তাতেই যাতায়াত করেন পুরাতন মালদা ব্লকের (Old Malda Block) মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের পাশিপাড়া গ্রামের শ’দেড়েক পরিবারের সদস্যরা ৷ চলার মতো রাস্তা তৈরির দাবিতে বহুবার পঞ্চায়েতে হত্যে দিয়েছেন তাঁরা ৷ আবেদন জানিয়েছেন ব্লক অফিসেও ৷ কিন্তু তাতেও কাজ না-হওয়ায় দু'বার জাতীয় সড়ক অবরোধও করেছেন ৷ পুলিশ এসে গ্রামবাসীদের বিডিওর কাছে নিয়ে গিয়েছে ৷ বিডিও গ্রামে রাস্তা নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছেন পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতিকে ৷ কিছুদিন আগেও গ্রামবাসীদের তিনি আশ্বস্ত করেছেন, এবার রাস্তা হবে ৷ টেন্ডারের তালিকায় সেই রাস্তা ধরা রয়েছে ৷ কিন্তু পরে গ্রামের সবাই জানতে পারেন, তাঁদের মিথ্যে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে ৷

তাই এবার এককাট্টা হয়েছেন সবাই ৷ গ্রামের দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দেওয়া হয়েছে, "এখানে নেতা-মন্ত্রীদের প্রবেশ নিষেধ ৷" শুধু তাই নয়, এবার গ্রামকে পঞ্চায়েত ভোটের আঙিনা থেকে দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গ্রামবাসীরা ৷ পরিস্থিতি এতটাই জটিল যে গ্রামের পঞ্চায়েত সদস্যকেও এখন কার্যত পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে ৷ পাশিপাড়া গ্রামের বাসিন্দাদের 90 শতাংশই নিম্নবিত্ত পরিবারের ৷ কেউ দিনমজুর, কেউ সবজি বিক্রেতা ৷ গ্রামে বিদ্যুতের তার গিয়েছে ৷ কিন্তু পায়ের তলায় পাকা রাস্তা নেই ৷

এনিয়ে ক্ষিপ্ত উমা চৌধুরী নামে এক গ্রামবাসী ৷ তাঁর সাফ কথা, "কোনও নেতা-মন্ত্রী গ্রামে আসলে আমি ওদের ঝাঁটার বাড়ি মারব ৷ কেন এতদিনেও আমাদের রাস্তা হচ্ছে না? রাস্তা তৈরি না-করে গ্রামে যাতে কোনও নেতা-মন্ত্রী না-ঢোকে, তার জন্য আমরা গ্রামের সবাই এক হয়ে দেওয়ালে দেওয়ালে লিখে দিয়েছি ৷ একের পর এক ভোট হয়েছে, রাস্তা আর হয়নি ৷ রাস্তার জন্য পথ অবরোধ করেছি ৷ পুলিশও রাস্তা তৈরির আশ্বাস দিয়েছিল ৷ সেই আশ্বাসে আমরা অবরোধ তুলে নিয়েছিলাম ৷ কিন্তু কতবার আমরা পথ অবরোধ করব! এই গ্রামে কেউ ভোট চাইতে এলেই বলব, রাস্তা না-তৈরি করে কেন গ্রামে ঢুকেছ ৷ রাস্তা তৈরি হলেই আমরা ভোট দেব ৷"

গ্রামের আরেক বাসিন্দা সনাতন চৌধুরী বলেন, "পঞ্চায়েত ভোট এগিয়ে আসছে ৷ গ্রামে গ্রামে নেতা-মন্ত্রীরাও ঢুকতে শুরু করেছে ৷ কিন্তু আমরা এই গ্রামে কোনও নেতা-মন্ত্রীকে ঢুকতে দেব না ৷ কারণ, এতদিনেও আমাদের গ্রামের রাস্তা তৈরি হয়নি ৷ শুধু মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে ৷ রাস্তার দাবিতে এর আগে দু'বার জাতীয় সড়ক অবরোধ করেছি ৷ বিডিওর কাছে গিয়েছি ৷ মালদা থানার আইসি আমাদের বিডিওর কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন ৷ বিডিও আমাদের পঞ্চায়েত সমিতির সদস্য হারেজ আলিকে ডেকে রাস্তা তৈরি করে দিতে বলেছিলেন ৷ কিছুদিন পর বিভিন্ন কাজের টেন্ডার হল ৷ হারেজ আলি জানালেন, সেই কাজের তালিকায় আমাদের গ্রামের রাস্তাও রয়েছে ৷ পরে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতির কাছে গিয়ে জানতে পারি, ওই তালিকায় আমাদের গ্রামের রাস্তা নেই ৷ তাই আমরা গ্রামের সবাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, এবার এই গ্রামে কোনও ভোট হবে না ৷ নেতা-মন্ত্রীরাও ঢুকবে না ৷"

আরও পড়ুন: চড়কাণ্ডে ড্যামেজ কন্ট্রোল, সাইবনা মন্দির সংলগ্ন রাস্তা সংস্কারের উদ্যোগ

পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি হারেজ আলি বিষয়টি নিয়ে সংবাদমাধ্যমকে এড়িয়ে গিয়েছেন ৷ তবে পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মৃণালিনী মণ্ডল মাইতি জানিয়েছেন, "ঘটনাটি আমি জানি ৷ এর আগেও ওই গ্রামের রাস্তা নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে ৷ গ্রামবাসীরা পঞ্চায়েত দফতরেও অভিযোগ জমা করেছিলেন ৷ কিন্তু সমস্যাটা হল, ওই গ্রামের বাসিন্দারা যাঁকে পঞ্চায়েত সদস্য নির্বাচিত করেছিলেন, তিনি বিজেপির ছিলেন ৷ তিনি এলাকার উন্নয়নে কোনও কাজই করেননি ৷ পরে তিনি তৃণমূলে যোগ দিয়ে মানুষের কাজ করছেন ৷ আমরা গ্রামবাসীদের অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিয়েছি ৷ যেহেতু আমাদের অ্যানুয়াল অ্যাকশন প্ল্যান আগেই তৈরি হয়ে যায়, তাই আগের তালিকায় এই রাস্তাকে যুক্ত করা যায়নি ৷ তার উপর কেন্দ্রীয় সরকার 100 দিনের কাজের টাকা পাঠানো বন্ধ করে দিয়েছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী আমাদের বলেছেন, পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের অর্থে মানুষের জন্য অন্তত 50 শতাংশ কাজ তৈরি করতে হবে ৷ তার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাও রয়েছে ৷ খুব তাড়াতাড়ি সেই টেন্ডার হতে চলেছে ৷ এক মাসের মধ্যেই ওই গ্রামে রাস্তা তৈরি করা হবে ৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.