মালদা, 3 নভেম্বর: সরকারি অর্থের অপচয়! সবুজ সাথীর সাইকেল নিয়ে সেই প্রশ্নই উঠেছে মালদায় ৷ বিভিন্ন স্কুলে পড়ে রয়েছে এই প্রকল্পের নতুন সাইকেল ৷ অব্যবহারে মরচেও ধরেছে সেসবে ৷ শুধুমাত্র পুরাতন মালদার কালাচাঁদ হাইস্কুলেই পড়ে নষ্ট হচ্ছে শতাধিক নতুন সাইকেল ৷ এনিয়ে রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে ৷ বিষয়টি যে সমস্যার, তা স্বীকার করে নিচ্ছে প্রশাসন ৷
কেন সরকারি প্রকল্পের সাইকেল পড়ুয়াদের বিলি না করে স্কুলে অযত্নে ফেলে রাখা হয়েছে? কালাচাঁদ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক রাহুলরঞ্জন দাস বলেন, "সবুজ সাথী প্রকল্প চালুর পর আট দফায় সাইকেল দেওয়া হয়েছে ৷ প্রতিবারই সাইকেল বেঁচে যায় ৷ প্রথমে সব বাচ্চার নামই এই প্রকল্পের জন্য পাঠানো হত ৷ যখন সাইকেল আসত, তখন অনেক বাচ্চা পড়া ছেড়ে দিত ৷ পরবর্তীতে সরকার আমাদের কাছে পাঠরত পড়ুয়াদের নাম জানতে চায় ৷ দু’দফা ধরে আমরা সেই অনুযায়ী নাম পাঠাচ্ছি ৷ সেই তালিকা অনুযায়ী সাইকেল আসে ৷ কিন্তু করোনা পরবর্তী সময়ে কিছু ছেলে পরিযায়ী শ্রমিকের পেশায় ঢুকে পড়েছে ৷ তার সাইকেল স্কুলে থেকে যাচ্ছে ৷ তাদের বাড়িতে আমরা যোগাযোগ করছি ৷ কিন্তু আইন অনুযায়ী আমরা পরিবারের সদস্যদের সাইকেল দিতে পারব না ৷ এভাবেই স্কুলে সাইকেল জমছে ৷ সাইকেল ফেরত দেওয়ার জন্য আমি বিডিওকে চিঠি দিয়েছিলাম ৷ সবুজ সাথী প্রকল্পে দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিককেও জানিয়েছি ৷ তাঁরা গাড়ি পাঠিয়ে দিলে আমি সাইকেলগুলি ফেরত দিয়ে দেব ৷"
পুরাতন মালদার বিডিও সেজুঁতি পাল মাইতি বলেন, "কোন স্কুলে কত সাইকেল পড়ে রয়েছে, তা জানতে আমরা বেশ কিছু স্কুলকে চিঠি পাঠিয়েছিলাম ৷ স্কুলগুলি যে তালিকা আমাদের পাঠায়, সেই অনুযায়ী সাইকেল আসে ৷ পরে দেখা যায়, ছাত্র-ছাত্রীরা অনেকে পড়া ছেড়ে দিয়েছে ৷ এতেই সাইকেল বাড়তি হয়ে যায় ৷ উপরমহলের নির্দেশ রয়েছে, যে স্কুলে যত সাইকেল অতিরিক্ত রয়েছে, সেগুলি তারাই সযত্নে রেখে দেবে ৷ পরে নতুন সাইকেল অ্যালটমেন্টের সময় এই উদ্বৃত্ত সাইকেল অ্যাডজাস্টমেন্ট করে দেওয়া হবে ৷ সাইকেল খারাপ হলে আমাদের তরফেই তা সারিয়ে পড়ুয়াদের দেওয়া হবে ৷"
এই ঘটনা নিয়ে শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর ৷ এলাকার বিজেপি বিধায়ক গোপালচন্দ্র সাহার দাবি, "রাজ্য সরকারের যত শ্রী আর সাথী প্রকল্প রয়েছে, সবই কেন্দ্রের টাকায় ৷ শুধু মোড়ক পালটে সবটাই এখানে নিজেদের বলে চালাচ্ছে রাজ্য সরকার ৷ আসলে এত নিম্নমানের সাইকেল পড়ুয়ারা ব্যবহার করতে পারছে না ৷ তাই স্কুল থেকে পাওয়ার পর 200-300 টাকায় সাইকেল বিক্রি করে দিচ্ছে ৷ তদন্ত হলে এখানেও দুর্নীতি বেরিয়ে আসবে ৷ সম্ভবত সেই কারণেই রাজ্যের সবুজ সাথী প্রকল্পের সাইকেল অসম থেকে সম্প্রতি উদ্ধার হয়েছে ৷"
আরও পড়ুন: মোবাইলে অ্যাপ ডাউনলোড করতেই ফাঁকা অ্যাকাউন্ট, সাইবার প্রতারণার শিকার মালদার যুবক
বিধায়কের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় পুরাতন মালদা পৌরসভার চেয়ারম্যান কার্তিক ঘোষ জানান, পড়ুয়াদের সংখ্যা পোর্টালে দেখেই সরকার প্রতিটি স্কুলে সবুজ সাথীর সাইকেল পাঠায়৷ কিন্তু ড্রপ আউটের জন্য সব সাইকেল বিলি করা যায় না ৷ হয়তো তার জন্যই স্কুলে সাইকেল থেকে যায় ৷ বিজেপির কাজ শুধু দুর্নীতি দেখা ৷ বাংলায় উন্নয়নের কাজ একমাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় করেছেন ৷ গোটা পৃথিবীতে সেই উন্নয়ন প্রশংসিত হয়েছে ৷ বিজেপি রাজ্যের উন্নয়ন স্তব্ধ করে দিতে চায় ৷