মালদা, 16 জুন : করোনার জন্য দু’বছর বন্ধ ছিল ইতিহাস প্রসিদ্ধ মালদার রামকেলি মেলা (crowd overflowed at Ramkeli fair in Malda)। ভাইরাসের দাপটে গত দু’বছর হাতে গোনা কিছু বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীই কেবল এই গুপ্ত বৃন্দাবনে এসেছিলেন । মাতৃকূলের উদ্দেশ্যে মহিলাদের পিণ্ডদানের ছবিও সেভাবে দেখা যায়নি ।
কিন্তু এবার করোনা পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই ভিড় বেড়েছে মেলায় ৷ বৃহস্পতিবার মেলা পরিদর্শনে গিয়ে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদব জানান, প্রায় দু’লাখ পুণ্যার্থী মেলায় এসেছেন । বুধবার সংখ্যাটি আরও বেশি ছিল । শুক্রবার প্রশাসনিকভাবে মেলার শেষ দিন । তাই অনুমান শেষদিন মেলায় প্রায় দু’লাখ মানুষের সমাগম হবে ।
মেলায় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করতে পুলিশের তরফে বৃহস্পতিবার রামকেলিতে যাতায়াতের দুটি মুখ বন্ধ করে দেওয়া হয় । শুধুমাত্র পায়ে হেঁটেই পুণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা মেলায় ঢুকতে পেরেছেন । প্রবল ভিড়ে পুলিশকর্তারাও গাড়ি নিয়ে মেলায় যেতে পারেননি । তাঁদেরও হেঁটেই মেলায় ঢুকতে হয়েছে । তীব্র গরমে মেলায় কয়েকজন অসুস্থও হয়ে পড়েন । পুলিশ ও মেলা উদ্যোক্তাদের তরফে তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ।
আরও পড়ুন : Mimi Chakraborty at fair: মেলায় গিয়ে ছোটবেলায় ফিরলেন মিমি, সঙ্গী টিম মিনি
রামকেলি মেলার অন্যতম বিশেষত্ব, এখানে মহিলারা তাঁদের মাতৃকূলের প্রয়াত সদস্যাদের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেন । সেকারণে রামকেলির আরেক নাম মাতৃগয়া । কবে থেকে এই প্রথা চলে আসছে জানা নেই । তবে কথিত রয়েছে, ত্রেতা যুগ থেকেই এই রীতি চালু রয়েছে । সীতাই প্রথম এই প্রথা চালু করেন । মেলা শুরুর দিন অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিনই এই পিণ্ডদান হয়ে থাকে । তবে এবার পরের দিনও সেই পর্ব চলছে । ভিড়ের জন্য বুধবার অনেকেই পিণ্ডদান করতে পারেননি । তাঁরা বৃহস্পতিবার সেই কাজ করছেন ।
যে মন্দিরে এই পিণ্ডদানের পর্ব চলে, তার নাম গয়েশ্বরী মন্দির । সেখানে এসে উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরের বাসিন্দা মুনা শর্মা বলেন, "বুধবার এখানে এসেছি । আমাদের সৃষ্টি এখানে । তাই আমাদের এখানে আসতেই হবে । আমরা এখানে না আসলে আসবে কে ? আজকের দিনটা মেলাতেই কাটাব । আগামিকাল ঘরে ফিরব ।"
আরও পড়ুন : Panihati Fair Chaos : পানিহাটিতে দই-চিঁড়ের মেলায় ভিড়ের চাপে মৃত 4, শোকপ্রকাশ মুখ্যমন্ত্রীর
বিহারের কিষনগঞ্জ থেকে রামকেলি এসেছেন দিলীপ রায় । গেরুয়া বসন, হাতে ত্রিশূল । তাঁর কথায়, "আজ এখানে গুরুর আসন দিয়েছিলাম । আগে আমরা দুই সাধু আসতাম । কিন্তু আমার গুরুভাই এখন আর নেই । তাই এবার একাই এসেছি । গয়েশ্বরী মন্দিরে গয়ার কাজ করা যায় । এখানে মহিলারা তাঁদের মাতৃকূলের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেন । মহিলাদের পিণ্ডদানে বাধা কোথায় ? মা সীতাও তো দিয়েছিলেন । তাতেই তো গয়ার সৃষ্টি । এই মাতৃগয়ায় প্রতিবার আসি ।"
গয়েশ্বরী মন্দিরের সেবাইত বৈদ্যনাথ মণ্ডল জানান, ভারতবর্ষে শুধুমাত্র গুপ্ত বৃন্দাবনেই মহিলারা মাতৃকূলের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেন । দেশের বিভিন্ন অংশ থেকে মা-বোনেরা এখানে পিণ্ডদান করতে আসেন । গয়ার পুণ্য এখানেই পেয়ে যান তাঁরা । বিধি অনুযায়ী জ্যৈষ্ঠ মাসের শেষ দিনেই পিণ্ডদান হয়ে থাকে । কিন্তু এবার পরের দিনও সেই কাজ হচ্ছে । গতকাল প্রায় 25 হাজার পিণ্ডদান হয়েছে । আজ এখনও পর্যন্ত প্রায় 500 মা-বোন তাঁদের মাতৃকূলের উদ্দেশ্যে পিণ্ডদান করেছেন ।
আরও পড়ুন : Vaidyanatha Mela : ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে শুরু শতবর্ষ পুরনো বৈদ্যনাথ মেলা