মালদা, 21 ফেব্রুয়ারি: কোরোনা ভাইরাস নিয়ে গুজব ৷ সোশাল মিডিয়ায় ইতিউতি নজর ঘোরালেই চোখে পড়ছে হাজার রকম গুজব ৷ তাতে রীতিমতো নিদানও দেওয়া রয়েছে কী খাবেন আর কী খাবেন না ৷ পোলট্রি মুরগির মাংস খাওয়া একবারে বন্ধ করতে বলা হয়েছে আগামী এক মাসের জন্য ৷ আর এর মধ্যে অধিকাংশ পোস্টই ভিত্তিহীন ৷ কিন্তু কোরোনা আতঙ্ক এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে মানুষও এই সব পোস্টও বিশ্বাস করছে চোখ বন্ধ করেই ৷ আর এর জেরেই প্রায় ব্যবসা লাটে ওঠার অবস্থা মালদার মুরগির মাংস বিক্রেতাদের ৷
কোনও পোস্টে বলা হয়েছে আগামী এক মাস মদ, গাঁজা খাওয়া বন্ধ করতে ৷ কোনও পোস্টে আবার জোর দিয়েছে বলা হয়েছে মুরগির মাংস থেকেই না কি কোরোনা ভাইরাস সংক্রমণ হচ্ছে ৷ তাই বন্ধ করতে হবে পোলট্রির মুরগির মাংস খাওয়া ৷ সোশাল মিডিয়ায় একের পর এক ভিত্তিহীন পোস্ট ৷ এমন কী রঞ্জন ডি সিলভা নামে এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, এই রোগ না কি মালদার রথবাড়ি এলাকায় ঢুকে পড়েছে গাঁজা, মদ আর মাংসের মাধ্যমে ৷ আর এই ভুয়ো বার্তার জেরেই মাংসের দোকানমুখী হতেই চাইছেন না জেলার বেশিরভাগ মানুষ ৷ ফলেই ক্ষতির মুখে মাংস ব্যবসায়ীরা ৷ ঘটনায় প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবি তুলেছেন তাঁরা ৷ এদিকে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ও মালদা মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যক্ষ সোশাল মিডিয়ায় প্রচার করেছেন, "এমন কোনও ঘটনা মালদায় ঘটেনি৷ কেউ যেন গুজবে কান দেবেন না ৷" পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, "কে বা কারা এই গুজব ছড়িয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে ৷"
গতকাল মালদার বেশিরভাগ পোলট্রি মুরগির দোকানই ছিল ফাঁকা৷ অনেক জায়গায় দোকান পর্যন্ত খোলেননি ব্যবসায়ীরা ৷ শহরের মূল বাজার, নেতাজি পৌর মার্কেটেও পোলট্রি মুরগির দোকানগুলিতেও খদ্দেরের দেখা নেই ৷ সেখানকার ব্যবসায়ী স্বপনকুমার দাস বলেন, "আগের তুলনায় 75 শতাংশ ব্যবসা কমে গিয়েছে ৷ দিনে দু’চারজন সাধারণ খদ্দের, আর কয়েকটি হোটেলে শুধু মাংস যাচ্ছে ৷ ফলে কোনওরকমে নুন-ভাত জুটছে৷ আগে প্রতিদিন প্রায় 30 কিলো গোটা মুরগি, তার সঙ্গে 15 কিলো মাংস বিক্রি করতাম৷ এখন হোটেলগুলিতেও আগের মতো মাংস নিচ্ছে না৷ আগে যেখানে পাঁচ কিলো মাংস নিত, এখন নিচ্ছে দেড় কিলো৷ এখন সারাদিনে পাঁচ থেকে সাত কিলোর বেশি মাংস বিক্রি হচ্ছে না৷ এই অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার৷ এই গুজবের জেরে ক্ষতিগ্রস্ত পাইকারি ব্যবসায়ীরাও৷ মাংসের দাম কমাতেও বাধ্য হয়েছি৷ আগে কিলোপ্রতি ১৮০ টাকা দাম ছিল৷ এখন ১৫০ টাকা কিলোয় দাম নেমে এসেছে ৷ ব্যবসা আর পেট চালানোর জন্য ক্ষতি স্বীকার করেও মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে ৷ অথচ এনিয়ে সরকারিভাবে কোনও নির্দেশিকা জারি হয়নি৷ আমরা সোশ্যাল মিডিয়ার গুজবের শিকার৷ আতঙ্কে মানুষ মুরগির মাংস খাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে৷ আমরা চাই, আমাদের ব্যবসা আবার আগের জায়গায় ফিরে আসুক৷" একই বক্তব্য আরেক পোলট্রি মুরগি ব্যবসায়ী নুর আলমেরও৷ তিনি বলেন, "এই গুজবে আমাদের ব্যবসা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ আগের থেকে অনেক কম দামে মুরগি বিক্রি করতে হচ্ছে৷ ফলে ক্ষতিও হচ্ছে বেশ ভালো৷ অথচ প্রশাসন থেকে এসব নিয়ে কিছু বলা হয়নি৷ আমরা চাই, ব্যবসা স্বাভাবিক করতে প্রশাসন ব্যবস্থা গ্রহণ করুক৷ আর যারা এই গুজব সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক ৷"
গতকাল জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক বিজয়প্রসাদ মুখোপাধ্যায়কে পাওয়া যায়নি ৷ তবে মালদা মেডিকেলের সহকারী অধ্যক্ষ ও হাসপাতাল সুপার অমিত দাঁ এনিয়ে বলেন, "কোরোনা ভাইরাস নিয়ে একটা গুজব সোশাল মিডিয়ায় ছড়ানোর চেষ্টা হয়েছিল ৷ বলা হয়েছিল, আমাদের হাসপাতালে না কি করোনা ভাইরাসের পজ়িটিভ কেস পাওয়া গিয়েছে ৷ কিন্তু সেটা পুরোপুরি ভুল ৷ সমস্তটাই গুজব ৷ এনিয়ে আমরা পুলিশকে জানিয়েছি ৷ পুলিশ বিষয়টি নিয়ে তদন্তও করছে ৷ এনিয়ে আমি এবং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সোশাল মিডিয়াতেই প্রতিবাদ জানিয়েছি ৷ আমরা যৌথভাবে স্বাক্ষর করা প্রতিবাদপত্র সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছি ৷ সাধারণ মানুষকে সচেতন করতেই আমাদের এই সিদ্ধান্ত ৷ এই জেলা কিংবা রাজ্যে এখনও পর্যন্ত কেউ কোরোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হননি ৷ আর পোলট্রি চিকেন নিয়ে যে বার্তা সোশাল মিডিয়ায় ছড়িয়েছে, সেটাও পুরোপুরি মিথ্যে ৷ পুরোটাই গুজব৷ আমি নিজেও পোলট্রি চিকেন খাই ৷ যে কোনও মানুষ নির্ভয়ে পোলট্রি চিকেন খেতে পারেন ৷"