মালদা, 13 নভেম্বর: মানবতা যখন সামনে এগিয়ে আসে, অনেক পিছিয়ে পড়ে ধর্মীয় সংকীর্ণতা ৷ আবারও তার উদাহরণ মিলল মালদায় ৷ এক ভবঘুরের অসুস্থতা এবং মৃত্যু, মিলিয়ে দিল দুই সম্প্রদায়কে ৷ ওই ভবঘুরেকে সুস্থ করতে প্রথমে এগিয়ে এসেছিলেন হিন্দু-মুসলিম দুই সম্প্রদায়ের মানুষ, তাঁর মৃত্যুর পরেও দুই সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা মিলেই তাঁর সৎকারে অংশ নেন ৷ ঘটনাটি ঘটেছে ইংরেজবাজার ব্লকের যদুপুর 1 নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের যদুপুর গ্রামে ৷ ভবঘুরের মৃত্যুতে এখন স্বজন খোয়ানোর শোক ওই গ্রামে ৷
1997 সাল ৷ কোথা থেকে এক ভবঘুরের উদয় হয় যদুপুর গ্রামে ৷ এই গ্রামেই থাকতে শুরু করেন তিনি ৷ ধীরে ধীরে গ্রামবাসীদের কাছেও পরিচিত হয়ে ওঠেন ৷ নিজের নাম বলতেন দুর্গা ৷ কিন্তু এর বেশি নিজের কোনও পরিচয় তিনি দিতে পারতেন না ৷ হিন্দিভাষী এই ভবঘুরে আর যদুপুর গ্রাম ছেড়ে কোথাও যাননি ৷ স্থানীয় মানুষজন যা খেতে দিতেন, তাই খেতেন ৷ প্রথম দিকে রাতে গ্রামবাসীদের বারান্দাতেই রাত কাটাতেন ৷ পরে গ্রামের সবাই তাঁকে একটি ছোট কুঁড়েঘর তৈরি করে দেন ৷ তখন থেকে সেখানেই থাকতে শুরু করেন তিনি ৷
তাঁর জামাকাপড় থেকে চুল-দাড়ি কাটার দায়িত্বও গ্রামবাসীরা নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন ৷ দীর্ঘ কয়েক বছরেও তিনি সুস্থ হয়ে ওঠেননি ৷ সম্প্রতি তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে গত পরশু অসুস্থ দুর্গাকে মালদা মেডিক্যালে ভরতি করেন গ্রামবাসীরা ৷ স্থানীয় মহম্মদ রানাউল ইসলাম বলেন, "গত পরশু রাত 12টার সময় আমরা তড়িঘড়ি দুর্গাকে মালদা মেডিক্যালে ভরতি করি ৷ চিকিৎসকরা জানালেন, ওকে কোনও কুকুর কামড়েছে ৷ জলাতঙ্ক হয়েছে ৷ আজ, সোমবার বেলা 12টা নাগাদ ও মারা যায় ৷"
তিনি আরও বলেন, "প্রশাসনকে জানিয়েছি ৷ ও যেহেতু নিজের নাম দুর্গা বলত, তাই শ্মশানেই ওর সৎকার্য করা হবে ৷ আমাদের গ্রামের মুসলিম সমাজ তো আছেই, পাশের হিন্দু গ্রামের মানুষজনও দুর্গার মৃত্যুর খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়েছে ৷ আমরা দুই সম্প্রদায়ের মানুষ এখন ওর শেষকৃত্যের কাজ করব ৷ দুই সম্প্রদায়ের মানুষ মিলেই আমরা ওর শ্রাদ্ধের যাবতীয় অনুষ্ঠান সম্পন্ন করব ৷" এক গ্রামবাসীর কথায়, "আজ বিকেল চারটে নাগাদ জানতে পারি, দুর্গা মারা গিয়েছে ৷ আমরা হিন্দু-মুসলমান সবাই মিলে এখন ওকে শেষকৃত্যর জন্য নিয়ে যাচ্ছি ৷"
আরও পড়ুন: