মালদা, ৫ মার্চ : পরীক্ষার হলে সিট নম্বর অনুযায়ী নয়, পরীক্ষার্থীদের নিজেদের ইচ্ছেমতো বসতে দিতে হবে। করতে দিতে হবে নকলও। পরীক্ষার্থীদের এই আবদার স্বাভাবিকভাবেই মেনে নেননি শিক্ষকরা। তার জেরে পরীক্ষা শেষের পর কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল পুরোনো মালদার সাহাপুর হাইস্কুল। পরীক্ষার্থীরা স্কুল চত্বরে তাণ্ডব চালালেও প্রথমদিকে বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায় পুলিশকে। পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার সুযোগ নিয়ে পরীক্ষার্থীরা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। পরীক্ষার খাতা লুটেরও চেষ্টা করে। সেই ছবি তুলতে গিয়ে আক্রান্ত হয় সংবাদমাধ্যমও। পরে আরও পুলিশ ঘটনাস্থানে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। খবর পেয়ে স্কুলে যান মালদার BDO জয়িতা খাটুয়া ও মালদা থানার IC শান্তিনাথ পাঁজা। এই ঘটনার পর নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন ওই স্কুলের শিক্ষকরা।
আজ উচ্চমাধ্যমিকে অঙ্ক ও ইতিহাস পরীক্ষা ছিল। সাহাপুর হাইস্কুলে এবার সিট পড়েছে স্থানীয় ওসমানিয়া হাই মাদ্রাসার পরীক্ষার্থীদের। ওই মাদ্রাসা থেকে বেশ কিছু বহিরাগত পরীক্ষার্থীও পরীক্ষা দিয়েছে। বহিরাগতদের মধ্যে রয়েছে কালিয়াচকের একটি মিশনের পরীক্ষার্থীরাও। আজ তারাই পরীক্ষাকেন্দ্রে হামলা চালায় বলে অভিযোগ। হামলায় জখম হয়েছেন কয়েকজন শিক্ষক।
সাহাপুর হাইস্কুলের শিক্ষক প্রদীপ বিশ্বাস বলেন, "পরীক্ষা শুরুর পর থেকেই পরীক্ষার্থীরা ঝামেলা শুরু করে। তাদের নির্দিষ্ট সিট নম্বর অনুযায়ী বসতে বলা হলে তারা রাজি হয়নি। তারা নিজেদের ইচ্ছেমতো বসার চেষ্টা করেছিল। বাধা দেওয়ায় পরীক্ষা শেষের পর তারা শিক্ষকদের উপর হামলা চালায়। সেই সময় স্কুলে পুলিশ ছিল। এরপর কিছু ছাত্র পরীক্ষার খাতা লুটের চেষ্টা করে। পরীক্ষার্থীদের হামলায় তাপস দাস নামে এক শিক্ষক জখম হয়েছেন। তাঁর হাত কেটে গেছে। তবে এই ঘটনায় একাদশ শ্রেণির পরীক্ষায় কোনও প্রভাব পড়েনি।"
খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে পৌঁছন জেলা শিক্ষা দপ্তরের আধিকারিক স্বরাজবন্ধু ঘোষ। তাঁর বক্তব্য, "পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবেই হয়েছে। পরীক্ষার পর কয়েকজন ছাত্র ফের স্কুলে ঢুকে গোলমাল করার চেষ্টা করে। তবে পুলিশ-প্রশাসন ও স্কুলের শিক্ষকরা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছেন। ছাত্ররা বেশ কিছু সুযোগ সুবিধা চেয়েছিল। সেই সুবিধা তাদের দেওয়া হয়নি বলেই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। তবে পরীক্ষার খাতা লুটের চেষ্টা নিয়ে শিক্ষকরা যে অভিযোগ তুলেছেন তা সঠিক নয়। শিক্ষকদের নিরাপত্তাহীনতায় ভোগারও কোনও কারণ নেই।"
স্কুলের CCTV ফুটেজ খতিয়ে দেখেছে পুলিশ। তবে তদন্তের স্বার্থে ফুটেজ সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া হয়নি। শুধু শিক্ষকরাই নন, আজ পরীক্ষার্থীদের হামলার শিকার হয়েছে সংবাদমাধ্যমও। তবে এই ঘটনা নিয়ে কোনও পুলিশ আধিকারিক বা BDO কেউই সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ খোলেননি।