মালদা, 16 মার্চ: রাতে স্কুলের হস্টেলে ঘুমিয়েছিল পঞ্চম শ্রেণির এক ছাত্রী ৷ ঘুম ভেঙে সে দেখে তার চুল কেউ কেটে নিয়েছে ৷ আতঙ্কে চিৎকার করে ওঠে সে ৷ বিষয়টি জানার পর স্কুল কর্তৃপক্ষ অভিভাবকদের খবর না-দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চা মেয়েটিকে নিয়ে যায় একটি বিউটি পার্লারে ৷ সেখানে তার চুল ঠিক করার পর অভিভাবকদের খবর দেওয়া হয় ৷ ঘটনাটি জানতে পেরে স্কুলে তড়িঘড়ি আসেন অভিভাবকরা ৷ এই ঘটনায় তাঁরা স্কুল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ৷ যদিও এ নিয়ে অভিভাবকদের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছে স্কুল কর্তৃপক্ষ ৷ ঘটনার চাপানউতোর শুরু হতেই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে মালদা শহরে (Child Abuse in Malda) ৷
সাড়ে দশ বছরের ওই কিশোরীর বাড়ি মালদা শহর-লাগোয়া পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ বাবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ৷ আগে বাড়ির কাছে একটি বেসরকারি স্কুলে পড়লেও টিউশন সমস্যার জন্য তাকে কাছাকাছি একটি আবাসিক মিশন স্কুলে ভরতি করে দেন অভিভাবকরা ৷ গত জানুয়ারি মাসে সে এই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভরতি হয় ৷ নিয়ম অনুযায়ী হস্টেলে থেকেই পড়াশোনা করছিল সে ৷ বিপত্তি দেখা দেয় মঙ্গলবার রাতে ৷
কিশোরীর বাবা বলেন, "গতকাল আমি দোকানে ছিলাম ৷ আমার স্ত্রী ফোন করে আমাকে মিশনে ডাকে ৷ সঙ্গে সঙ্গে আমি মিশনে যাই ৷ দেখি, স্ত্রী কাঁদছে ৷ জানতে পারি, কে বা কারা মেয়ের চুল কেটে দিয়েছে ৷ পরে শুনি, পরশু রাতে মেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল ৷ গতকাল সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখে, ওর চুল কাটা ৷ স্কুল কর্তৃপক্ষ আমাদের খবর না-দিয়ে মেয়েকে নিয়ে পার্লারে যায় ৷ সেখানে মেয়ের চুল কাটিয়ে ঠিক করার চেষ্টা করে ৷ তারপর মেয়েকে চকোলেট দিয়ে আমাদের ফোন করে ৷ আমরা মিশন কর্তৃপক্ষের ভরসায় মেয়েকে হস্টেলে রেখে এসেছি ৷ মেয়ের উপর ওদের কি কোনও দায়িত্ব নেই? কর্তৃপক্ষেরই তো হস্টেলে থাকা ছেলেমেয়েদের বাবা-মায়ের মতো দেখা উচিত! আমার দুই মেয়ে ৷"
আরও পড়ুন: শাবলমারায় অন্ধকারে সাঁওতালি মাধ্যমের পড়ুয়ারা, আন্দোলনে অভিভাবকরা
তিনি আরও বলেন, "মেয়েদের উচ্চশিক্ষিত করে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চেয়েছিলাম ৷ কিন্তু মিশনগুলো এমন কাণ্ড করলে মেয়েদের মানুষ করব কীভাবে? স্কুল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ঘটনাটি রাতে ঘটেছে ৷ তাদের কিছু করার নেই ৷ কিন্তু আজ কেউ মেয়ের চুল কাটতে পারলে আগামীতে গলা কাটবে না, তার নিশ্চয়তা কোথায়? গতকাল সারারাত মেয়ে ঘুমোতে পারেনি ৷ মেয়েকে আর ওই স্কুলে পাঠাব না ৷ আমার ভুল হয়েছিল, মেয়েকে ভরতির আগে ওই স্কুল সম্পর্কে সেভাবে খোঁজখবর নিইনি ৷ এর জন্য মেয়ের কাছে আমি সারা জীবন অপরাধী হয়ে থেকে গেলাম ৷ এ নিয়ে আমি পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছি ৷ তবে পুলিশের তেমন কোনও প্রতিক্রিয়া দেখতে পাইনি ৷ আমি মিশন কর্তৃপক্ষের শাস্তি দাবি করছি ৷"
অন্যদিকে ওই স্কুলের ইনচার্জ মুজিবর রহমানের বক্তব্য, "ঘটনাটি জানার পরই আমরা তদন্ত করেছি ৷ ওই মেয়েটির চুল কেটেছে তারই এক সহপাঠী ৷ ওই সহপাঠী দক্ষিণ দিনাজপুরের বাসিন্দা ৷ তার বাবা একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক ৷ মেয়েটি নিজের কৃতকর্মের কথা স্বীকার করে নিয়েছে ৷ সে জানিয়েছে, এই মেয়েটি তাকে সবসময় উত্যক্ত করত ৷ তাই রাগে সে এই কাজ করেছে ৷ বর্তমানে আমাদের স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে 28 জন বাচ্চা পড়ে ৷ কারও অভিভাবক কোনও অভিযোগ করেননি ৷ আমরা বিষয়টি মিটিয়ে নেওয়ার জন্য দু'টি মেয়ের অভিভাবকদেরই স্কুলে ডেকেছিলাম ৷ একটি পার্লার থেকে মেয়েটির চুলও ঠিক করে দিয়েছি ৷ তারপরেও মেয়েটির অভিভাবকরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করেছেন বলে শুনেছি ৷ আমার মনে হয়েছে, এরা শিক্ষার ধারে কাছে যাননি ৷ তাই বিষয়টি বুঝতে পারছেন না ৷ ওনারা থানায় অভিযোগ করলেও আমাদের কিছু করার নেই ৷"
আরও পড়ুন: বাচ্চা বিক্রি করতে এসেছি, নেবেন কেউ ! যাযাবর দম্পতির কাণ্ডে হতবাক গ্রামবাসী