মালদা, 4 মে: দিনহাটা থেকে নবজোয়ার কর্মসূচি শুরু করেছেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তা পৌঁছেছে মালদায় ৷ কিন্তু দিনহাটা থেকে মালদা পর্যন্ত কোথাও পঞ্চায়েতের প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে নিজেদের মতামত জানাতে পারেনি সাধারণ মানুষ ৷ ভোটদান প্রক্রিয়ায় প্রথম থেকেই শুধু ঘাসফুলের নেতা-কর্মীদের দাপাদাপি ৷ সেই প্রক্রিয়ায় কোচবিহার থেকে শুরু হওয়া তৃণমূল নেতা-কর্মীদের প্রকাশ্য ঝামেলা এসে পড়ল গৌড়বঙ্গের জেলা মালদাতেও ৷ জেলায় মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক বৈঠকের আগেরদিন কেবল ঝামেলাই নয়, নিজেদের মধ্যে হাতাহাতি, এমনকী দলের সাধারণ সম্পাদকের রাত্রিযাপনের অস্থায়ী আশ্রয়স্থলে ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে ৷ বুধবার রাতে এসবের সাক্ষী থেকেছেন খোদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷
এদিন দুপুরে মালদায় পৌঁছে একটি জনসভা ছাড়া কয়েকটি ব্লকে রোড-শো করেছেন অভিষেক ৷ এক কিলোমিটার পথ হাঁটেন তিনি ৷ সেই পথে তাঁকে দেখার জন্য বহু মানুষ চড়া রোদ মাথায় নিয়েই দীর্ঘ অপেক্ষা করেছে ৷ সামসীর জনসভায় তিনি বারবার ঘোষণা করেছেন, এবার থেকে মানুষ যাকে পছন্দ করবে, ভোটে তাকেই প্রার্থী করবে তৃণমূল ৷ কিন্তু ওই ভোটে মানুষই অংশগ্রহণ করতে পারছে না বলে বিরোধী শিবিরের দাবি ৷ সামসীর সভা সেরেই সপারিষদে অভিষেক চলে যান চাঁচল স্টেডিয়ামে ৷ সেখানেই তাঁবু ফেলা হয়েছিল ৷ স্টেডিয়াম জুড়ে থিকথিক করছে পুলিশ ৷ রাতে সেখানেই প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য ভোটদানের ব্যবস্থা করা হয় ৷
কিন্তু ভোটদানের প্রথম থেকেই চূড়ান্ত বিশৃঙ্খলা ৷ বিভিন্ন জায়গার ভোট নিয়ে প্রথম থেকেই হাওয়া গরম হয়ে ওঠে ৷ হরিশ্চন্দ্রপুরের বিভিন্ন এলাকার ভোট নিয়ে হাতাহাতিতে জড়ান তৃণমূল কর্মীরা ৷ চাঁচলের ক্ষেমপুর অঞ্চলের ভোট নিয়ে দলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে ঝামেলা বেঁধে যায় ৷ গাজোলের সাহাজাদপুর অঞ্চলের ভোট নিয়ে তো রীতিমতো ধুন্ধুমার পরিস্থিতি তারি হয় ৷ এই ঘটনা নিয়ে সেখানে উপস্থিতি মহিলা তৃণমূলের জেলা সম্পাদিকা পপি চক্রবর্তীর দাবি, "কোথাও কোনও ঝামেলা নেই ৷ সব শান্তিপূর্ণভাবে হচ্ছে ৷ সবাই ভোট দিচ্ছে ৷ আসলে বড় বাড়ি হলে একটু হল্লা হয় ৷ সেটাই হচ্ছে ৷"
আরও পড়ুন: শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের বার্তা দিয়ে অভিষেক মঞ্চ ছাড়তেই লুঠ তৃণমূলের গণভোটের ব্যালট বক্স!
ঠিক সেই সময়ই এক বিক্ষুব্ধ কর্মীকে দলের এই বিশৃঙ্খলা নিয়ে সরব হতে দেখা যায় ৷ সংবাদমাধ্যমের সামনে তিনি মুখ খুলতেই তাঁকে থামাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন অনেকে ৷ ফের ঝামেলা শুরু হয়ে যায় ৷ তার মধ্যেও তিনি শুধু বলেন, "দলের নেতৃত্ব অনেক ভুল নাম তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছে ৷ আমি কোনওরকমে নিজের ভোটটা দিয়েছি ৷ নিজেদের পছন্দের লোকজনের নাম ভোটার তালিকায় ঢুকিয়েছে অঞ্চল সভাপতি ৷"
এরই মধ্যে জেলা তৃণমূলের সভাপতি আবদুর রহিম বকসি জানালেন, এই কর্মসূচি বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম ৷ গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মানুষ তাঁদের ভোটের প্রার্থী বাছাই করছেন ৷ তাঁদের বড় দল ৷ দুটো আলোচনা এদিক ওদিক হতেই পারে ৷ সেটা বিশৃঙ্খলা নয় ৷ তবে দু'একজন কিছু কথা বলতেই পারে ৷ এখানে সাত হাজার মানুষ আছে ৷ তার মধ্যে দু'জন হয়তো বাজে কথাবার্তা বলছে ৷ তাঁরা সব খতিয়ে দেখছেন ৷ কোথাও কোনও সমস্যা হলে সঙ্গে সঙ্গে সমাধান করা হবে বলে তিনি জানান ৷
খানিক পর বিশৃঙ্খলা আরও বাড়ে ৷ গাজোলের বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আবদুল মজিদ জানান, এখানে ভোট হচ্ছে না ৷ দালালি হচ্ছে ৷ ভোটের নামে চুরি হচ্ছে ৷ যারা দলের কেউ নয়, তারা ভোট দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ এত হল্লাবোলে তাঁবু থেকে বেরিয়ে আসতে বাধ্য হন খোদ অভিষেক ৷ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাইক্রোফোন হাতে তুলে নেন তিনি ৷ ক্ষুব্ধ দলীয় কর্মীদের শান্ত করার চেষ্টা করেন ৷ যদিও গভীর রাত পর্যন্ত তৃণমূল কর্মীদের চিৎকার চেঁচামেচিতে উত্তপ্তই ছিল এলাকা ৷
আরও পড়ুন: আয়কর ও ইডি হানা নিয়ে মালদার জনসভায় নীরব অভিষেক, অবাক জেলা নেতৃত্ব