মালদা, 10 অগস্ট: গ্রাম পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের দিন রণক্ষেত্রের চেহারা নিল গাজোল ব্লকের বাবুপুর ৷ ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা বৃহস্পতিবার পুলিশকর্মীদেরও মারধর করে বলে অভিযোগ ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে একসময় এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় পুলিশ ৷ পঞ্চায়েত দফতরের ধারে কাছে দেখা যায়নি তৃণমূলের লোকজনকে ৷ এ দিন পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা ৷
গ্রামবাসী এনামুল হোসেন বলেন, "এখানে আমরা চার দল জোট করেছিলাম ৷ সিপিআইএম, কংগ্রেস, ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টির সঙ্গে বিজেপিও সেই জোটে ছিল ৷ এই পঞ্চায়েতের 12টি আসনের মধ্যে নির্বাচনে পাঁচটিতে জেতে তৃণমূল ৷ প্রধান গঠনে আমরাই এগিয়ে ছিলাম ৷ কিন্তু তৃণমূলের স্থানীয় নেতা সেরাজুলের নেতৃত্বে আমাদের এক জয়ী প্রার্থীকে অপহরণ করা হয় ৷ আমরা পুলিশের দ্বারস্থ হই ৷ কিন্তু আইসি আজ, কাল করে শুধু সময় নষ্ট করেন ৷ এ নিয়ে আমরা আন্দোলনও করি ৷ কিন্তু পুলিশ আমাদের প্রার্থীকে উদ্ধার করেনি ৷"
তাঁর কথায়, এরপরেই গ্রামবাসীরা একজোট হয়ে বোর্ড গঠন করার সিদ্ধান্ত নেয় ৷ তবে আজ আইসির নির্দেশে পুলিশ হঠাৎ গ্রামবাসীদের উপর লাঠি চার্জ করে ৷ এতে জনতা ক্ষেপে যায় ৷ 7-8 জন গ্রামবাসী পুলিশের লাঠির ঘায়ে আহত হয়েছে ৷
এ দিকে গাজোল গ্রামীণ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন জখম সিভিক ভলান্টিয়ার বিশ্বজিৎ সিংহ বলেন, "আমরা সবাই গ্রাম পঞ্চায়েত দফতরের ভিতরে ছিলাম ৷ আইসির নির্দেশে বাইরে বেরোতেই গ্রামবাসীদের সঙ্গে বিরোধীরা আমাদের ঘিরে ধরে ৷ উত্তেজিত জনতা লাঠি, লোহার রড নিয়ে ছুটে আসছিল ৷ আমরা লুকোনোর চেষ্টা করছিলাম ৷ এলাকা ছেড়ে পালাচ্ছিলাম ৷ কিন্তু উত্তেজিত জনতা তাড়া করে আমাদের সঙ্গে আইসিকেও মারধর শুরু করে ৷ অনেক সিভিক ভলান্টিয়ারই মার খেয়েছে ৷ মার খেয়েছেন পুলিশকর্মীরাও ৷ আমার হাত ভেঙে গিয়েছে ৷ ওরা সব জোটের কর্মী ৷"
আরও পড়ুন: বহিরাগতদের এনে পঞ্চায়েতে বোর্ড দখলের অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
জানা গিয়েছে, বাবুপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট 12টি আসন ৷ নির্বাচনী ফলাফলে তৃণমূল পাঁচটি, সিপিআইএম তিনটি, কংগ্রেস দুটি, বিজেপি একটি এবং বাম-কংগ্রেস সমর্থিত নির্দল প্রার্থী একটি আসনে জয় পান ৷ নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পরেই অভিযোগ উঠেছিল, এই পঞ্চায়েতের ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি সমর্থিত সিপিআইএম প্রার্থী দীপালি বেসরাকে বাড়ি থেকে অপহরণ করেছে তৃণমূলের লোকজন ৷ এ নিয়ে গাজোল থানায় লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন দীপালির মা মংলি হেমব্রম ৷
পুলিশকে তিনি জানান, পঞ্চায়েত নির্বাচনে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি, কংগ্রেস ও সিপিআইএমের মনোনীত প্রার্থী হিসাবে তাঁর মেয়ে কাস্তে-হাতুড়ি চিহ্নে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৷ 61 নম্বর বুথে তাঁর মেয়ে জয়লাভও করেন ৷ তারপর থেকেই এলাকার তৃণমূলের লোকজন তাঁর মেয়ে-জামাইকে তাদের দলে যোগ দেওয়ার জন্য চাপ দিচ্ছিল ৷ তৃণমূলে যোগ না দিলে খুনের হুমকিও দিচ্ছিল বলে অভিযোগ ৷ 19 জুলাই সকাল 7টা নাগাদ তারা তাঁর মেয়ে দিপালী, জামাই বিশ্বজিৎ মুর্মু ও চার বছরের একমাত্র নাতি সুব্রত মুর্মুকে গাজোল নিয়ে যাওয়ার নাম করে বাড়ি থেকে তিনজনকে নিয়ে যায় ৷ তারপর থেকেই মেয়ে-জামাই ও নাতির কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ পরবর্তীতে অবশ্য তৃণমূলের তরফে একটি ভিডিয়ো ক্লিপ প্রকাশ করা হয় ৷ তাতে দেখা যায়, ঘাসফুলের ঝান্ডা হাতে দাঁড়িয়ে রয়েছেন দীপালি ৷
এদিকে পরিবার-সহ দীপালি বেসরাকে খুঁজে বের করার দাবিতে 31 জুলাই গাজোল থানা ঘেরাও করে ঝাড়খণ্ড দিশম পার্টি ৷ সেদিন পুলিশ আশ্বস্ত করে, দীপালি বেসরা, তাঁর স্বামী বিশ্বজিৎ মুর্মু ও তাঁদের দু'বছরের ছেলে সুব্রতকে দ্রুত খুঁজে বের করা হবে ৷ কিন্তু এতদিন কেটে গেলেও পুলিশ কাউকে উদ্ধার করতে পারেনি ৷ এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসছিলেন বাবুপুর এলাকার মানুষজন ৷ আজ সেই ক্ষোভেরই বিস্ফোরণ হয় ৷
আরও পড়ুন: তৃণমূলের ইন্ধনে পুলিশি হস্তক্ষেপ, ধস্তাধস্তি করে বোর্ড গঠন করল বাম-কং জোট
এই পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন করতে বাম-কংগ্রেস জোটকে সমর্থন জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপির জয়ী প্রার্থীও ৷ আজ নির্দিষ্ট সময়েই তাঁরা পঞ্চায়েত দফতরের সামনে উপস্থিত হন ৷ সেই সময় পঞ্চায়েতের সামনে জড় ছিলেন অন্তত আড়াই হাজার গ্রামবাসী ৷ অভিযোগ, সেই সময় গাজোল থানার আইসির নির্দেশে উপস্থিত জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে লাঠি চালায় পুলিশ ৷ এতেই স্থানীয়দের ক্ষোভের বারুদে বিস্ফোরণ ঘটে ৷ উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে বলে অভিযোগ ৷ বেধড়ক মারধর করা হয় পুলিশকর্মীদের ৷ একজন সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে বড়সড় চোট লাগে ৷ তবে এই ঘটনা নিয়ে এখনও পুলিশ বা রাজনৈতিক দলগুলির কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি ৷