শিলিগুড়ি ও মালদা, 26 ডিসেম্বর: আর মাত্র কয়েক দিনের অপেক্ষা ! তারপরই পশ্চিমবঙ্গেও ছুটতে শুরু করবে দেশের সর্বোচ্চ গতিসম্পন্ন ট্রেন, বন্দে ভারত এক্সপ্রেস (Vande Bharat Express) ৷ আগামী 30 ডিসেম্বর থেকে হাওড়া ও এনজেপির মধ্যে চলাচল শুরু হবে দেশের ষষ্ঠ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস রেকের ৷ দাঁড়াবে শুধুমাত্র বোলপুর ও মালদা টাউন স্টেশনে ৷ 556 কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সময় লাগবে আটঘণ্টা ৷ রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আপাতত এরাজ্যে এই ট্রেন চলবে ঘণ্টায় 70 থেকে 72 কিলোমিটার গতিতে ৷ আর তাতেই উঠছে প্রশ্ন ! অনেকেরই বক্তব্য, বেশি ভাড়া দিয়ে মানুষ কেন 'ধীর গতি'র এই 'এলিট ট্রেনে' চাপবে ? তবুও, এই ট্রেন চালু হওয়ার খবরে খুশি তিস্তাতীর থেকে গঙ্গাপাড়ের বণিক মহল (Business Fraternity of North Bengal) ৷
উত্তর-পূর্ব ভারতের প্রবেশদ্বার হল শিলিগুড়ি৷ ৷ এই শহরকে ঘিরে রয়েছে নেপাল, ভুটান ও বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সীমান্ত ৷ রয়েছে বিহার, সিকিম, অসমের সীমানা ৷ শৈলরানি দার্জিলিং আর ডুয়ার্সের বনানি এই অঞ্চলকে দিয়েছে আন্তর্জাতিক পর্যটনকেন্দ্রের খ্যাতি ৷ ঐতিহাসিক শহর কোচবিহার থেকে শুরু করে রয়েছে কালিম্পং, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ির অনেক টুরিস্ট ডেস্টিনেশনের সরাসরি সংযোগ ৷ কিন্তু, তারপরও দেশের অন্যান্য প্রান্তের সঙ্গে এই অঞ্চলের যোগাযোগের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হল সময় ৷
আরও পড়ুন: বড়দিনে বড় উপহার ! লিলুয়া কারশেডে পৌঁছল পূর্ব ভারতের প্রথম বন্দে ভারত এক্সপ্রেস
এই এলাকার সঙ্গে দেশের অন্যান্য অংশের বিমান যোগাযোগ থাকলেও সকলের পক্ষে তার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয় ৷ তাই দীর্ঘদিন ধরেই দাবি উঠেছিল, কলকাতার সঙ্গে সংযোগকারী দ্রুতগতির একটি ট্রেনের ৷ সেই দাবি মেনেই বছর কয়েক আগে চালু হয়েছিল শতাব্দী এক্সপ্রেস ৷ আর এবার চালু হচ্ছে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ৷ সোমবারই হাওড়া-এনজেপি রুটে এই ট্রেনের পরীক্ষামূলক যাত্রা (Trial Run) হবে ৷ আগামী 30 ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে ছ'দিনই হাওড়া-এনজেপি রুটে যাতায়াত করবে এই ট্রেন ৷
রেলের তরফে প্রকাশিত সময়সূচি অনুসারে, ভোর 5টা 50 মিনিটে হাওড়া থেকে ছেড়ে দুপুর 1টা 50 মিনিটে এনজেপি পৌঁছোবে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস ৷ এর একঘণ্টা পর দুপুর 2টো 50 মিনিটে রওনা দিয়ে রাত 10টা 50 মিনিটে হাওড়া পৌঁছবে এই ট্রেন ৷ এনজেপি যাওয়ার সময় ট্রেনটি মালদায় পৌঁছবে সকাল 10টা 45 মিনিটে ৷ উলটোদিকে, হাওড়া ফেরার সময় মালদা পৌঁছনোর সময় হল, বিকেল 5টা 55 মিনিট ৷
নতুন এই ট্রেন নিয়ে উচ্ছ্বসিত উত্তরবঙ্গের (মূলত শিলিগুড়ির) বণিক মহল ৷ নর্থ বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সুরজিৎ পাল বলছেন, "এই ধরনের দ্রুতগামী ট্রেন চালু করায় কেন্দ্রীয় সরকার ও রেল মন্ত্রককে ধন্যবাদ জানাই ৷ এতে উত্তরবঙ্গের শিল্প ও বাণিজ্যে অনেক গতি আসবে ৷ এই ধরনের দ্রুতগামী ট্রেনের জন্য দীর্ঘদিন ধরে আমাদের দাবি ছিল ৷ অবশেষে বন্দে ভারত ট্রেন চালু হচ্ছে ৷"
কনফেডারেশন অফ ইন্ডিয়ান ইন্ডাস্ট্রিজের উত্তরবঙ্গের সহসভাপতি প্রদীপ পুরোহিত বলেন, "এতদিন শিল্প বা বাণিজ্যে বিনিয়োগকারীদের মূলত বিমান পরিষেবার উপর নির্ভর করে থাকতে হত ৷ এবার সেটা আর হবে না ৷ বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হলে উত্তরের শিল্প ও বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটনেও জোয়ার আসবে বলে আশা করি ৷ এই ট্রেন চালুর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে ধন্যবাদ জানাই ৷"
তবে, বন্দে ভারত এক্সপ্রেসের সময়সূচি মালদা জেলার বণিক মহলকে খুশি করতে পারেনি ৷ মালদা মার্চেন্ট চেম্বার অফ কমার্সের সভাপতি জয়ন্ত কুণ্ডু বলছেন, "উত্তরবঙ্গের সমস্ত ব্যবসায়ী সংগঠন রেলমন্ত্রীর কাছে একটি নতুন ট্রেনের দাবি জানিয়েছিল ৷ অবশেষে বন্দে ভারত এক্সপ্রেস চালু হতে চলেছে ৷ 30 ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এই ট্রেনের উদ্বোধন করবেন ৷ এর জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অজস্র ধন্যবাদ জানাই ৷ শিলিগুড়ি যাওয়ার ক্ষেত্রে এই ট্রেন আমাদের কাজে আসবে ৷ কিন্তু রাত 11টায় কলকাতা পৌঁছে মালদার ব্যবসায়ীদের খুব অসুবিধে হবে ৷ তাই আমাদের আবেদন, ট্রেনটির টাইম টেবিল এমনভাবে করা হোক, যাতে আমরা মালদা থেকে সন্ধে সাতটার মধ্যেই হাওড়া পৌঁছতে পারি ৷ এর সঙ্গেই আমরা বোলপুরের বদলে বর্ধমানে এই ট্রেনের স্টপেজের দাবি জানাচ্ছি ৷ কারণ, বর্ধমান থেকে দেশের বিভিন্ন অংশের সঙ্গে যোগাযোগকারী ট্রেন পাওয়া যায় ৷"