মালদা, 2 ডিসেম্বর : চোর সন্দেহে যুবককে খুনের অভিযোগ বিএসএফ জওয়ানের বিরুদ্ধে ৷ আজ অভিযুক্ত জওয়ানের বাড়ির পাশের পুকুর ধার থেকে উদ্ধার হয় ওই যুবকের দেহ ৷ পুরাতন মালদা ব্লকের মঙ্গলবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝিমুলি গ্রামের ঘটনা ৷ অভিযুক্তের কঠোর শাস্তির দাবিতে প্রায় দু’ঘণ্টা 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা ৷ দেহটি উদ্ধার করতে গেলে পুলিশকে বাধা দেয় তাঁরা ৷ যথাযথ তদন্তের আশ্বাসের পরই অবরোধ তোলেন আন্দোলনকারীরা ৷ অপরদিকে পলাতক অভিযুক্ত-সহ তার পরিবার ৷ বাড়িটিকে ইতিমধ্যেই শিল করেছে পুলিশ ৷
মৃত যুবকের নাম হুসেন আলি (26) ৷ ঝিমুলি গ্রামের বাসিন্দা ৷ হুসেনের আব্বা মেসের আলি পুরাতন মালদা ব্লকের একজন অস্থায়ীকর্মী ৷ স্ত্রী জেলি বিবি মঙ্গলবাড়ি এলাকায় একটি নার্সিং হোমে কাজ করেন ৷ তাঁদের তিনটি সন্তান রয়েছে ৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, হুসেন তেমন কিছু করতেন না৷ যখন যা কাজ পেতেন, তাই করতেন৷ তাঁর মদ্যপানেরও নেশা ছিল৷
4-5 দিন আগে ওই গ্রামের বাসিন্দা উপেন্দ্র যাদবের বাড়িতে চুরি হয়৷ উপেন্দ্র একজন বিএসএফ জওয়ান ৷ ভিনরাজ্যে কর্মরত ৷ কয়েকদিন আগে ছুটিতে বাড়ি এসেছেন ৷ এই চুরির ঘটনায় হুসেনকেই সন্দেহ করে উপেন্দ্র ও তার পরিবার ৷ তারপরই আজ তার বাড়ির পাশের পুকুর ধারে হুসেনের দেহ দেখেতে পান এলাকার কয়েকজন ৷
হুসেনের পরিবারের বক্তব্য, গতকাল রাতে উপেন্দ্র ফোনে হুসেনকে তাদের বাড়িতে ডাকে ৷ বিবিকে সেই কথা জানায় সে ৷ তারপর রাতের খাবার খেয়ে সেখানে চলে যায় ৷ শওহর ঘর থেকে বেরোনোর পর ছেলেমেয়ে নিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন জেলি ৷ সকালে ঘুম থেকে উঠে শওহরকে দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন৷ জলির অভিযোগ, উপেন্দ্রর বাড়িতে গিয়ে কাউকে তিনি দেখতে পাননি৷ বাড়ির সদর দরজায় তালা লাগানো ছিল৷ তিনি বাড়ি ফিরে যান৷ খানিকবাদেই হুসেনের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা৷ ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা তালা ভেঙে উপেন্দ্রর বাড়ির ভিতরে ঢুকে দেখে, সেখানেই হুসেনের জুতো পড়ে রয়েছে ৷ অগোছালো ঘরের জিনিসপত্র ৷ ঘরের ভিতর থেকে মেলে বাঁশের লাঠি ও লোহার রড ৷ এরপরেই গ্রামবাসীরা উপেন্দ্রকে গ্রেপ্তার ও কঠোর শাস্তির দাবিত জানান ৷ স্থানীয় চাকি মোড় এলাকায় 34 নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন ৷ তাঁদের বক্তব্য, হুসেনের মৃতদেহ পুকুরে ফেলে দেওয়ার ছক কষা হয়েছিল ৷ কিন্তু অভিযুক্তরা সেই সুযোগ না পেয়ে পুকুরের ধারে দেহ ফেলে পালিয়ে যায়৷
এলাকার বাসিন্দা মহম্মদ সাফিউল বলেন, “গোটা ঘটনাটি মালদা থানা ও পুলিশ সুপারকে জানানো হয়েছে ৷ মৃতের পরিবার অভিযুক্তদের কঠোর শাস্তি দাবি করেছি আমরা ৷ হুসেনকে খুন করা হয়েছে ৷ অভিযুক্তদের বাড়ির সবাই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছেন ৷ ওই বাড়িতে খুনের অনেক প্রমাণ আমরাই দেখতে পেয়েছি ৷”
পুরাতন মালদা পঞ্চায়েত সমিতির সহকারী সভাপতি হারেজ আলি বলেন, “আমরা সকালেই জানতে পেরেছি, আমাদের অফিসের অস্থায়ী কর্মী মেসের আলির ছেলে হুসেনের দেহ উদ্ধার হয়েছে ৷ বিহারির বাড়িতেই নাকি দেহটি ছিল৷ কয়েকদিন আগে দুই পরিবারের মধ্যে একটা ঝামেলাও হয় ৷ শুনলাম, গতকাল নাকি ওই বাড়িতে 4-5 জন মিলে হুসেনকে বেধড়ক মারধর করা হয় ৷ তারপর হুসেনের দেহ পুকুরে ফেলতে যায় ৷ গ্রামের লোকেরা বাধা দিলে সেখানেই দেহ ফেলে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা ৷ হুসেনের বিরুদ্ধে কোনও খারাপ কথা আমরা শুনতে পাইনি ৷ আমরা এই ঘটনার বিচার চাইছি ৷”
মালদা থানার পুলিশ জানিয়েছে, আপাতত মৃতদেহটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ মৃতের পরিবারের তরফে দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতে একটি খুনের মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷ অভিযুক্তরা পলাতক ৷ তাদের খোঁজ শুরু হয়েছে ৷