মালদা, 15 জুন : 2021 বিধানসভা নির্বাচনে আগে ফের NRC-কে অন্যতম ইশু করে তুলতে চাইছে BJP ৷ টের পাওয়া গেল সোমবার৷ এইসঙ্গে কোরোনা মোকাবিলায় রাজ্যের ভূমিকা তথা পরিযায়ী শ্রমিক প্রসঙ্গও উঠে এল৷ আজ সাংবাদিক বৈঠক করলেন BJP-র রাজ্য সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি৷ জেলার সদর দপ্তর শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ভবনে সাংবাদিক বৈঠক করেন তিনি৷ যেখানে উপস্থিত ছিলেন দলীয় সাংসদ খগেন মুর্মু, দলের জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল সহ জেলা নেতৃত্ব৷ সেখানেই একাধিক বিষয়ে রাজ্য সরকার তথা শাসকদলের সমালোচনা করেন বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি৷ বাংলার মানুষ কেন্দ্রীয় বহু প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন না বলেও অভিযোগ করেন তিনি৷
বিশ্বপ্রিয়বাবু বলেন, "সম্প্রতি অমিত শাহ ভার্চুয়াল সভা করেছিলেন, সেদিন এই রাজ্যের মানুষ তাঁর ভাষণ শুনেছেন৷ আমি পশ্চিমবঙ্গের মাননীয়াকে প্রশ্ন করতে চাই, কেন্দ্রীয় সরকার কৃষকদের জন্য 6 হাজার টাকা ও লকডাউনে তাঁদের প্রত্যেকের জন্য আরও 2 হাজার টাকা দিচ্ছে৷ সমস্ত রাজ্যের কৃষকরা সেই সুবিধে পেয়েছেন৷ শুধু এই রাজ্যের 76 হাজার কৃষক কেন্দ্রের সুবিধে পাননি৷ দিদি বলছেন, তিনি কিষাণ সাথী প্রকল্প করেছেন৷ ভালো কথা৷ কিন্তু, কৃষকরা যদি এইসঙ্গে কেন্দ্রীয় সরকারের থেকে অতিরিক্ত সুবিধে পান, তাহলে ক্ষতিটা কোথায়?"
বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি জানান, কেন্দ্রীয় সরকার যেভাবে পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য পোর্টাল তৈরি করেছে, তেমনভাবেই কৃষকদের জন্যও পোর্টাল তৈরি করার চেষ্টা চলছে৷
তিনি বলেন, "দিদি এই রাজ্যে আয়ুষ্মান ভারত চালু করেননি৷ স্বাস্থ্যসাথী চালু করেছেন৷ কিন্তু, স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড দেশের অন্যান্য রাজ্যে কাজে দেবে না৷ মানুষ অন্য কোথাও ওই কার্ড দেখিয়ে চিকিৎসা করাতে পারবে না৷ আর এই কার্ডের আওতায় রাজ্যে মাত্র একটি নামী নার্সিংহোম রয়েছে৷"
BJP-র রাজ্য সহ সভাপতির কটাক্ষ, "দিদির নিজেরই রাজ্যের স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় আস্থা নেই৷ ভাইপোর দুর্ঘটনার সময় তিনি তাঁকে হায়দরাবাদ ও দিল্লিতে চিকিৎসা করাতে নিয়ে যান ৷"
রাজ্যকে দেওয়া কেন্দ্রের টাকা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন BJP নেতা৷ তাঁর কথায় সেই টাকা লুট হচ্ছে৷ সোমবার কাটমানি প্রসঙ্গও টেনে আনেন বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি৷
বলেন, "নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর রাজ্যকে 4 লাখ 48 হাজার 214 কোটি টাকা দিয়েছিলেন৷ সেই টাকা মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না৷ টাকা লুট চলছে৷ জনধন যোজনায় BPL তালিকাভুক্ত মায়েদের অ্যাকাউন্টে 500 টাকা করে ঢুকেছে৷ সেখান থেকেও তৃণমূলের লোকজন 200 টাকা করে কাটমানি খাচ্ছে৷ লকডাউনে সেই ছবি আমরা দেখেছি৷ পাকা শৌচাগার নির্মাণেও কাটমানি নেওয়া হয়েছে৷ এদের লজ্জা নেই৷"
এরপরই NRC প্রসঙ্গ উত্থাপন করেন বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি৷
বলেন, "শরণার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে নাগরিকত্বের দাবি জানিয়ে আসছিলেন৷ নরেন্দ্র মোদি তাঁদের দাবি পূরণ করেছেন৷ BJP আইন করে নাগরিকত্ব অধিকার বিলকে মান্যতা দিয়েছে৷ যার বিরুদ্ধে তৃণমূল রাজ্যে তাণ্ডব চালিয়েছে৷"
লকডাউনের বাজারে কেন্দ্র রেশনের ডাল পাঠালেও মানুষকে সেই ডাল দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ তুললেন BJP নেতা৷ তাঁর অভিযোগ, "লকডাউন ঘোষণার পর কেন্দ্রীয় সরকার প্রত্যেক রেশন কার্ড হোল্ডারকে 5 কিলো করে চাল ও পরিবার পিছু এক কিলো করে ডাল দেওয়ার কথা ঘোষণা করে৷ সেই মতো খাদ্য সামগ্রী রাজ্যে পাঠানো হলেও এখানে কাউকে ডাল দেওয়া হয়নি৷ তবে, সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী নোটিস জারি করে বলেছেন, 16 ও 17 তারিখ ডাল দেওয়া হবে৷ কেন ওই নির্দিষ্ট দিনেই কেবল ডাল দেওয়া হবে?"
সাংবাদিক বৈঠকে পরিযায়ী শ্রমিক প্রসঙ্গ BJP-র রাজ্য সহ সভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি বলেন, "বাম আমলে এই রাজ্যে শিল্প ধ্বংস হয়ে যায়৷ প্রাথমিক থেকে ইংরেজি তুলে দিয়ে রাজ্যে বেকার বাড়িয়ে দেওয়া হয়৷ আজও কাজের খোঁজে ভিনরাজ্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন অসংখ্য শ্রমিক৷ সেই শ্রমিকদের ট্রেনে করে রাজ্যে ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা হলে দিদি বলছেন, ওই ট্রেনগুলি নাকি কোরোনা এক্সপ্রেস৷ যদিও পরে অস্বীকার করেন ওই মন্তব্য৷"
BJP নেতার কথায়, "একুশের ভোটে পরিযায়ী শ্রমিকরাই জবাব দেবে দিদিকে৷"
মালদা জেলা প্রসঙ্গে বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরি মন্তব্য, "মালদায় এতদিন রেশমের সেভাবে উৎপাদন হয়নি৷ যা নিয়ে কাজ করার প্রয়োজন রয়েছে৷ আমরা সেই কাজ করব৷ এই জেলার আম নিয়েও আমরা কাজ করব৷ প্রধানমন্ত্রীর কথা মতো লোকালকে গ্লোবাল করব৷ আমরা একুশের ভোট ক্ষমতায় এলে বাংলার একজন মানুষকেও বাইরে গিয়ে কাজ করতে হবে না৷"