মালদা, ২৩ মে : সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলাতেও দাপট দেখাচ্ছে গেরুয়া শিবির । লোকসভা নির্বাচনের গণনা চলাকালীন সেই ছবিই উঠে আসছে মালদার দুই কেন্দ্রের পাশাপাশি রায়গঞ্জ কেন্দ্রেও । জয়-পরাজয় চূড়ান্ত না হলেও এই ছবি শাসকদলের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে । সেকথা স্বীকারও করেছেন মালদা জেলার শাসকদলের নেতারা । পাশাপাশি, এই ছবির ক্ষেত্রে একদিকে নিজেদের সংগঠন, অন্যদিকে গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসকদলের সন্ত্রাসকে দায়ি করেছে BJP নেতৃত্ব ।
আজ EVM-এর সিল খোলার সঙ্গে সঙ্গে উত্তর মালদা কেন্দ্রে BJP এগোতে শুরু করে । এর মধ্যে একবার তৃণমূল প্রার্থী মৌসম নুর সামান্য ভোটে এগিয়ে গেলেও তা স্থায়ী হয়নি । উত্তর মালদায় আদিবাসী ভোটারদের একটা বড় অংশ রয়েছে । এখনও পর্যন্ত যা গণনা হয়েছে, দেখা গেছে ওই ভোটের একটা বড় অংশ গেছে BJP-র ঝুলিতে । এখানে BJP প্রার্থী খগেন মুর্মুও আদিবাসী সমাজের প্রতিনিধি । কিন্তু সবচেয়ে বড় বিষয় হল, এই কেন্দ্রের হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল ও রতুয়ার মতো সংখ্যালঘু এলাকাতেও ভালো ভোট পেয়েছে BJP । অন্যদিকে, দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রে ভোট গণনার শুরুতে কংগ্রেস প্রার্থী আবু হাসেম খান চৌধুরি কিছুটা সময় এগিয়ে থাকলেও পরবর্তীতে সেখানেও এগিয়ে যায় BJP । এখন অবশ্য ফের এগিয়ে গেছেন ডালুমিঞা । ঠিক একই ছবি দেখতে পাওয়া গেছে রায়গঞ্জ লোকসভা কেন্দ্রেও । সংখ্যালঘু অধ্যুষিত লোকসভা কেন্দ্র হলেও এখানে এগিয়ে রয়েছে BJP । রাজনৈতিক মহল বলছে, এর অন্যতম কারণ, দাড়িভিট ইশু । দাড়িভিটে বাংলা শিক্ষকের দাবিতে আন্দোলন করছিল পড়ুয়ারা । সেসময় ছাত্রদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয় । গুলিতে মৃত্যু হয় দুই প্রাক্তন ছাত্রের । এরপরই আন্দোলনে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দাড়িভিট । মোদি-অমিত শাহ একাধিকবার প্রচারে এসে এই ইশু তুলে ধরেন । যা BJP-কে অনেকটাই সাহায্য করে ।
মালদায় কেন এমন হল ? মালদা জেলা তৃণমূলের দায়িত্বপ্রাপ্ত সভাপতি দুলাল সরকারের বক্তব্য, "উত্তর মালদায় এখনও আমরা লড়াইয়ে আছি । তবে BJP যে এই কেন্দ্রে ভালো প্রভাব বিস্তার করেছে তা উপেক্ষা করা যায় না । গেরুয়া শিবিরের ধর্মীয় মেরুকরণ জেলার দুই কেন্দ্রেই প্রভাব ফেলেছে । অন্যদিকে সংখ্যালঘু ভোট কংগ্রেসের সঙ্গে ভাগ হয়ে গেছে । উত্তর মালদা কেন্দ্রে আরও একটি বড় ফ্যাক্টর, কোতোয়ালির খান চৌধুরি ভবনের সদস্যকে ওই কেন্দ্রে কংগ্রেসের প্রার্থী করা । অল্প হলেও এতে মৌসমের কিছু ভোট ইশা খানের দিকে গেছে ।" তবে দক্ষিণ মালদা কেন্দ্রে BJP-র অভ্যুত্থানে তাঁরাও চিন্তিত । সেখানে সংখ্যালঘু ভোটারের আধিক্য । ওই কেন্দ্রে হিন্দু ভোট পুরোটাই একজোট হয়ে গেছে বলে তাঁর ধারণা । এসব নিয়ে পর্যালোচনা করতে হবে বলে জানান দুলালবাবু ।
অন্যদিকে BJP জেলা সভাপতি সঞ্জিত মিশ্রের কথায়, "গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে গোটা রাজ্যে শাসকদল সাধারণ মানুষকে সাংবিধানিক অধিকার প্রয়োগ করতে দেয়নি । পুলিশ ও প্রশাসনকে কাজে লাগিয়ে তারা ত্রিস্তর পঞ্চায়েত দখল করেছে । এই জেলায় মানুষের রায়ে জিতে যাওয়া BJP প্রার্থীর পরিবর্তে তৃণমূলের প্রার্থীকে জয়ী ঘোষণা করা হয়েছে । পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই মানুষ এর জবাব দিতে সচেষ্ট ছিল । তার উপর BJP-র শক্তিশালী সংগঠনও এই জেলায় সংখ্যালঘু ভোটকে নিজেদের দিকে টেনে আনতে পেরেছে । এই জেলার প্রতিটি ব্লকেই আমাদের দলের সংখ্যালঘু সেল রয়েছে । সেই সেলের সদস্য সংখ্যাও খুব কম নয় । তাই, মানুষের রায় আমাদের দিকেই এসেছে ।"