মালদা, 5 মার্চ: গাছের কুল বাদুড় কিংবা পাখিতে যাতে নষ্ট না করে তার জন্য বাগান ঘিরে দেওয়া হয়েছিল জাল দিয়ে। কিন্তু সেই জালে আটকে মারা যাচ্ছে পাখিরা (Bird Death In Malda)। এর মধ্যে পরিযায়ী পাখিও রয়েছে। এভাবে পাখির মৃত্যু মেনে নিতে পারছেন না পাখিপ্রেমীরা। কিন্তু কুল চাষ না করলে পেট ভরবে না দরিদ্র কৃষক পরিবারের । কীভাবে পাখি এবং কুল দুই রক্ষা করা যাবে তার সঠিক পন্থা এখনও পাওয়া যায়নি।
ঘটনাটি মালদার হরিশ্চন্দ্রপুর-1 নম্বর ব্লকের মহুয়াপাড়ার। সেখানে দীর্ঘদিনের বসবাস এনামুল হকের। পেশায় চাষি। তবে অসুস্থতার জন্য এখন আর চাষের কাজ করতে পারেন না। তাঁর স্ত্রী নাজিমা বিবিই কৃষিকাজের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। বাড়ি লাগোয়া তাঁর কুলের বাগান। শীতে যা ফলন হয়, তা দিয়ে বছরের বেশ কয়েকটা মাস পেট চলে। এবারও কুলের ফলন বেশ ভাল হয়েছিল। কিন্তু সমস্যা অন্য জায়গায়। কুল পাকলে বাগানে বাদুড়ের হামলা শুরু হয়ে যায়। পাখি আর কাঠবিড়ালিও পাকা কুল খেয়ে নেয়। অভাবের সংসারে এভাবে জমির ফসল নষ্ট হতে দিতে পারেন না এনামুল-নাজিমা। তাই এবার চাষ শুরুর সময় গোটা বাগান জাল দিয়ে ঘিরে দিয়েছিলেন। কুল পাকার প্রথমদিকে সমস্যা তেমন ছিল না। কিন্তু গাছের কুল যত শেষের দিকে আসছে ততই পাখির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে। পাখির দল কুল খেতে জালের উপর দিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে। বেশকিছু পাখি জালে আটকে যাচ্ছে। এবার শীতে এই এলাকায় ভিনদেশের বেশ কিছু প্রজাতির পাখি আস্তানা গেড়েছিল। সেই পাখিও জালে আটকাচ্ছে। মারাও যাচ্ছে। কয়েকদিনে এভাবে 20-25টি পাখির মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। এতেই শঙ্কিত পাখিপ্রেমীরা।
এলাকার পাখিপ্রেমী কৃষ্ণ পাসওয়ান বলেন, "আমি প্রতিদিনই এই বাগানের পাশের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করি। এই কুল বাগানটি জাল দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। সেই জালে আটকে অন্তত 20-25টি পাখি মারা গিয়েছে। বেশিরভাগই পরিযায়ী পাখি। এখনও পাখি জালে আটকে রয়েছে। এভাবে পাখি মারা গেলে পরিবেশে তার কুপ্রভাব পড়বে। গাছের কুল বাঁচাতে বাগানে জাল না লাগানোই ভাল। আমি মানছি কুল চাষ না করলে এই চাষি পরিবারটি খেতে পাবে না। তাই অন্য কোনও উপায়ে কুল রক্ষা করতে হবে। পাখির সঙ্গে চাষিকেও বাঁচিয়ে রাখতে হবে।"
আরও পড়ুন: আদালতের নির্দেশের পরেও সরকারি জমি দখল করে নির্মাণ
এই বিষয়ে নাজিমা বিবি বলেন, "আমরা গরিব মানুষ। কুলচাষ করেই আমাদের পেট চলে। আমার স্বামী খুবই অসুস্থ, শয্যাশায়ী। আগে সেই চাষ করত। তখন বাগান জাল দিয়ে ঘিরত না। সারাদিন টিন বাজিয়ে পাখি তাড়াত। কিন্তু এখন আমার স্বামী নিজেই বিছানা ছেড়ে উঠতে পারেন না। জালে পাখি মারা যাচ্ছে সেটা ঠিক। কয়েকটি পাখি আমি জাল থেকে বের করে ছেড়ে দিয়েছি। কিন্তু আমি কী করব? আমাকেও তো পেট চালাতে হবে। দু'বছর ধরে আমিই কুলের চাষ করছি। গতবার জালে পাখি আটকায়নি। এবারই এই ঘটনা ঘটছে। তবে মরশুম শুরুর দিকে এই সমস্যা ছিল না। এখন গাছের কুল প্রায় শেষের দিকে। এখনই পাখির দল বাগানে আসার চেষ্টা করছে।"