মালদা, 8 ডিসেম্বর: যে সময় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগে সরব গোটা উত্তরবঙ্গ (North Bengal), যে সময় পৃথক উত্তরবঙ্গের দাবি জোরালো হয়েছে, ঠিক সেই সময় মালদায় (Malda) অম্বুজা গোষ্ঠীর বিপুল বিনিয়োগ খানিকটা যেন অক্সিজেন জুগিয়েছে রাজ্য সরকারকে ৷ এতে খানিকটা যে স্বস্তি মিলেছে, তার প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে রাজ্যের শিল্প দফতরের মন্ত্রী শশী পাঁজার (Bengal Minister Shashi Panja) গলায় ৷ তিনি জানিয়েছেন, মালদা-সহ সারা রাজ্যে শিল্প স্থাপনের (Industry in Bengal) জন্য রাজ্য সরকার সবরকম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ৷
আজ, বৃহস্পতিবার পুরাতন মালদার নারায়ণপুরে প্রায় 400 কোটি টাকায় গড়ে ওঠা গুজরাত অম্বুজা এক্সপোর্ট লিমিটেডের স্টার্চ কারখানার উদ্বোধন করতে মালদায় আসেন রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজা ৷ তিনি ছাড়াও উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেন রাজ্যের দুই মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন ও তজমুল হোসেন, জেলা পরিষদের সভাধিপতি এটিএম রফিকুল হোসেন-সহ আরও অনেকে ৷ নিজেদের বক্তব্যে সবাই এই জেলায় উত্তরবঙ্গের সবচেয়ে বড় স্টার্চ ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার জন্য অম্বুজা গোষ্ঠীকে ধন্যবাদ জানান ৷
উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে শশী পাঁজা বলেন, “মালদার সরকারি শিল্প পার্কে প্রায় 79 একর জমির উপর অম্বুজা গোষ্ঠী এই কারখানা তৈরি করছে ৷ দু’টি ফেজে সেই শিল্প গড়ে উঠবে ৷ সাড়ে 400 বেশি কর্মসংস্থানও হবে ৷ সম্পূর্ণ প্রকল্প তৈরির জন্য অম্বুজা গোষ্ঠী এখানে প্রায় 400 কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে ৷ মালদা ও সংলগ্ন এলাকায় অনেক ভুট্টা উৎপাদিত হয় ৷ সেই ভুট্টা থেকেই স্টার্চ তৈরি হয় ৷ এই স্টার্চই এখানে তৈরি হবে ৷ বিভিন্ন কাজে স্টার্চের ব্যবহার হয় ৷ এটা থেকে যেমন খাদ্য সামগ্রী তৈরি হয়, তেমনই ইথানলও পাওয়া যায় ৷ ইথানলকেই এখন বিকল্প জ্বালানি হিসাবে ব্যবহারের চিন্তাভাবনা চলছে ৷ ইথানল থেকে তৈরি জ্বালানি ফসিল ফুয়েলের মতো দূষণও ছড়ায় না ৷ এখানে এটা দ্বিতীয় পর্যায়ে তৈরি হবে ৷ এই শিল্প স্থাপনে সহায়তা করার জন্য প্রত্যেকেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে (Mamata Banerjee) কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন ৷”
শিল্পমন্ত্রী আরও বলেন, “এই রাজ্যে বিনিয়োগ নিয়ে আমাদের অনেক ভাবনাচিন্তা রয়েছে ৷ আগামীতে মুখ্যমন্ত্রীই সেসব নিয়ে বলবেন ৷ আমি শুধু একটাই বলব, উত্তরবঙ্গে শিল্প নিয়ে অনেকেই অনেকভাবে সমালোচনা করার চেষ্টা করে ৷ তার মধ্যে রাজনৈতিক সমালোচনাও থাকে ৷ আজ মালদায় একটি মেজর ইন্ডাস্ট্রির উদ্বোধন হল ৷ মালদা দেখিয়ে দিল, উত্তরবঙ্গে শিল্প নিয়ে যেভাবে সমালোচনা করা হয়, তা কতটা ভুল৷ সরকারি শিল্প পার্কে আরও অনেক শিল্প স্থাপনের প্রস্তাব রয়েছে ৷ তবে কোভিডের জন্য শিল্পদ্যোগীরা কাজ শুরু করতে পারেননি ৷ তাঁদের আমরা আরও কিছুটা সময় দিয়েছি ৷ এখানে শিল্প স্থাপনের যাবতীয় পরিকাঠামো রয়েছে ৷ সড়ক, বিদ্যুৎ, জল ইত্যাদির কোনও সমস্যা নেই ৷ আমরা প্রতিনিয়ত এসব বিষয়ে লক্ষ্য রাখছি ৷”
জেলার বণিকসভা থেকে শিল্পদ্যোগীরা বারবার বলেছেন, এই জেলায় শিল্প স্থাপনের অন্যতম অন্তরায় হল বিমান পরিষেবা না থাকা ৷ এর আগে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে রাজ্য সরকার মালদায় বিমান পরিষেবা চালু করার চিন্তাভাবনা শুরু করে ৷ বিমানবন্দরের রানওয়ে নির্মাণের কাজও শুরু হয় ৷ কিন্তু বিমান পরিষেবা কবে চালু হবে তা কারও জানা নেই ৷ কারণ, এখানকার বিমানবন্দরের যা দৈর্ঘ্য, তাতে ছোট বিমানও ওঠানামা করতে পারবে না বলে জানিয়ে গিয়েছে কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রক ৷
এনিয়ে শশী পাঁজার বক্তব্য, “মালদায় বিমান পরিষেবা চালু করার দাবি আমাদেরও রয়েছে ৷ রাজ্যে তিনটি নতুন বিমানবন্দর চালু করার দাবি রয়েছে আমাদের ৷ সেই দাবি নিয়ে রাজ্য সরকারের তরফে নির্বাচিত সাংসদরা কেন্দ্রীয় অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রীর সঙ্গে দেখাও করেছেন ৷ যদি কেন্দ্র এই তিনটি বিমানবন্দর চালু করতে না চায়, তবে আমাদেরই তা করতে হবে ৷ সেটা মুখ্যমন্ত্রীও বলেছেন ৷”
আরও পড়ুন: কংগ্রেস করার 'অপরাধে' জোটেনি সরকারি ঘর, প্রবীণ দম্পতির রাত কাটে মাটির দাওয়ায়