মালদা, 27 এপ্রিল : লকডাউনে দিল্লিতে আটকে রয়েছেন শওহর ৷ এদিকে তিন মাসের বাচ্চা মেয়ের হৃৎপিণ্ডের উপর ক্রমেই বড় হচ্ছে টিউমার ৷ এলাকার চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন, দ্রুত বড় কোনও হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে বাচ্চাটিকে ৷ কিন্তু লকডাউনের মধ্যে সেই পরিস্থিতি নেই ৷ ঘরে দু’বেলা পেট ভরার মতো খাবারই নেই, টাকা পয়সা তো অনেক দূরের কথা ৷ ভিনরাজ্য থেকে শওহরও কোনও টাকা পাঠাতে পারছেন না ৷ এই পরিস্থিতিতে মেয়ের কী হবে, তা ভেবে চিন্তায় পড়েছিলেন মহসিনা বিবি ৷ শেষ পর্যন্ত তাঁর পাশে এসে দাঁড়ালেন BDO । আজ BDO-র উদ্যোগে ওই শিশুকন্যাকে পাঠানো হয়েছে মালদা মেডিকেলে ৷ হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন আম্মা ৷
ঘটনাটি চাঁচল 1 নম্বর ব্লকের মকদুমপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের আজাদপুর গ্রামের ৷ ওই গ্রামের বাসিন্দা রবিউল শেখ ৷ তিনি প্যান্ডেল শ্রমিক ৷ দীর্ঘদিন ধরে দিল্লিতে কাজ করেন ৷ লকডাউনে সেখানেই আটকে রয়েছেন৷ সেখানে কাজকর্ম বন্ধ তাঁর ৷ উপার্জনও নেই ৷ এদিকে ঘরে বিবি ছাড়াও রয়েছে তিন ছেলেমেয়ে ৷ ছোটো মেয়ের বয়স মাত্র তিনমাস ৷ তার উপর জন্মের পর থেকেই শারীরিক সমস্যা রয়েছে তার ৷ হৃৎপিণ্ডের উপর টিউমার । যা বয়সের সঙ্গে সঙ্গে কমার কথা বললেও কমেনি । বরং বেড়েছে । এই পরিস্থিতিতে স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে ভরতি করার পরামর্শ দিয়েছিলেন । কিন্তু খাবার টাকা নেই, হাসপাতালে কীভাবে ভরতি করবেন ? এই ভেবে চিন্তায় পড়েছিলেন মহসিনা বিবি ।
এবিষয়ে মহসিনা বলেন, “শওহর দিল্লিতে আটকে রয়েছেন ৷ টাকাপয়সাও পাঠাতে পারছেন না ৷ অভাবে দু’বেলা পেট ভরে খাওয়াই হয় না আমাদের ৷ তার উপর মেয়ের চিন্তা ৷ কী করব ভেবে উঠতে পারছিলাম না ৷ গোটা বিষয়টি স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে জানিয়েছিলাম ৷ তিনি BDO-র সঙ্গে এনিয়ে কথা বলেন ৷ BDO মেয়েকে নিয়ে আজ আমাকে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে বলেছিলেন ৷ তাই শ্বশুরকে নিয়ে আমি সকালেই তাঁর কাছে চলে এসেছি ৷ BDO আজই মেয়েকে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দিয়েছেন ৷ কিছু টাকাপয়সাও দিয়েছেন আমাদের ৷ তাঁর এই উপকার কোনওদিন ভুলব না ৷”
মহসিনার শ্বশুর আবদুর রহিম বলেন, “লকডাউনে আমাদের দিন চলে না ৷ চোখের সামনে বাচ্চাটার বুকের টিউমার বড় হতে দেখছি ৷ কিন্তু কিছু করার ছিল না আমাদের ৷ ছেলেও দিল্লিতে আটকে রয়েছে ৷ এখন খাবার জোগাড় করতেই আমাদের দিন কেটে যাচ্ছে ৷ তাই বাচ্চাটাকে মালদা মেডিকেলেও নিয়ে যেতে পারছিলাম না ৷ অবশেষে আজ BDO-র সহায়তায় ওকে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যেতে পারছি ৷ তাঁকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা নেই ৷”
এপ্রসঙ্গে চাঁচল 1-এর BDO সমীরণ ভট্টাচার্য বলেন, “তিনমাসের এই শিশুটির জন্মের পর থেকেই শারীরিক সমস্যা রয়েছে ৷ চাঁচল সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে বাচ্চাটিকে দেখানো হয় ৷ এখানকার চিকিৎসকরা মালদা মেডিকেলে ভরতি করার পরামর্শ দেন ৷ বাচ্চাটির বাবা ভিনরাজ্যে আটকে রয়েছেন ৷ বাড়িতে অনটন রয়েছে ৷ আর্থিক সমস্যায় পরিবারের লোকজন বাচ্চাটিকে মালদা মেডিকেলে নিয়ে যেতে পারছিলেন না ৷ তাই আজ আমরা বাচ্চাটিকে মেডিকেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করে দিয়েছি ৷ পরিবারটিকে কিছু আর্থিক সাহায্যও করা হয়েছে ৷ পরবর্তীকালেও বাচ্চাটির চিকিৎসার জন্য কোনও সাহায্যের প্রয়োজন হলে প্রশাসন পাশে রয়েছে ৷ সেকথাও পরিবারের সদস্যদের বলে দেওয়া হয়েছে ৷ আমরা আশা করছি, বাচ্চাটি যাতে দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠবে ৷”