মালদা, 17 সেপ্টেম্বর : গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রারের দপ্তরে হামলার অভিযোগ ৷ রেজিস্ট্রার বিপ্লব গিরিকে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজও করা হয়, কয়েকজন পড়ুয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ এমনটাই । আজ বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দপ্তরে এই ঘটনা ঘটে । অভিযোগ, পড়ুয়ারা দপ্তরের গেটে ভাঙচুর চালায় । রেজিস্ট্রারের ঘরে ঢুকে তাঁকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে । গোটা ঘটনাটি CCTV-এর ফুটেজে ধরা রয়েছে বলে জানিয়েছেন রেজিস্ট্রার । তবে এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি বলে জানিয়েছেন তিনি । এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি দাবি করেছেন, রেজিস্ট্রারের জন্যই এদিনের ঘটনা ঘটেছে । তবে ঘটনাটি নাকি বড় কিছু নয় ।
রেজিস্ট্রার বলেন, "আজ বিকেলে আমি নিজের দপ্তরে কাজ করছিলাম । হঠাৎ নিরাপত্তারক্ষীরা এসে জানান, কিছু পড়ুয়া দপ্তরের প্রবেশদ্বারের পাশে চিৎকার করছে । তারা জোর করে ভিতরে ঢুকতে চাইছে । দু'দিন আগে যারা হঠাৎ করে উপাচার্যের ঘরে ঢুকে পড়েছিল, তেমন কয়েকজন পড়ুয়াও ছিল । আমি জানতে চাই, তারা কোনও কাজে এসেছে কি না । সেক্ষেত্রে তাদের অবশ্যই ভিতরে ঢুকতে দিতে হবে । কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, তারা কোনও কাজে এসেছে কি না তা বলতে রাজি নয় ।''
সাধারণত কাজ নিয়ে কোনও পড়ুয়া রেজিস্ট্রারের দপ্তরে এলে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয় । এসব নিয়ে ভাবনাচিন্তার মধ্যেই ওই পড়ুয়ারা লাথি মেরে দপ্তরের গেট ভেঙে দেয় বলে অভিযোগ করেন বিপ্লব বাবু । তিনি বলেন, পড়ুয়ারা ঘরে ঢুকে পড়ে চেয়ার-টেবিল তছনছ করে দেয় । অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে ।
বিপ্লববাবু বলেন, '' ওদের একটাই দাবি, গেটে তালা লাগানো যাবে না । আমি জানাই, বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি এই দপ্তরেই থাকে । তাই নিরাপত্তার জন্য গেট তালা বন্ধ রাখতে হয় । কিন্তু তারা কোনও কথা শুনতে রাজি নয় । উলটে আমাকে কটূক্তি করে । দু'দিন আগে যারা উপাচার্যকে ঘেরাও করেছিল, তাদের মধ্যে কয়েকজন এদিন ভাঙচুরে যুক্ত ছিল । গোটা ঘটনার CCTV ফুটেজ আমাদের কাছে আছে । আমাকে তারা শারীরিক নির্যাতন করেনি বটে, তবে মানসিক নির্যাতন অবশ্যই করেছে । সাম্প্রতিক ঘটনাবলির প্রেক্ষিতে আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত । মাত্র 20-25 জন পড়ুয়া বেশ কিছুদিন ধরে এসব ঘটনা ঘটিয়ে চলেছে। আমি আজকের বিষয়টি উপাচার্যকে জানিয়েছি । তবে এখনও পুলিশে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি ।"
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, তৃণমূল জেলা পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় গোটা ঘটনার জন্য রেজিস্ট্রারকে দায়ী করেন । তিনি বলেন, "আমি আজকের বিষয়টি জানতাম না । ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে আমাকে বিষয়টি জানানো হয় । বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পারি, গত কয়েকদিন ধরে প্রচুর ছাত্রছাত্রী নিজেদের কাজে রেজিস্ট্রারের কাছে আসছে । রেজিস্ট্রার তাঁদের সঙ্গে দেখা করেননি । আজ কয়েকজন পড়ুয়া 12টা থেকে 2.30 মিনিট পর্যন্ত রেজিস্ট্রারের ঘরের বাইরে অপেক্ষা করে । এনিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু পড়ুয়া ও TMCP সদস্য যখন রেজিস্ট্রারের কাছে অভিযোগ জানাতে যায়, তখনও দেখা যায় গেটে তালা মারা । বারবার ডাকাডাকি ও চিৎকার করার পরেও রেজিস্ট্রার ঘর থেকে বেরোননি । উলটে ঘেরাও হওয়ার ভয়ে তিনি বলেন, তিনি কাউকে ভিতরে ঢুকতে দেবেন না । এই অবিশ্বাসের জন্যই আজ এই ঘটনা ঘটেছে । তবে ঘটনাটি বড় কিছু নয় ।''
প্রসূন রায়ের দাবি, ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের কাজেই রেজিস্ট্রারের কাছে গিয়েছিল । রেজিস্ট্রার তাদের সঙ্গে দেখা না করে নিরাপত্তারক্ষীদের দিয়ে পড়ুয়াদের ভয় দেখিয়েছিলেন । এরপরেই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে । তবে তালা ভাঙার কোনও ঘটনা ঘটেনি । পড়ুয়াদের কেউ অশ্লীল কথা বলেননি, দাবি প্রসূন বাবুর । রেজিস্ট্রার পড়ুয়াদের সঙ্গে দেখা না করায় গ্রিল ভাঙা হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি ।
তাঁর কথায়, ''আমরা এসে পড়ুয়াদের শান্ত করি । রেজিস্ট্রারের সঙ্গেও কথা বলি । পড়ুয়াদের স্বার্থে আমরা সংগঠনের পক্ষ থেকে উপাচার্যকে একটি লিখিত আবেদন জানিয়েছি । তবে এটা ঠিক, বিশ্ববিদ্যালয়ে যা চলছে তা উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে ইতিবাচক নয় । আমরাও চাই এর অবসান ঘটুক । সবাই মিলে বিশ্ববিদ্যালয়কে ভালোভাবে চালানো হোক । কিন্তু রেজিস্ট্রারের মতো বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু অফিসারই এই অবস্থার জন্য দায়ী ।"