মালদা, 15 জুলাই: পুলিশের এ কোন 'একুশে' আইন? মেয়ের মরা মুখটুকুও কি দেখার অধিকার নেই বাবা, মা কিংবা বাপের বাড়ির সদস্যদের? নাকি অভিযুক্ত ছেলের পরিবারকে বাঁচাতে পুলিশের এই নয়া 'কানুন'? গাজোল থানার পুলিশের বিরুদ্ধে মৃত এক গৃহবধূর পরিবারের যা অভিযোগ, তাতে এই প্রশ্ন উঠতে বাধ্য ৷ মৃতার পরিবারের অভিযোগ, পণের দাবিতে তাঁদের মেয়েকে শ্বাসরোধ করে খুন করেছিল জামাই ও তার বাড়ির লোকজন ৷ সেই খবর পেয়ে তাঁরা মেয়ের শ্বশুরবাড়ি গেলেও পুলিশ কিংবা জামাইয়ের বাড়ির লোকজন তাঁদের মেয়েকে দেখতে দেয়নি ৷ ময়নাতদন্তের পরও মেয়ের মুখ তাঁদের দেখতে না-দিয়ে পুলিশ মৃতদেহ জামাইদের হাতে তুলে দেয় ৷ সেদিন রাতে বধূহত্যার অভিযোগ দায়ের করতে থানায় গেলে পুলিশ অভিযোগ না-নিয়ে তাঁদের তাড়িয়ে দেয় ৷ এর প্রতিবাদে তাঁরা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ৷ যদিও এখনও পর্যন্ত পুলিশ সুপার কোনও পদক্ষেপই করেননি ৷
ঘটনাটি ঘটে গত 3 জুলাই ৷ মৃতার নাম রীনা সরকার ৷ বয়স মাত্র 19 বছর ৷ পুলিশ সুপারের কাছে 10 জুলাই দায়ের করা লিখিত অভিযোগপত্রে রীনার বাবা, গাজোলের হাড়িয়াকুড়ি গ্রামের যুগল সরকার জানিয়েছেন, 2021 সালের 28 জুন দেখাশোনা করে তিনি একমাত্র মেয়ের বিয়ে দেন স্থানীয় বেগুনবাড়ি গ্রামের কনক চৌধুরীর সঙ্গে ৷ বিয়ের সময় এক লক্ষ টাকা, সোনার গয়না-সহ পাত্রপক্ষের যাবতীয় পণের দাবি মিটিয়েছিলেন তিনি ৷ কিন্তু বিয়ের ছ'মাস পরেই জামাই অতিরিক্ত এক লাখ টাকা দাবি করে ৷ তিনি দিনমজুর ৷ কথায় কথায় অত টাকা বের করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয় ৷ তবু কষ্ট করে 60 হাজার টাকা জামাইয়ের হাতে তুলে দেন ৷
আরও পড়ুন: দ্বিতীয় বিয়েতে বাধা, দেরাদুনে 2 কন্যাসন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুনে অভিযুক্ত বাবা !
এরইমধ্যে তাঁর নাতির জন্ম হয় ৷ জামাই ও তার বাড়ির লোকজন বাকি টাকার জন্য রীনাকে চাপ দিতে শুরু করে ৷ তারপর থেকেই শ্বশুরবাড়ির লোকজন মেয়ে ও নাতিকে মেরে ফেলার হুমকি দিত ৷ 2 জুলাই রীনা ফোন করে তাঁদের জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজন কনকের দ্বিতীয় বিয়ে দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে ৷ রীনা ও তাঁর ছেলের জীবন যে কোনও মুহূর্তে বিপন্ন হতে পারে ৷ পরদিনই সকাল সাড়ে ন'টা নাগাদ রীনার শাশুড়ি ফোন করে তাঁদের জানায়, রীনা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে ৷ সেকথা শুনে তাঁরা সেখানে পৌঁছন ৷
তাঁরা যাওয়ার আগেই পুলিশ ঘটনাস্থলে চলে এসেছিল ৷ পুলিশ ও মেয়ের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাঁদের রীনার মরা মুখটাও দেখতে দেয়নি ৷ তাঁরা নিশ্চিত, রীনাকে শ্বাসরোধ করে খুন করা হয়েছে ৷ শনিবার জেলা পুলিশ চত্বরে রীনার পরিবারের লোক আসেন ৷ রীনার মা দেবী সরকার বলেন, "থানায় গিয়েছিলাম ৷ অভিযোগ নেয়নি ৷ পুলিশ বলছে, মামলা হয়ে গিয়েছে ৷ আর মামলা করতে হবে না ৷ থানা থেকে আমাদের কুকুরের মতো তাড়িয়ে দিয়েছিল ৷ পুলিশ বলছে, আমরা মেয়েকে দেখতে পাব না ৷ জামাইরা নিশ্চয়ই টাকা দিয়ে পুলিশকে হাত করেছে ৷ আমরা বিচার চাই ৷ পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি ৷"
আরও পড়ুন: তৃণমূল কর্মীকে গুলি করে খুন, এবার দক্ষিণ 24 পরগনার বিষ্ণুপুরে
রীনার মামা জীবন সরকার বলেন, "ভাগ্নীর মৃত্যুর খবর পেয়ে আমরা ওখানে যাই ৷ কিন্তু দেহ দেখতে পাইনি ৷ তার আগেই পুলিশ এসে দেহ নিয়ে চলে যায় ৷ ময়নাতদন্তের সময় আমরা মালদা মেডিক্যালে গিয়েছিলাম ৷ কিন্তু পুলিশ মর্গের সামনেও আমাদের যেতে দেয়নি ৷ ময়নাতদন্তের পর মৃতদেহ ভাগ্নীর শ্বশুরবাড়ির হাতে তুলে দেয় পুলিশ ৷ যেদিন ঘটনা ঘটে, সেই রাতে আমরা গাজোল থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গিয়েছিলাম ৷ থানার আইসি জানান, সরকারিভাবে মামলা শুরু হয়ে গিয়েছে ৷ আমাদের আর অভিযোগ জানাতে হবে না ৷ পুলিশ জামাইকে গ্রেফতারও করেছিল ৷ কিন্তু আদালতে পেশ না-করে পরদিন বিকেলে ছেড়ে দেয় ৷ পুলিশ আমাদের মামলার কোনও কাগজপত্রও দেয়নি ৷ আমার ভাগ্নীকে গলা টিপে খুন করা হয়েছে ৷"
তিনি আরও বলেন, "তবে জামাইয়ের পরিবার রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত, টাকা-পয়সাও রয়েছে ৷ আমার মনে হয়, টাকা দিয়ে ওরা পুলিশকে কিনে নিয়েছে ৷ আমরা এখনও পর্যন্ত পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করার প্রস্তুতি নিইনি ৷ আপাতত পুলিশ প্রশাসনের দিকে তাকিয়ে রয়েছি ৷ পুলিশ সুপারের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত তিনি কোনও পদক্ষেপ করেননি ৷ কয়েকদিন দেখার পর আমরা অন্য কিছু ভাবব ৷" এনিয়ে পুলিশ সুপার প্রদীপকুমার যাদবকে ফোন করা হলে তিনি জানান, অভিযোগ পেয়েছি ৷ বিষয়টি খতিয়ে দেখে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে ৷
আরও পড়ুন: প্রেমিকার সঙ্গে জ্যেঠিমাকে খুন করে পলাতক প্রাক্তন প্রেমিক, চাঞ্চল্য বিষ্ণুপুরে