মালদা, 20 সেপ্টেম্বর : গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে দশম শ্রেণির এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে এলাকারই তিন যুবকের বিরুদ্ধে । এই ঘটনায় স্থানীয় থানায় অভিযোগও দায়ের করে নির্যাতিতা । আদালতে গোপন জবানবন্দিও দিয়েছে সে । কিন্তু এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের কাউকে গ্রেফতার করেনি পুলিশ । গ্রামবাসীদের অভিযোগ, শাসক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় এখনও পর্যন্ত অভিযুক্তদের গ্রেফতার করছে না পুলিশ ।
পুলিশের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে এবং অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবিতে আজ দুপুরে ভালুকা-রতুয়া রাজ্য সড়ক অবরোধ করেন গ্রামবাসীরা । খবর পেয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে সেখানে উপস্থিত হয় ভালুকা ফাঁড়ি ও রতুয়া থানার পুলিশ । এই বিক্ষোভে মহিলাদের অংশগ্রহণ ছিল চোখে পড়ার মতো । শেষ পর্যন্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে অভিযুক্তদের দ্রুত গ্রেফতার করার আশ্বাস দিলে ঘণ্টা দেড়েক পর অবরোধ তুলে নেওয়া হয় । ঘটনাটি ঘটেছে রতুয়া 1 নম্বর ব্লকে ৷
গত 10 সেপ্টেম্বর সকালে গৃহশিক্ষকের কাছে পড়তে যাওয়ার সময় পাশের গ্রামের তিন যুবক একটি চারচাকা গাড়িতে ওই নাবালিকাকে তুলে নিয়ে যায় । এরপর মাদক খাইয়ে নাবালিকাকে নেশাগ্রস্ত করে সারাদিন ধরে ওই তিন যুবক দফায় দফায় তাকে ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ । দুষ্কর্ম করে বিকেলে গ্রামেরই একটি মসজিদের কাছে নির্যাতিতাকে ফেলে পালিয়ে যায় তারা । কোনওরকমে টলতে টলতে ছাত্রীটি বাড়িতে ফিরে এলে তার অবস্থা দেখে শিউরে ওঠে মা । সেসময় তার বাবা বিহারে নিজের পৈতৃক বাড়িতে ছিলেন । খবর পেয়ে বাড়ি ফিরতেই ধর্ষকদের হুমকিতে প্রথমে কাউকে কিছু না জানালেও তিনদিন পর নির্যাতিতার পরিবার গ্রামের মাতব্বরদের বিষয়টি জানান । এরপর গ্রামে সালিশি সভার আয়োজন করা হয় ৷ কিন্তু অভিযুক্তরা সেই সভায় হাজির হয়নি ।
আরও পড়ুন : Malda Medical : মালদা মেডিক্যালে শিশু মৃত্যু বেড়ে হল 3 ; অস্বাভাবিক নয়, দাবি কর্তৃপক্ষের
গ্রামবাসীদের সহায়তায় নির্যাতিতা রতুয়া থানায় ধর্ষকদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর থেকেই এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যায় অভিযুক্তরা । নির্যাতিতা ওই ছাত্রী চাঁচল মহকুমা আদালতের বিচারকের সামনে গোপন জবানবন্দি দেয় ।
এই বিষয়ে নির্যাতিতার মা বলেন, "সেদিন সকাল সাড়ে আটটা নাগাদ মেয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল । ডাকবাংলোর কাছে একটি চারচাকার গাড়িতে তাকে অপহরণ করে এলাকার তিন যুবক । বাড়ি ফিরতে দেরি হওয়ায় আমি গৃহশিক্ষককে ফোন করি ৷ তিনি জানান, মেয়ে সেদিন পড়তেই যায়নি । এরপরেই মেয়েকে খুঁজতে শুরু করি । বিকেল চারটে নাগাদ টলতে টলতে বাড়ি ফিরে মেয়ে আমাকে সব কথা খুলে বলে । সে একজনকেই চিনতে পেরেছে । আমরা অভিযুক্তদের ফাঁসি চাই ।"
আরও পড়ুন : Girl Body Recovered From Grave : খুনের অভিযোগ মায়ের, কবর থেকে তোলা হল নাবালিকার দেহ
স্থানীয় বাসিন্দা মায়া ঘোষ বলেন, "টিউশন পড়তে যাওয়ার সময় গ্রামেরই একটি মেয়েকে রাস্তা থেকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করেছে তিন যুবক । এই ঘটনার পর আমরা ভয়ে মেয়েদের টিউশন পাঠাতে পারছি না । তাই সবাই মিলে আলোচনা করে আজ আমরা সুবিচারের দাবিতে পথ অবরোধ করেছি ।"
গ্রামের এক মাতব্বর মধু ঘোষের বক্তব্য, "14 তারিখ বিষয়টি জানার পর সেদিনই আমরা আলোচনা করে অভিযুক্তের বাড়িতে যাই । পঞ্চায়েতের উপপ্রধানও আমাদের সঙ্গে গিয়েছিলেন । কিন্তু অভিযুক্ত যুবক গোটা ঘটনাটি অস্বীকার করে । এটা কোনও রাজনৈতিক লড়াই নয় । তবে এই ঘটনায় গোটা এলাকা আতঙ্কিত । করোনার জেরে দু’বছর ধরে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা নষ্ট হয়ে গিয়েছে । এই ঘটনার পর ছেলেমেয়েদের টিউশন যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছি । জনবসতিপূর্ণ এলাকায় কীভাবে একটি নাবালিকাকে এভাবে অপহরণ ও গণধর্ষণ করা হল, তা আমরা জানতে চাই । অপরাধীদের শাস্তির দাবিতে আজ পথ অবরোধে নেমেছি । রতুয়া থানার আধিকারিকরা আশ্বাস দিয়েছেন, 4-5 দিনের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেফতার করা হবে । আগামিকাল আমরা নির্যাতিতাকে নিয়ে পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হব ।"
আরও পড়ুন : Kaliachak Murder Case : কালিয়াচক হত্যাকাণ্ডে আদালতে 273 পাতার চার্জশিট পেশ পুলিশের
এই ঘটনায় বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দচন্দ্র মণ্ডল জানান, ধর্ষকরা শাসক ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাদের কোনও ভয় নেই । তারা জানে, যে অপরাধই করুক না কেন, তাদের গ্রেফতার করা হবে না । তাই আজ পর্যন্ত ধর্ষকদের গ্রেফতার করা হয়নি । আমরা এই নিয়ে বড়সড় আন্দোলনে নামছি । পুলিশ সুপার ও জেলাশাসকের দফতরের সামনে আন্দোলন চালানো হবে ।
এদিকে তৃণমূলের জেলা সভাপতি আবদুর রহিম বকসি এই বিষয়ে বলেন, "দুষ্কৃতীদের কোনও দল, জাত কিংবা ধর্ম হয় না । আমি আজই বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি । রতুয়া থানার আইসির সঙ্গেও কথা বলব । এখানে দলের নাম করে কোনও লাভ নেই । ঘটনাটি সত্যি হলে তাদের গ্রেফতার করতেই হবে ।"