মালদা, 22 মার্চ: প্রায় ছ’মাস আত্মগোপন করে থাকার পর সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হলেন 2017 সালের বন্যাত্রাণ দুর্নীতির তিন মূল অভিযুক্তই (accused of flood corruption surrender)। পরপর দু’দিন দুই অভিযুক্ত হরিশ্চন্দ্রপুর থানায় আত্মসমর্পণ করেছিলেন। মঙ্গলবার আর এক অভিযুক্ত হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বরুই পঞ্চায়েতের প্রধান সোনামণি সাহা চাঁচল মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন। তিনি এই ঘটনায় সিবিআই তদন্তের দাবি করেছেন। গোটা ঘটনা নিয়ে আরও একবার শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর।
2017 সালে ভয়াবহ বন্যায় উত্তর মালদার বিস্তীর্ণ এলাকার অসংখ্য বাড়ি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হন কয়েক হাজার মানুষ। রাজ্য সরকারের তরফে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্তদের প্রত্যেককে 70 হাজার টাকা আর আংশিক ক্ষতিগ্রস্তদের 3300 টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকায় হরিশ্চন্দ্রপুর 1 নম্বর ব্লকের বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের 7394 জনের নাম ছিল। কিন্তু অভিযোগ ওঠে, এক্ষেত্রে প্রায় 76 লক্ষ টাকা উপভোক্তাদের না দিয়ে আত্মসাৎ করেছে এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতৃত্ব। এনিয়ে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা রুজু হয়। এই ঘটনায় আদালতে মামলা দায়ের হতেই গা ঢাকা দেন মূল তিন অভিযুক্ত বরুই পঞ্চায়েতের প্রধান সোনামণি সাহা, পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ রৌশনারা খাতুন এবং এলাকার প্রভাবশালী তৃণমূল নেতা তথা প্রাথমিক শিক্ষক আফসার হোসেন।
জামিন পেতে তাঁরা প্রথমে কলকাতা হাইকোর্ট পরে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন জানান। কিন্তু দুই আদালতই তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেয়। উলটে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের ১৪ দিনের মধ্যে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেয়। মঙ্গলবার শেষদিনে চাঁচল মহকুমা আদালতে আত্মসমর্পণ করেছেন পঞ্চায়েত প্রধান সোনামণি সাহা।
এদিন আদালতে সোনামণিদেবী বলেন, "সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আজ আমি আদালতে আত্মসমর্পণ করলাম। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে তা সব মিথ্যে। এই ঘটনায় আমি সিবিআই তদন্ত দাবি করছি। এই ঘটনায় অফিস স্টাফ জড়িত রয়েছে। বিডিও আমাকে নির্দোষ প্রমাণ করার সময় দেননি। সিবিআই তদন্ত হলে সব সত্যি ঘটনা সামনে বেরিয়ে আসবে। এর পিছনে অনেক বড় মাথা রয়েছে।"
ঘটনার মামলাকারী, বরুই গ্রাম পঞ্চায়েতের বিরোধী দলনেতা আবদুল মান্নান বলেন, "অবশেষে অভিযুক্ত তিনজনই সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছেন। এদের বাঁচার কোনও রাস্তা নেই। আইনের উপর আমার যথেষ্ট আস্থা রয়েছে। আমি চাই, যাঁরা বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত, তাঁদের ক্ষতিপূরণের টাকা দেওয়া হোক।"
তৃণমূলের হরিশ্চন্দ্রপুর এলাকার চেয়ারম্যান সঞ্জীব গুপ্তা জানান, আমি আগেও বলেছি, দল দুর্নীতিগ্রস্তদের পাশে দাঁড়াবে না। আজও একই কথা বলছি। আইন আইনের পথে চলবে।
যদিও বিজেপির উত্তর মালদা সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক রূপেশ আগরওয়ালা বলেন, "এ তো শুধু ট্রেলর। পিকচার এখনও বাকি। এতদিন তৃণমূল মানুষের সঙ্গে খেলেছে। এবার মানুষ ও বিরোধীরা তৃণমূলের সঙ্গে খেলবে। ক্যাগের রিপোর্ট পেশ হলেই তৃণমূলের অনেক তাবড় নেতার নাম এই কেলেঙ্কারিতে সামনে উঠে আসবে।"