ETV Bharat / state

ভাঙনের হাত থেকে রক্ষা পেতে ভিটেহারা প্রায় 500 পরিবার

দুই নদীর ভাঙনে বিপর্যস্ত মানুষ নিজেদের বাড়ি ভেঙে পাড়ি দিচ্ছে অজানা ভবিষ্যতে ৷ নেই কোনও প্রশাসনিক সহায়তা ৷

মালদা
মালদা
author img

By

Published : Sep 7, 2020, 5:23 PM IST

মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : সকালটা কাটে কোনওরকম ৷ দুপুর হলেই দুই নদী থেকে আতঙ্কের স্রোত বয়ে আসে বসতি এলাকায় ৷ এখনই পাওয়া যাবে ঝুপঝাপ শব্দ ৷ একটু একটু করে নদীতে পড়তে শুরু করবে কৃষিজমি, আমবাগান কিংবা সবজির খেত৷ গত 3-4 বছর ধরে বর্ষা মরশুমে একই ছবি রতুয়া 1 ব্লকে ৷ এবার যেন একটু বেশিই ৷ সবাই জানে, নদীতে ভাঙন হয় দুইবার ৷ জল বাড়ার সময়, আর জল কমতে শুরু করলে৷ কিন্তু এবার ছবিটা অনেকটাই পালটে গিয়েছে ৷ এখন দুই নদীতেই ভরা জল ৷ তার সঙ্গে জলের ঘূর্ণন হয়৷ এই জল কিছু সময় নদীর পাড়ে ঘুরতে থাকে ৷ জলে ফ্যানা ওঠে ৷ তারপরই ঝুপঝুপ করে পাড় ভাঙে জলে নামতে শুরু করে ৷ গত তিন বছরে এভাবেই দুই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় 75টি বাড়ি ৷ প্রচুর কৃষিজমি, আমবাগান সহ অনেক কিছু ৷ নদীতে সর্বস্ব চলে যাওয়ার আগে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে অন্তত 500 পরিবার ৷ কারণ, পাড় ভাঙার তীব্রতা বাড়লে ঘরবাড়ি কিংবা জিনিসপত্র সরানোর সময় পাওয়া যাবে না ৷ কিন্তু ঘর সরিয়ে নিলেও মাথা কোথায় গোঁজা যাবে? অনেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বটে, তবে কতদিন সেখানে থাকা যাবে তা তাদের জানা নেই৷ এই মানুষজনের অভিযোগ, প্রকৃতির রোষে তারা ভিটেহারা ৷ অথচ প্রশাসন তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না৷ এখনও পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থাও হয়নি ৷

গত 3-4 বছর ধরেই রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত৷ এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহর ৷ এক দশকের বেশি সময় থেকে দুই নদী পাড় ভেঙে চলেছে ৷ এখন দুই নদীর মধ্যে দূরত্ব মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 3-4 বছরে প্রায় 75টি বাড়ি দুই নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে ৷ তবে মূলত গঙ্গাই বেশি বাড়ি গিলেছে ৷ অন্যদিকে ফুলহর গ্রাস করেছে কৃষিজমি৷ গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও ৷ 500টিরও বেশি পরিবার সময় থাকতে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যস্থানে চলে গিয়েছে ৷ সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে ৷ এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি৷ মানুষগুলোর অনেকে সরকারি জমির উপর ঘর বেঁধেছিল৷ ফলে এই মুহূর্তে তারাই পড়েছে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ৷

বিলাইমারির নদীপাড়ের বাসিন্দা অসিত মণ্ডল বলেন, "এখানকার অবস্থা খুব শোচনীয়৷ গঙ্গার ভাঙনে সব চলে যাচ্ছে ৷ অনেকদিন ধরেই নদী পাড় কাটছে ৷ কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না৷ যদি কিছু করতে পারেন, তবে সেটা করুন ৷ নয়তো আমাদের বিষ এনে দিন ৷ আমরা আর নদীভাঙন সহ্য করতে পারছি না৷ প্রায় দেড় মাস ধরে ভাঙন চলছে ৷ গঙ্গারামটোলা, রামায়ণপুর, দ্বারকটোলা আর রুহিমারিতে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হচ্ছে ৷ এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে এই এলাকা পুরোটাই নদীতে চলে যাবে৷"

ভিটেহারা প্রায় 500 পরিবার

নিজেদের বাড়ি ভেঙে আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন আবু কালাম ৷ তাঁর বিবি আয়েষা বলেন, "2-3 বছর ধরে নদী কাটছে ৷ অনেক লোক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে ৷ নদী এখন ঘরে পাশে চলে এসেছে ৷ তাই আমরাও এখান থেকে পালাচ্ছি ৷ আপাতত চাঁদপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেব ৷ পরিবারে আমরা দু’জন ছাড়াও দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে৷ আমার ভাশুর, শ্বশুররাও বাড়ি ভেঙে সরে যাচ্ছেন ৷ অনেকেই পালাচ্ছে ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি৷ এখানে থাকা মানে জীবন হাতে নিয়ে চলা৷" গ্রামের আর এক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, "আমাদের সব চলে গিয়েছে ৷ এখন আমাদের আর কিছু নেই ৷ জায়গা-জমি সবই নদী গিলেছে ৷ শুধু ঘরখানা থেকে গিয়েছে ৷ নদী পাড় কাটতে কাটতে ঘরের পাশে চলে এসেছে ৷ তাই সময় থাকতে ঘর সরিয়ে নিচ্ছি ৷ আপাতত নদীর ওপারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি ৷ সেখানেও তারা আমাদের থাকতে দেবে কি দেবে না, জানি না ৷ টাকাপয়সা কিছুই নেই ৷ আপনারা যদি পারেন, তবে কিছু সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিন৷ MLA, MP, পঞ্চায়েত প্রধান, কেউ আমাদের অবস্থা দেখতে আসেনি৷"

এভাবেই রতুয়ায় গঙ্গা-ফুলহরের পাড়ে চলছে ঘর ভাঙার কাহিনি ৷ এই গৃহহীন মানুষগুলোর জন্য কি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় না? বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন রতুয়া 1-এর BDO সারওয়ার আলি৷ ফোনে শুধু তিনি জানান, "বিষয়টি আমি জেলাশাসককে জানিয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে তেমন কোনও নির্দেশিকা পাইনি ৷ কাজে যোগ দেওয়ার পর এনিয়ে আমি ফের জেলাশাসকের দ্বারস্থ হব৷"

মালদা, 7 সেপ্টেম্বর : সকালটা কাটে কোনওরকম ৷ দুপুর হলেই দুই নদী থেকে আতঙ্কের স্রোত বয়ে আসে বসতি এলাকায় ৷ এখনই পাওয়া যাবে ঝুপঝাপ শব্দ ৷ একটু একটু করে নদীতে পড়তে শুরু করবে কৃষিজমি, আমবাগান কিংবা সবজির খেত৷ গত 3-4 বছর ধরে বর্ষা মরশুমে একই ছবি রতুয়া 1 ব্লকে ৷ এবার যেন একটু বেশিই ৷ সবাই জানে, নদীতে ভাঙন হয় দুইবার ৷ জল বাড়ার সময়, আর জল কমতে শুরু করলে৷ কিন্তু এবার ছবিটা অনেকটাই পালটে গিয়েছে ৷ এখন দুই নদীতেই ভরা জল ৷ তার সঙ্গে জলের ঘূর্ণন হয়৷ এই জল কিছু সময় নদীর পাড়ে ঘুরতে থাকে ৷ জলে ফ্যানা ওঠে ৷ তারপরই ঝুপঝুপ করে পাড় ভাঙে জলে নামতে শুরু করে ৷ গত তিন বছরে এভাবেই দুই নদীতে তলিয়ে গিয়েছে প্রায় 75টি বাড়ি ৷ প্রচুর কৃষিজমি, আমবাগান সহ অনেক কিছু ৷ নদীতে সর্বস্ব চলে যাওয়ার আগে তিল তিল করে গড়ে তোলা সংসার সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে অন্তত 500 পরিবার ৷ কারণ, পাড় ভাঙার তীব্রতা বাড়লে ঘরবাড়ি কিংবা জিনিসপত্র সরানোর সময় পাওয়া যাবে না ৷ কিন্তু ঘর সরিয়ে নিলেও মাথা কোথায় গোঁজা যাবে? অনেকে নিজেদের আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে বটে, তবে কতদিন সেখানে থাকা যাবে তা তাদের জানা নেই৷ এই মানুষজনের অভিযোগ, প্রকৃতির রোষে তারা ভিটেহারা ৷ অথচ প্রশাসন তাদের দিকে ফিরে তাকাচ্ছে না৷ এখনও পর্যন্ত তাদের পুনর্বাসনের কোনও ব্যবস্থাও হয়নি ৷

গত 3-4 বছর ধরেই রতুয়া 1 ব্লকের মহানন্দটোলা ও বিলাইমারি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা নদী ভাঙনে বিপর্যস্ত৷ এই দুই গ্রাম পঞ্চায়েতের একদিকে গঙ্গা, অন্যদিকে ফুলহর ৷ এক দশকের বেশি সময় থেকে দুই নদী পাড় ভেঙে চলেছে ৷ এখন দুই নদীর মধ্যে দূরত্ব মাত্র এক থেকে দেড় কিলোমিটার৷ স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, 3-4 বছরে প্রায় 75টি বাড়ি দুই নদীর গর্ভে চলে গিয়েছে ৷ তবে মূলত গঙ্গাই বেশি বাড়ি গিলেছে ৷ অন্যদিকে ফুলহর গ্রাস করেছে কৃষিজমি৷ গঙ্গায় তলিয়ে গিয়েছে একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও ৷ 500টিরও বেশি পরিবার সময় থাকতে ঘরবাড়ি ভেঙে অন্যস্থানে চলে গিয়েছে ৷ সেই প্রক্রিয়া এখনও চলছে ৷ এই এলাকার বেশিরভাগ বাড়ি বাঁশের বেড়া দিয়ে তৈরি৷ মানুষগুলোর অনেকে সরকারি জমির উপর ঘর বেঁধেছিল৷ ফলে এই মুহূর্তে তারাই পড়েছে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় ৷

বিলাইমারির নদীপাড়ের বাসিন্দা অসিত মণ্ডল বলেন, "এখানকার অবস্থা খুব শোচনীয়৷ গঙ্গার ভাঙনে সব চলে যাচ্ছে ৷ অনেকদিন ধরেই নদী পাড় কাটছে ৷ কিন্তু কোনও ব্যবস্থা হচ্ছে না৷ যদি কিছু করতে পারেন, তবে সেটা করুন ৷ নয়তো আমাদের বিষ এনে দিন ৷ আমরা আর নদীভাঙন সহ্য করতে পারছি না৷ প্রায় দেড় মাস ধরে ভাঙন চলছে ৷ গঙ্গারামটোলা, রামায়ণপুর, দ্বারকটোলা আর রুহিমারিতে সবচেয়ে বেশি ভাঙন হচ্ছে ৷ এভাবে ভাঙন চলতে থাকলে এই এলাকা পুরোটাই নদীতে চলে যাবে৷"

ভিটেহারা প্রায় 500 পরিবার

নিজেদের বাড়ি ভেঙে আত্মীয়ের বাড়িতে ঠাঁই নিয়েছেন আবু কালাম ৷ তাঁর বিবি আয়েষা বলেন, "2-3 বছর ধরে নদী কাটছে ৷ অনেক লোক গ্রাম ছেড়ে পালিয়েছে ৷ নদী এখন ঘরে পাশে চলে এসেছে ৷ তাই আমরাও এখান থেকে পালাচ্ছি ৷ আপাতত চাঁদপুর গ্রামে এক আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নেব ৷ পরিবারে আমরা দু’জন ছাড়াও দুই ছেলে আর এক মেয়ে রয়েছে৷ আমার ভাশুর, শ্বশুররাও বাড়ি ভেঙে সরে যাচ্ছেন ৷ অনেকেই পালাচ্ছে ৷ এখনও পর্যন্ত কোনও সরকারি সাহায্য পাইনি৷ এখানে থাকা মানে জীবন হাতে নিয়ে চলা৷" গ্রামের আর এক বাসিন্দা মজিবুর রহমান বলেন, "আমাদের সব চলে গিয়েছে ৷ এখন আমাদের আর কিছু নেই ৷ জায়গা-জমি সবই নদী গিলেছে ৷ শুধু ঘরখানা থেকে গিয়েছে ৷ নদী পাড় কাটতে কাটতে ঘরের পাশে চলে এসেছে ৷ তাই সময় থাকতে ঘর সরিয়ে নিচ্ছি ৷ আপাতত নদীর ওপারে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যাচ্ছি ৷ সেখানেও তারা আমাদের থাকতে দেবে কি দেবে না, জানি না ৷ টাকাপয়সা কিছুই নেই ৷ আপনারা যদি পারেন, তবে কিছু সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করে দিন৷ MLA, MP, পঞ্চায়েত প্রধান, কেউ আমাদের অবস্থা দেখতে আসেনি৷"

এভাবেই রতুয়ায় গঙ্গা-ফুলহরের পাড়ে চলছে ঘর ভাঙার কাহিনি ৷ এই গৃহহীন মানুষগুলোর জন্য কি পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যায় না? বর্তমানে ছুটিতে রয়েছেন রতুয়া 1-এর BDO সারওয়ার আলি৷ ফোনে শুধু তিনি জানান, "বিষয়টি আমি জেলাশাসককে জানিয়েছি ৷ এখনও পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের তরফে তেমন কোনও নির্দেশিকা পাইনি ৷ কাজে যোগ দেওয়ার পর এনিয়ে আমি ফের জেলাশাসকের দ্বারস্থ হব৷"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.