মালদা, 12 অগাস্ট : প্রেম নিয়ে মানসিক অবসাদে ফের আত্মঘাতী হল এক নাবালিকা৷ ঘটনাটি ঘটেছে বামনগোলা থানার নন্দনাদহ গ্রামে৷ গতকাল ওই নাবালিকার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠিয়েছে বামনগোলা থানার পুলিশ ৷ এই ঘটনায় মৃতের পরিবারের পক্ষ থেকে নাবালিকার প্রেমিক ও তার দিদির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা হয়েছে৷ যদিও এনিয়ে এখনও পর্যন্ত পুলিশে লিখিত কোনও অভিযোগ দায়ের হয়নি৷
মৃত কিশোরীর নাম শম্পিতা বারই(17) ৷ বাড়ি বামনগোলা ব্লকের চাঁদপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের নন্দনাদহ গ্রামে ৷ সে খুটাদহ উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণিতে পড়ত ৷ বাবা রঞ্জন বারই পেশায় কৃষিজীবী ৷ কিছুদিন আগে খুটাদহ এলাকার এক যুবক আশু বৈরাগীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে শম্পিতা ৷ আশুর দিদি সবিতা বিশ্বাসের শ্বশুরবাড়ি নন্দনাদহ গ্রামে ৷ দিদির বাড়িতে যাতায়াতের সুবাদেই আশুর সঙ্গে পরিচয় হয়েছিল শম্পিতার ৷ মাস ছয়েক আগে সে আশুর হাত ধরে বাড়ি থেকে পালিয়ে যায় ৷ সেই ঘটনার কথা জানতে পেরে শম্পিতার বাবা বামনগোলা থানায় আশু ও তার দিদির বিরুদ্ধে মেয়েকে অপহরণের অভিযোগ দায়ের করেন ৷ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে পুলিশ সবিতাকে আটক করে ৷ পুলিশি জেরায় ভাই ও শম্পিতার গোপন ডেরার ঠিকানা পুলিশকে দিয়ে দেয় সবিতা ৷ পুলিশ দু’জনকে সেই গোপন ডেরা থেকে উদ্ধার করে ৷ সেই ঘটনায় আশুর জেল হেপাজত হয় ৷ বেশ কয়েকদিন সরকারি হোমে কাটাতে হয় শম্পিতাকেও ৷ পরে আশু জামিনে ছাড়া পেয়ে যায় ৷ কিন্তু পুরোনো সেই মামলা তখনও তোলেননি রঞ্জনবাবু ৷ অভিযোগ, সেই মামলা তোলার জন্য আশু ও সবিতা, শম্পিতার উপর চাপ দিতে শুরু করে ৷ কিন্তু তাতেও রঞ্জনবাবু অভিযোগ প্রত্যাহার না করায় শম্পিতাকে বিভিন্নভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছিল বলে অভিযোগ ৷ এতেই মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে শম্পিতা ৷ শেষ পর্যন্ত গতকাল রাতে সে পাশের বাড়িতে কেউ না থাকার সুযোগ নিয়ে সেখানে গিয়ে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে ৷
শম্পিতার জামাইবাবু রবীন্দ্র রায় বলেন, “সবিতার শ্বশুরবাড়িতে আমার শালির যাতায়াত ছিল৷ সেখান থেকে আশুর সঙ্গে তার পরিচয় ৷ সে একবার শম্পিতাকে নিয়ে পালিয়েও যায় ৷ গ্রামবাসীদের চাপে সবিতা ঘটনার কথা স্বীকার করে ৷ কিন্তু তবুও সে শম্পিতাকে বাড়ি ফিরিয়ে আনেনি ৷ তাই আমার শ্বশুর-শাশুড়ি বামনগোলা থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন ৷ পুলিশ দুজনকে উদ্ধার করে ৷ আশুর জেল হেপাজত হয় ৷ পরে জামিনে ছাড়া পেয়েই সে আর তার দিদি আমার শালিকে পুরোনো মামলা প্রত্যাহার করার জন্য হুমকি দিতে শুরু করে ৷ কয়েকদিন আগে আশু ভিনরাজ্যে চলে গিয়েছে ৷ সেখান থেকেও সে শম্পিতার উপর চাপ সৃষ্টি করত ৷ সেই চাপ সহ্য করতে না পেরেই শম্পিতা গতকাল রাতে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে৷ আমরা আশু ও সবিতার উপযুক্ত সাজা চাই৷”
বামনগোলা থানার পুলিশ জানিয়েছে, এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের হয়নি৷ ওই কিশোরীর মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য মালদা মেডিকেলে পাঠানো হয়েছে ৷ ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে ৷ এই ঘটনায় আপাতত একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু হয়েছে ৷