ETV Bharat / state

ঝাপসা হচ্ছে চোখের আলো, তবু বাতাসে সুর ছড়াচ্ছেন ভগবান

author img

By

Published : Feb 22, 2021, 10:13 PM IST

Updated : Mar 17, 2021, 9:31 PM IST

কভি আলবিদা না কহেনা... রাজপথ থেকে শহরের অলিতে গলিতে এভাবেই সুরের মূর্ছনা ছড়িয়ে বেরান তিনি । সঙ্গী পুরানো এক বেহালা ।

মালদার রাস্তায় বেহালার সুর

মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : দিন দিন ঝাপসা হচ্ছে চোখের আলো, তবু বাতাসে সুর ছড়াচ্ছেন ভগবান । সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন শহরের রাস্তায় । হাতে পুরোনো একটা বেহালা । তারে ছড় উঠতেই বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা । আসক্ত শরীরটা একটানা বেশিক্ষণ টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না । খানিক বাদেই থমকাতে হয় । কোথাও বা রাস্তার পাশে বসেও পড়তে হয় । একটু ধাতস্থ হয়ে ফের পথ চলা । সুরের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ বাড়িয়ে দেন খুচরো নোট কিংবা কয়েন । পেট ভরতে সেটাই ভরসা ভগবানের ।

ভগবান মালি । দেখে মনে হবে বয়স বুঝি সত্তর পেরিয়েছে । কিন্তু তা নয়। অভাবী পেট বয়সটা অন্তত বছর পঁচিশেক বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন 56 । দুই চোখেই ছানি । আলোতেও সবকিছু ঠিকমতো ঠাহর হয় না । বেশিরভাগ সময় স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অন্ন সংস্থানে । যা উপার্জন হয়, স্বামী-স্ত্রী আর এক ছেলের পেট কোনওরকমে চলে যায় । মালদা শহরের বালুচর এলাকায় একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকেন তাঁরা ।

ভগবানবাবুর দেশ কিন্তু মালদা নয় । তাঁরা আদপে গুজরাটের বাসিন্দা । আমেদাবাদে তাঁদের আত্মীয়রা এখনও রয়েছেন । পারিবারিক পেশা, বাসনের হকারি করা । তাঁর বাবা কস্তুর মালি আমেদাবাদ থেকে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন । কলকাতার রাসবিহারী এলাকায় জন্ম হয় ভগবানবাবুর । বাবার কাছেই বেহালায় হাতেখড়ি । ছোটোবেলায় দেখেছেন, বাবাও কলকাতার অলিতে গলিতে বেহালা বাজাতেন । কখনও বা কোনও মেহফিলে ডাক পড়ত । সবমিলিয়ে বাবার উপার্জন হত ভালোই ।

আরও পড়ুন : এবার থেকে লোকাল ট্রেনেও বাজবে রবীন্দ্র সংগীত

তাঁর বয়স যখন দশ বছর, তখন মারা যান বাবা । কলকাতা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একবার দার্জিলিং বেড়াতে যান ভগবানবাবু । তখনও সঙ্গী ছিল বেহালা । ম্যালে বেহালা বাজাচ্ছিলেন নিজের মনে । সেখানেই তাঁর প্রথম উপার্জন । বন্ধুরা দার্জিলিং থেকে ফিরে গেলেও সেখানেই থেকে যান তিনি । সেখান থেকে চলে আসেন শিলিগুড়িতে । বেহালা বাজিয়ে সেখানেও ভালোই উপার্জন হত । সেখানেই বিয়ে করেন সরিতা মালিকে । সময়ের পাকে একসময় চলে আসেন মালদা । সেটাও বছর পঁচিশ হয়ে গিয়েছে । ইতিমধ্যে তাঁদের তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয় । বর্তমানে দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে । তাদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই । মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে । ছোটো ছেলে এখনও পড়াশোনা করে ।

Violin player of Malda
পথে ধারে ছায়ায় বসে কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছেন ভগবান, সঙ্গী এখনও বেহালা

ভগবানবাবু বলছেন, "ছোটো থেকেই বেহালা বাজাচ্ছি । ছেলেদেরও শেখাব ভেবেছিলাম । কিন্তু দুই ছেলে বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । আমাদের আর দেখে না । তাই এখনও রাস্তায় বেহালা বাজিয়ে ভাত জোটাতে হয় । দু'চোখে ঠিক দেখতে পাই না । সরকারি কোনও সাহায্য এখনও পাইনি । অনেকবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি । কিছু হয়নি । দুয়ারে সরকারের কথা জানতে পারিনি । একটু সাহায্য পেলে ভালো হয় । ছেলেমেয়েদের বেহালা শেখানোর খুব ইচ্ছে । কিন্তু অভাবের জন্য এখনও সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি ।"

মালদা, 22 ফেব্রুয়ারি : দিন দিন ঝাপসা হচ্ছে চোখের আলো, তবু বাতাসে সুর ছড়াচ্ছেন ভগবান । সকাল হলেই বেরিয়ে পড়ছেন শহরের রাস্তায় । হাতে পুরোনো একটা বেহালা । তারে ছড় উঠতেই বাতাসে ভাসে সুরের মূর্ছনা । আসক্ত শরীরটা একটানা বেশিক্ষণ টেনে নিয়ে যাওয়া যায় না । খানিক বাদেই থমকাতে হয় । কোথাও বা রাস্তার পাশে বসেও পড়তে হয় । একটু ধাতস্থ হয়ে ফের পথ চলা । সুরের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে কেউ কেউ বাড়িয়ে দেন খুচরো নোট কিংবা কয়েন । পেট ভরতে সেটাই ভরসা ভগবানের ।

ভগবান মালি । দেখে মনে হবে বয়স বুঝি সত্তর পেরিয়েছে । কিন্তু তা নয়। অভাবী পেট বয়সটা অন্তত বছর পঁচিশেক বাড়িয়ে দিয়েছে । এখন 56 । দুই চোখেই ছানি । আলোতেও সবকিছু ঠিকমতো ঠাহর হয় না । বেশিরভাগ সময় স্ত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে পড়েন অন্ন সংস্থানে । যা উপার্জন হয়, স্বামী-স্ত্রী আর এক ছেলের পেট কোনওরকমে চলে যায় । মালদা শহরের বালুচর এলাকায় একটি বাড়িতে দীর্ঘদিন ভাড়া থাকেন তাঁরা ।

ভগবানবাবুর দেশ কিন্তু মালদা নয় । তাঁরা আদপে গুজরাটের বাসিন্দা । আমেদাবাদে তাঁদের আত্মীয়রা এখনও রয়েছেন । পারিবারিক পেশা, বাসনের হকারি করা । তাঁর বাবা কস্তুর মালি আমেদাবাদ থেকে পরিবার নিয়ে কলকাতায় চলে এসেছিলেন । কলকাতার রাসবিহারী এলাকায় জন্ম হয় ভগবানবাবুর । বাবার কাছেই বেহালায় হাতেখড়ি । ছোটোবেলায় দেখেছেন, বাবাও কলকাতার অলিতে গলিতে বেহালা বাজাতেন । কখনও বা কোনও মেহফিলে ডাক পড়ত । সবমিলিয়ে বাবার উপার্জন হত ভালোই ।

আরও পড়ুন : এবার থেকে লোকাল ট্রেনেও বাজবে রবীন্দ্র সংগীত

তাঁর বয়স যখন দশ বছর, তখন মারা যান বাবা । কলকাতা থেকে বন্ধুদের সঙ্গে একবার দার্জিলিং বেড়াতে যান ভগবানবাবু । তখনও সঙ্গী ছিল বেহালা । ম্যালে বেহালা বাজাচ্ছিলেন নিজের মনে । সেখানেই তাঁর প্রথম উপার্জন । বন্ধুরা দার্জিলিং থেকে ফিরে গেলেও সেখানেই থেকে যান তিনি । সেখান থেকে চলে আসেন শিলিগুড়িতে । বেহালা বাজিয়ে সেখানেও ভালোই উপার্জন হত । সেখানেই বিয়ে করেন সরিতা মালিকে । সময়ের পাকে একসময় চলে আসেন মালদা । সেটাও বছর পঁচিশ হয়ে গিয়েছে । ইতিমধ্যে তাঁদের তিনটি ছেলে ও একটি মেয়ে হয় । বর্তমানে দুই ছেলে বিয়ে করে আলাদা থাকে । তাদের সঙ্গে আর কোনও যোগাযোগ নেই । মেয়েরও বিয়ে হয়ে গিয়েছে । ছোটো ছেলে এখনও পড়াশোনা করে ।

Violin player of Malda
পথে ধারে ছায়ায় বসে কিছুটা জিরিয়ে নিচ্ছেন ভগবান, সঙ্গী এখনও বেহালা

ভগবানবাবু বলছেন, "ছোটো থেকেই বেহালা বাজাচ্ছি । ছেলেদেরও শেখাব ভেবেছিলাম । কিন্তু দুই ছেলে বিয়ে করে অন্য জায়গায় চলে গিয়েছে । আমাদের আর দেখে না । তাই এখনও রাস্তায় বেহালা বাজিয়ে ভাত জোটাতে হয় । দু'চোখে ঠিক দেখতে পাই না । সরকারি কোনও সাহায্য এখনও পাইনি । অনেকবার প্রশাসনের কাছে গিয়েছি । কিছু হয়নি । দুয়ারে সরকারের কথা জানতে পারিনি । একটু সাহায্য পেলে ভালো হয় । ছেলেমেয়েদের বেহালা শেখানোর খুব ইচ্ছে । কিন্তু অভাবের জন্য এখনও সেই ইচ্ছে পূরণ হয়নি ।"

Last Updated : Mar 17, 2021, 9:31 PM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.