কলকাতা, 13 ফেব্রুয়ারি: দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে এখনও পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee) ও বাংলার সরকারের সঙ্গে কোনও বিরোধ বাধেনি রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের (Bengal Governor CV Ananda Bose) ৷ বরং মুখ্যমন্ত্রীর প্রশংসা বারবার শোনা গিয়েছে তাঁর মুখে ৷ রাজ্য সরকারের সঙ্গেও তাঁর আচরণ সহযোগিতামূলক বলেই সকলের চোখে পড়েছে ৷ বিশেষ করে গত 8 ফেব্রুয়ারি বিরোধী বিজেপির (BJP) বিক্ষোভ উড়িয়ে তিনি যেভাবে বাজেট ভাষণ পাঠ করেন, তার পর মনে হচ্ছিল ধনকড় জমানার মতো নবান্ন ও রাজভবনের সংঘাতের সম্ভাবনা আর নেই ৷
কিন্তু গত শনিবার থেকে হঠাৎই পরিস্থিতির বদল হতে শুরু করেছে ৷ প্রথম রাজ্যের দুর্নীতি নিয়ে সরব হয়েছেন রাজ্যপাল ৷ তার পর তাঁর টিম ঢেলে সাজানোর ইচ্ছাপ্রকাশ করেছেন ৷ যার ফল হিসেবে এতদিন তাঁর প্রধান সচিব হিসেবে কাজ করা নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরানো হচ্ছে ৷ সেই জায়গায় খুব শীঘ্রই অন্য কাউকে আনা হবে বলে রাজভবন সূত্রে খবর ৷ এরই মধ্যে সোমবার নয়াদিল্লিতে উপ রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকড়ের (Vice President Jagdeep Dhankhar) সঙ্গে দেখা করলেন আনন্দ বোস ৷
তাই সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে ফের সরগরম বাংলার রাজনীতি ৷ প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি আবার নবান্ন ও রাজভবনের মধ্যে সংঘাত আসন্ন ? আবারও কি রাজ্যপাল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে প্রশ্ন তুলবেন ? ধনকড়ের সঙ্গে বৈঠক কি তাহলে রুটিন ? নাকি প্রাক্তনের থেকে বাংলার প্রশাসনের হালহকিকৎ জানতে চান বর্তমান, সেই কারণেই নয়াদিল্লিতে উপ রাষ্ট্রপতির বাসভবনে হাজির হয়েছিলেন তিনি ?
-
Dr. C.V. Ananda Bose Ji, Hon'ble Governor of West Bengal, called on Hon'ble Vice President, Shri Jagdeep Dhankhar at Upa-Rashtrapati Nivas today. @BengalGovernor pic.twitter.com/Wpfx9vhkte
— Vice President of India (@VPIndia) February 13, 2023 " class="align-text-top noRightClick twitterSection" data="
">Dr. C.V. Ananda Bose Ji, Hon'ble Governor of West Bengal, called on Hon'ble Vice President, Shri Jagdeep Dhankhar at Upa-Rashtrapati Nivas today. @BengalGovernor pic.twitter.com/Wpfx9vhkte
— Vice President of India (@VPIndia) February 13, 2023Dr. C.V. Ananda Bose Ji, Hon'ble Governor of West Bengal, called on Hon'ble Vice President, Shri Jagdeep Dhankhar at Upa-Rashtrapati Nivas today. @BengalGovernor pic.twitter.com/Wpfx9vhkte
— Vice President of India (@VPIndia) February 13, 2023
প্রশ্নের উত্তর পেতে সময় লাগবে হয়তো ৷ কিন্তু তার আগেই রাজনৈতিক তরজা শুরু হয়ে গিয়েছে বাংলায় ৷ কারণ, ধনকড়ের বিরুদ্ধে বারবার বিজেপির কথায় চলার অভিযোগ উঠেছিল ৷ আর কাকতালীয় ভাবে শনিবার বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের (Sukanta Majumdar) সঙ্গে বৈঠকের পরই ক্রমশ কড়া মনোভাব নিতে দেখা যাচ্ছে আনন্দ বোসকে ৷
প্রসঙ্গত, শনিবার রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক সেরে বেরিয়ে রাজভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, "রাজ্যপাল লোকায়ুক্তের নিয়োগকে অসাংবিধানিক বলে রাজ্য সরকারের কাছে জানিয়ে দিয়েছে । সেটা অনেকেই জানতেন না। আমরাও অনেকেই জানতাম না । আগামী দু-একদিনের মধ্যেই আরও অনেক কিছু জানতে পারবেন ।" আর তার পরই রাজ্যপালের একের পর এক পদক্ষেপ ৷ যা দেখে বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) তো বলেই দিয়েছেন যে ট্র্যাকে ফিরবেন রাজ্যপাল ৷
আসলে নন্দিনী চক্রবর্তীকে নিয়ে অভিযোগ প্রথম তুলেছিলেন বিরোধী দলনেতা ৷ প্রধান সচিবকে দিয়ে রাজ্যপালকে রাজ্যের তরফে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি করেছিলেন ৷ আর রাজ্যপালের প্রধান সচিব পদে রদবদলের বিষয়টি সামনে আসতেই সোমবার শুভেন্দু বলেন, ‘‘রাজ্যপালের সচিবালয় রাজ্যপালের মতো হওয়া উচিত ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতো নয় । রাজ্যপাল মহোদয়কে মিস গাইড করছেন নন্দিনী চক্রবর্তী এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সঙ্গে চিফ সেক্রেটারি । আমি আশাবাদী রাজ্যপাল ট্র্যাকে ফিরবেন৷ ফিরছেন । গোপালকৃষ্ণ গান্ধি এবং জগদীপ ধনকড়ের দেখানো পথে বাংলার নিপীড়িত মানুষদের রক্ষা করার চেষ্টা করবেন এবং সংবিধানকে পূর্ণ মাত্রায় রক্ষা করবেন ।"
এই নিয়ে সিপিএমের সুজন চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘রাজ্যপালের বোধোদয় হয়েছে নাকি তিনি কারও কথায় চলছেন, তা আমার জানা নেই । এটা কখনও চলে না । তবে একটা স্বস্তি হল রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী এখন যে রকম একে অপরের প্রশংসায় ভরে রয়েছেন নিশ্চয়ই কোনও সিদ্ধান্ত নিতে গেলে তাঁরা একে অপরের সঙ্গে আলোচনা করেই নেবেন । এই বিষয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অবিলম্বে রাজ্যপালের সঙ্গে আলোচনা করুন । আলোচনা করে সহমতে সিদ্ধান্ত নিন ।"
অন্যদিকে বিজেপি নেতা ও প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি রাহুল সিনহা বলেন, "এই সিদ্ধান্ত রাজ্যপাল হঠাৎ করে নেননি ৷ তিনি এখানে এসেছেন কিছুটা সময় অতিবাহিত করেছেন বাংলা সার্বিক পরিস্থিতি এবং বাংলার রাজনীতি বুঝতে তো তাঁর এতোটুকু সময় লাগবে । নন্দিনী চক্রবর্তীর সম্বন্ধে রাজ্যপালের নিশ্চয়ই কোনও বিশেষ অবজারভেশন আছে । তাই রাজ্যপালের এই সিদ্ধান্ত ৷ এর সঙ্গে কোনও দলকে যুক্ত করে দেওয়াটা ঠিক হবে না ।"
আর এই পরিস্থিতি মুখে কুলুপ আঁটাই বোধহয় শ্রেয় মনে করছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতারা ৷ তাই এই বিষয়ে ঘাসফুল শিবিরের কেউই কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি ৷
আরও পড়ুন: দুর্নীতি বরদাস্ত নয়, রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষায় যথাসময়ে 'সক্রিয়' পদক্ষেপ; বার্তা রাজ্যপালের