ETV Bharat / state

আলুর অধিক ফলনে দাম না পাওয়ার শঙ্কা, ভিনরাজ্যে রফতানিতে সুরাহা মেলার আশা চাষিদের - POTATO FARMERS

এবছর হুগলিতে 92 হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । বিঘা প্রতি 60 থেকে 70 বস্তা আলু উৎপাদন হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে ।

potato farmers
আলু চাষ বেশি হয়েছে হুগলিতে (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Feb 18, 2025, 9:16 PM IST

চুঁচুড়া, 18 ফ্রেব্রুরারি: এ বছর ফলন ভালো ৷ তাই আলুর উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তাই রাজ্য সরকার যদি এবছরও তাদের নীতি মেনে রাজ্য সরকার যদি আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন কৃষকরা । তাঁদের আশঙ্কা, ভিনরাজ্যে আলু না গেলে দাম তলানিতে এসে ঠেকবে ৷

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এবার আলু চাষ বেশি হয়েছে হুগলিতে । সেই কারণেই ফলনও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফে গত বছর রাজ্যের বাইরে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকার যদি একটা নীতি নির্ধারণ না করে, তাহলে সমস্যায় পড়বেন চাষি থেকে আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কারবারিরা ৷

potato farmers
ভিন্ন রাজ্যে আলু রফতানির দাবি চাষিদের (নিজস্ব ছবি)

রাজ্যে আলু উৎপাদনে এগিয়ে হুগলি, বর্ধমান, উত্তর 24 পরগনা ও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা । কৃষকদের সঙ্গে বহু মানুষ এই আলুর কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকেন । শুধু তাই নয়, এই রাজ্য থেকে পাঠানো আলুর উপর নির্ভর করে বিহার, ওড়িশা, অসম ও বাংলাদেশ । যদি অধিক ফলনের জন্য রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর এখন থেকেই আলু বাইরে পাঠানোর কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, বছরের শেষে ফের আলু নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে । কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "আলুর উৎপাদন আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে । সামগ্রিকভাবে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে । প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"

আলু উৎপাদনে অন্যতম জেলা হুগলি । গত বছর হুগলিতে 88 হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও হেক্টর প্রতি প্রায় 27 টন আলু উৎপাদন হয় । এবছর 92 হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । বিঘা প্রতি 60 থেকে 70 বস্তা আলু উৎপাদন হবে ।

হুগলি জেলার উপকৃষি অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মারদানা বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছরে আলুর চাষের জমি অনেকটাই বেড়েছে । আলু গাছ ভালোই হয়েছে । রোগ পোকার আক্রমণ নেই । তবে আলুর কান্ড পচার লক্ষণ দেখা গিয়েছে ইতিমধ্যেই । আলু গাছ রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । গত বছর হেক্টর প্রতি 27 টন আলু উৎপাদন হয়েছিল ৷ এ বছর তার তুলনায় অনেকটাই বেশি হবে আশা করা যায় ।"

potato farmers
এবার আলুর অধিক উৎপাদন হবে বলে অনুমান (নিজস্ব ছবি)

ভাগচাষি অসিত বাগের কথায়, ‘‘এ বছর আলু উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে । যদি রাজ্য সরকার আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে কৃষকরা আরও সমস্যায় পড়বে । অন্যের রাজ্যের আলু এ রাজ্যে আসছে । অথচ আমাদের রাজ্যের আলু অন্য রাজ্যে যেতে দিচ্ছে না । এখন তিন টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, এতো টাকার সার ওষুধ খরচ করে কী লাভ পাব আমরা । এমনিতেই লোকের জমি লিজে নিয়ে আমরা চাষ করি । সরকারি তরফে আমরা কোনও অনুদান পাব না ৷ তাহলে আমরা কোথায় যাব ।"

আরেক ভাগচাষি বাবলু পণ্ডিত বলেন, "এ বছর আলুর ফলন বেশি হলেও আমরা পয়সা পাব না । ঝড়-বৃষ্টি হয়নি, সেই কারণে আলু চাষে ক্ষতির পরিমাণও কম । ফসলও আশা করি ভালোই হবে । গড়ে বিঘা প্রতি 70 বস্তা করে আলু হবে । আমাদের বিঘা প্রতি 22 থেকে 23 হাজার টাকা খরচ হয়েছে । আমরা বেশিরভাগই ভাগচাষি । জমির মালিককে ভাগ দিতেই সব চলে যাবে । গত বছর বিঘাতে 30 থেকে 40 বস্তা চালু হয়েছিল । দামটাও বেশি ছিল তাই পুষিয়ে গিয়েছিল ।"

potato farmers
আলুর অধিক ফলনে দাম না পাওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের (নিজস্ব ছবি)

হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভজিৎ সাহা বলেন, "বর্তমানে কৃষকরা দাম কম পাচ্ছে এটা একটা নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে । 2024 সালে রাজ্য থেকে বাইরের রাজ্যে আলুর রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হয় । মানুষকে কম দামে আলু খাওয়ানোর জন্য বর্ডার সিল করার চিন্তা ভাবনা ছিল সরকারের । এর ফলে হিমঘরে আলুর মজুত রয়ে গেল । আজও মেদিনীপুর জেলায় দেড় থেকে দু’লক্ষ আলুর বস্তা পড়ে আছে । তাই নতুন আলুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না ।"

তিনি আরও বলেন "বর্তমানে কৃষকরা কেজি প্রতি 6 টাকা থেকে 7 টাকার মধ্যে আলুর দাম পাচ্ছে । এর তুলনায় গত বছর অনেকটাই দাম পেয়েছিল কৃষকরা । বর্তমানে কাঁচা আলুর দাম 320 (50 কেজি) বস্তা । এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা দাম কম পেলেও বাজারে 12 টাকা থেকে 16 টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এখন হিমঘর মালিকও নেই ৷ আর বড় ব্যবসায়ীও যুক্ত নয় বাজারে । এখন এত দাম হওয়ার কারণটা কী ? এর জন্য সরকারি টাস্ক ফোর্স নজরদারি করা উচিত । বাজারে কৃষকরা দাম পাচ্ছে না অথচ সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে কেন আলু খাবে ।"

আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, "গত বছরের তুলনায় 7 থেকে 8 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন বেশি হবে । দাম বেশি হবে না । সরকারি তরফে বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করা হয়েছিল । এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারের একটা নীতি নিধারণ করা উচিত । সঙ্গে কৃষকদের সহায়ক মূল্যের বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত ।"

চুঁচুড়া, 18 ফ্রেব্রুরারি: এ বছর ফলন ভালো ৷ তাই আলুর উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তাই রাজ্য সরকার যদি এবছরও তাদের নীতি মেনে রাজ্য সরকার যদি আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন কৃষকরা । তাঁদের আশঙ্কা, ভিনরাজ্যে আলু না গেলে দাম তলানিতে এসে ঠেকবে ৷

কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এবার আলু চাষ বেশি হয়েছে হুগলিতে । সেই কারণেই ফলনও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফে গত বছর রাজ্যের বাইরে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকার যদি একটা নীতি নির্ধারণ না করে, তাহলে সমস্যায় পড়বেন চাষি থেকে আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কারবারিরা ৷

potato farmers
ভিন্ন রাজ্যে আলু রফতানির দাবি চাষিদের (নিজস্ব ছবি)

রাজ্যে আলু উৎপাদনে এগিয়ে হুগলি, বর্ধমান, উত্তর 24 পরগনা ও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা । কৃষকদের সঙ্গে বহু মানুষ এই আলুর কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকেন । শুধু তাই নয়, এই রাজ্য থেকে পাঠানো আলুর উপর নির্ভর করে বিহার, ওড়িশা, অসম ও বাংলাদেশ । যদি অধিক ফলনের জন্য রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর এখন থেকেই আলু বাইরে পাঠানোর কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, বছরের শেষে ফের আলু নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে । কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "আলুর উৎপাদন আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে । সামগ্রিকভাবে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে । প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"

আলু উৎপাদনে অন্যতম জেলা হুগলি । গত বছর হুগলিতে 88 হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও হেক্টর প্রতি প্রায় 27 টন আলু উৎপাদন হয় । এবছর 92 হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । বিঘা প্রতি 60 থেকে 70 বস্তা আলু উৎপাদন হবে ।

হুগলি জেলার উপকৃষি অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মারদানা বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছরে আলুর চাষের জমি অনেকটাই বেড়েছে । আলু গাছ ভালোই হয়েছে । রোগ পোকার আক্রমণ নেই । তবে আলুর কান্ড পচার লক্ষণ দেখা গিয়েছে ইতিমধ্যেই । আলু গাছ রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । গত বছর হেক্টর প্রতি 27 টন আলু উৎপাদন হয়েছিল ৷ এ বছর তার তুলনায় অনেকটাই বেশি হবে আশা করা যায় ।"

potato farmers
এবার আলুর অধিক উৎপাদন হবে বলে অনুমান (নিজস্ব ছবি)

ভাগচাষি অসিত বাগের কথায়, ‘‘এ বছর আলু উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে । যদি রাজ্য সরকার আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে কৃষকরা আরও সমস্যায় পড়বে । অন্যের রাজ্যের আলু এ রাজ্যে আসছে । অথচ আমাদের রাজ্যের আলু অন্য রাজ্যে যেতে দিচ্ছে না । এখন তিন টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, এতো টাকার সার ওষুধ খরচ করে কী লাভ পাব আমরা । এমনিতেই লোকের জমি লিজে নিয়ে আমরা চাষ করি । সরকারি তরফে আমরা কোনও অনুদান পাব না ৷ তাহলে আমরা কোথায় যাব ।"

আরেক ভাগচাষি বাবলু পণ্ডিত বলেন, "এ বছর আলুর ফলন বেশি হলেও আমরা পয়সা পাব না । ঝড়-বৃষ্টি হয়নি, সেই কারণে আলু চাষে ক্ষতির পরিমাণও কম । ফসলও আশা করি ভালোই হবে । গড়ে বিঘা প্রতি 70 বস্তা করে আলু হবে । আমাদের বিঘা প্রতি 22 থেকে 23 হাজার টাকা খরচ হয়েছে । আমরা বেশিরভাগই ভাগচাষি । জমির মালিককে ভাগ দিতেই সব চলে যাবে । গত বছর বিঘাতে 30 থেকে 40 বস্তা চালু হয়েছিল । দামটাও বেশি ছিল তাই পুষিয়ে গিয়েছিল ।"

potato farmers
আলুর অধিক ফলনে দাম না পাওয়ার আশঙ্কা কৃষকদের (নিজস্ব ছবি)

হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভজিৎ সাহা বলেন, "বর্তমানে কৃষকরা দাম কম পাচ্ছে এটা একটা নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে । 2024 সালে রাজ্য থেকে বাইরের রাজ্যে আলুর রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হয় । মানুষকে কম দামে আলু খাওয়ানোর জন্য বর্ডার সিল করার চিন্তা ভাবনা ছিল সরকারের । এর ফলে হিমঘরে আলুর মজুত রয়ে গেল । আজও মেদিনীপুর জেলায় দেড় থেকে দু’লক্ষ আলুর বস্তা পড়ে আছে । তাই নতুন আলুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না ।"

তিনি আরও বলেন "বর্তমানে কৃষকরা কেজি প্রতি 6 টাকা থেকে 7 টাকার মধ্যে আলুর দাম পাচ্ছে । এর তুলনায় গত বছর অনেকটাই দাম পেয়েছিল কৃষকরা । বর্তমানে কাঁচা আলুর দাম 320 (50 কেজি) বস্তা । এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা দাম কম পেলেও বাজারে 12 টাকা থেকে 16 টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এখন হিমঘর মালিকও নেই ৷ আর বড় ব্যবসায়ীও যুক্ত নয় বাজারে । এখন এত দাম হওয়ার কারণটা কী ? এর জন্য সরকারি টাস্ক ফোর্স নজরদারি করা উচিত । বাজারে কৃষকরা দাম পাচ্ছে না অথচ সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে কেন আলু খাবে ।"

আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, "গত বছরের তুলনায় 7 থেকে 8 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন বেশি হবে । দাম বেশি হবে না । সরকারি তরফে বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করা হয়েছিল । এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারের একটা নীতি নিধারণ করা উচিত । সঙ্গে কৃষকদের সহায়ক মূল্যের বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.