চুঁচুড়া, 18 ফ্রেব্রুরারি: এ বছর ফলন ভালো ৷ তাই আলুর উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে বলে আশা করা হচ্ছে । তাই রাজ্য সরকার যদি এবছরও তাদের নীতি মেনে রাজ্য সরকার যদি আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে তাঁরা সমস্যায় পড়বেন বলে মনে করছেন কৃষকরা । তাঁদের আশঙ্কা, ভিনরাজ্যে আলু না গেলে দাম তলানিতে এসে ঠেকবে ৷
কৃষি দফতর সূত্রে খবর, এবার আলু চাষ বেশি হয়েছে হুগলিতে । সেই কারণেই ফলনও বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে । রাজ্য সরকারের তরফে গত বছর রাজ্যের বাইরে আলু পাঠানোর উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে । প্রগতিশীল আলু ব্যবসায়ী সমিতির দাবি, এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকার যদি একটা নীতি নির্ধারণ না করে, তাহলে সমস্যায় পড়বেন চাষি থেকে আলু ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত কারবারিরা ৷
রাজ্যে আলু উৎপাদনে এগিয়ে হুগলি, বর্ধমান, উত্তর 24 পরগনা ও উত্তরবঙ্গের বেশ কিছু জেলা । কৃষকদের সঙ্গে বহু মানুষ এই আলুর কারবারের সঙ্গে যুক্ত থাকেন । শুধু তাই নয়, এই রাজ্য থেকে পাঠানো আলুর উপর নির্ভর করে বিহার, ওড়িশা, অসম ও বাংলাদেশ । যদি অধিক ফলনের জন্য রাজ্যের কৃষি বিপণন দফতর এখন থেকেই আলু বাইরে পাঠানোর কোনও সিদ্ধান্ত না নেয়, বছরের শেষে ফের আলু নিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে । কৃষি বিপণন মন্ত্রী বেচারাম মান্না বলেন, "আলুর উৎপাদন আবহাওয়া, প্রকৃতি ও পরিবেশের উপর নির্ভর করে । সামগ্রিকভাবে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে । প্রয়োজন অনুযায়ী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে ।"
আলু উৎপাদনে অন্যতম জেলা হুগলি । গত বছর হুগলিতে 88 হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছিল । প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পরও হেক্টর প্রতি প্রায় 27 টন আলু উৎপাদন হয় । এবছর 92 হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে । বিঘা প্রতি 60 থেকে 70 বস্তা আলু উৎপাদন হবে ।
হুগলি জেলার উপকৃষি অধিকর্তা মৃত্যুঞ্জয় মারদানা বলেন, "গত বছরের তুলনায় এ বছরে আলুর চাষের জমি অনেকটাই বেড়েছে । আলু গাছ ভালোই হয়েছে । রোগ পোকার আক্রমণ নেই । তবে আলুর কান্ড পচার লক্ষণ দেখা গিয়েছে ইতিমধ্যেই । আলু গাছ রক্ষায় চাষিদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে । গত বছর হেক্টর প্রতি 27 টন আলু উৎপাদন হয়েছিল ৷ এ বছর তার তুলনায় অনেকটাই বেশি হবে আশা করা যায় ।"
ভাগচাষি অসিত বাগের কথায়, ‘‘এ বছর আলু উৎপাদন অনেকটাই বেশি হবে । যদি রাজ্য সরকার আলু ভিনরাজ্যে না পাঠায়, তাহলে কৃষকরা আরও সমস্যায় পড়বে । অন্যের রাজ্যের আলু এ রাজ্যে আসছে । অথচ আমাদের রাজ্যের আলু অন্য রাজ্যে যেতে দিচ্ছে না । এখন তিন টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হচ্ছে, এতো টাকার সার ওষুধ খরচ করে কী লাভ পাব আমরা । এমনিতেই লোকের জমি লিজে নিয়ে আমরা চাষ করি । সরকারি তরফে আমরা কোনও অনুদান পাব না ৷ তাহলে আমরা কোথায় যাব ।"
আরেক ভাগচাষি বাবলু পণ্ডিত বলেন, "এ বছর আলুর ফলন বেশি হলেও আমরা পয়সা পাব না । ঝড়-বৃষ্টি হয়নি, সেই কারণে আলু চাষে ক্ষতির পরিমাণও কম । ফসলও আশা করি ভালোই হবে । গড়ে বিঘা প্রতি 70 বস্তা করে আলু হবে । আমাদের বিঘা প্রতি 22 থেকে 23 হাজার টাকা খরচ হয়েছে । আমরা বেশিরভাগই ভাগচাষি । জমির মালিককে ভাগ দিতেই সব চলে যাবে । গত বছর বিঘাতে 30 থেকে 40 বস্তা চালু হয়েছিল । দামটাও বেশি ছিল তাই পুষিয়ে গিয়েছিল ।"
হিমঘর মালিক অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শুভজিৎ সাহা বলেন, "বর্তমানে কৃষকরা দাম কম পাচ্ছে এটা একটা নির্দিষ্ট কারণ রয়েছে । 2024 সালে রাজ্য থেকে বাইরের রাজ্যে আলুর রফতানি বন্ধ করে দেওয়া হয় । মানুষকে কম দামে আলু খাওয়ানোর জন্য বর্ডার সিল করার চিন্তা ভাবনা ছিল সরকারের । এর ফলে হিমঘরে আলুর মজুত রয়ে গেল । আজও মেদিনীপুর জেলায় দেড় থেকে দু’লক্ষ আলুর বস্তা পড়ে আছে । তাই নতুন আলুর দাম পাওয়া যাচ্ছে না ।"
তিনি আরও বলেন "বর্তমানে কৃষকরা কেজি প্রতি 6 টাকা থেকে 7 টাকার মধ্যে আলুর দাম পাচ্ছে । এর তুলনায় গত বছর অনেকটাই দাম পেয়েছিল কৃষকরা । বর্তমানে কাঁচা আলুর দাম 320 (50 কেজি) বস্তা । এই পরিস্থিতিতে কৃষকরা দাম কম পেলেও বাজারে 12 টাকা থেকে 16 টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে । এখন হিমঘর মালিকও নেই ৷ আর বড় ব্যবসায়ীও যুক্ত নয় বাজারে । এখন এত দাম হওয়ার কারণটা কী ? এর জন্য সরকারি টাস্ক ফোর্স নজরদারি করা উচিত । বাজারে কৃষকরা দাম পাচ্ছে না অথচ সাধারণ মানুষ এত দাম দিয়ে কেন আলু খাবে ।"
আলু ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক লালু মুখোপাধ্যায় বলেন, "গত বছরের তুলনায় 7 থেকে 8 লক্ষ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন বেশি হবে । দাম বেশি হবে না । সরকারি তরফে বাইরের রাজ্যে আলু পাঠানো বন্ধ করা হয়েছিল । এবছর আলু মজুত ও ব্যবসার ক্ষেত্রে সরকারের একটা নীতি নিধারণ করা উচিত । সঙ্গে কৃষকদের সহায়ক মূল্যের বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত ।"