কলকাতা, 31 জুলাই : ওয়ার্ক ফ্রম হোম ৷ যে কোনও চাকুরিজীবীর কাছে এটা সবথেকে বড় চাহিদা ৷ বাড়িতে বসে অফিসের কাজ করব ৷ মাঝে মাঝে নিজের ইচ্ছেমতো চায়ের কাপে চুমুক দেব ৷ এককথায় যখন যা মন চায় তাই করব ৷ কিন্তু কোরোনা আমাদের সামনে আয়না তুলে ধরেছে ৷ বুঝতে সাহায্য করেছে যে, ওয়ার্ক ফ্রম হোমের যে ধারণা আমাদের রয়েছে তা আসলে শুধুই ধারণা ৷ বাস্তবটা একদমই অন্যরকম ৷ আর কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রে ওয়ার্ক ফ্রম হোম কার্যত অভিশাপ ৷
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ক্ষেত্রে মহিলাদের উপরই যে চাপ বৃদ্ধি হয়েছে বেশি তা মানছেন বেশিরভাগ কর্মরত মহিলাই ৷ একটি NGO-তে কর্মরত অমৃতা দাশগুপ্ত বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতিতে ওয়ার্ক ফ্রম হোমের সুবিধা সবাই পাচ্ছে ৷ কিন্তু বাড়ি থেকে কাজ করার এই বিষয়টা মহিলাদের উপর অসম্ভব একটা চাপ সৃষ্টি হয়েছে ৷ আমাদের হঠাৎ করে বাড়ির কাজ ও বাইরের জগতের কাজ একসঙ্গে করতে হচ্ছে ৷ আর এর মাঝে কোনও ব্রেকও মিলছে না ৷ আগে যে ঘুরতে যেতাম, বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম সেসব কিছুই নেই ৷"
অমৃতার মতে, যাদের বাড়িতে ছোটো সন্তান রয়েছে তাদের চাপ আরও বেশি ৷ অমৃতা বলেন, "এখন বাচ্চাদের স্কুল নেই ৷ তাই কোনওরকম অ্যাক্টিভিটিও নেই ৷ তার উপর তাদের অনলাইন ক্লাস থেকে শুরু করে হোম ওয়ার্ক সবদিকেই নজর রাখতে হচ্ছে ৷ আর এইসব করে সময় কেটে যাচ্ছে ৷ আর এটাই কর্মরত মহিলাদের ক্ষেত্রে অন্যতম চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷"
অমৃতা জানান, কর্মরত মহিলাদের অন্যতম একটা মাথাব্যথা বাড়ির কাজ ৷ কারণ এই পরিস্থিতিতে অনেকের বাড়িতেই কাজের লোক আসছেন না ৷ আর যদিও কারও বাড়িতে আসছেন তাও পুরো সময়ের জন্য নয় ৷ ফলে বাড়ির কাজও নিজেদেরই করতে হচ্ছে ৷ কিছু কিছু মহিলাদের স্বামী সাহায্য করার চেষ্টা করছে ঠিকই ৷ কিন্তু তা অনেকসময় চেষ্টাই থেকে যাচ্ছে ৷ ফলে সবশেষে বাড়ির কাজ সেই একা হাতে মহিলাদেরই সম্পন্ন করতে হচ্ছে ৷
ওয়ার্ক ফ্রম হোমের ফলে কর্মরত মহিলাদের উপর যে বাড়তি চাপ তৈরি হয়েছে তা মেনে নিয়েছেন সাইকোলজির অধ্যাপিকা পৃথা মুখোপাধ্যায় ৷ তবে, তাঁর মতে, পরিবারের সাহায্য পেলে এই মানসিক চাপ কাটিয়ে ওঠা সম্ভব ৷ তিনি বলেন, "প্রথমে আমাদের দেখতে হবে, যাঁদের কথা হচ্ছে তাঁরা বিবাহিত না অবিবাহিত ৷ তাঁদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে না ওয়ার্ক ফ্রম হোম করতে হচ্ছে ৷ ফলে যাঁদের বাড়ির বাইরে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের মধ্যে একদিকে মানসিক চাপ তৈরি হচ্ছে ৷ অন্যদিকে যাঁরা ওয়ার্ক ফ্রম হোম করছেন তাঁদেরও মানসিক চাপে থাকতে হচ্ছে ৷ সেক্ষেত্রে পারিপার্শ্বিক দিকগুলি ঠিক থাকলে চাপটা খানিকটা কমে ৷ সমস্ত কাজ যদি পরিবারের অন্যদের সঙ্গে ভাগ করে নেওয়া যায় তাহলেও সমস্যার সুরাহা সম্ভব ৷"
পরিবারের সমর্থন থাকলে যেকোনও লড়াই সহজ হয়ে ওঠে ৷ কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে শুধু যাঁরা কাজ করছেন তাঁরাই যে মানসিক চাপে রয়েছেন তেমনটা নয় ৷ দীর্ঘদিন বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে আবদ্ধ থাকতে থাকতে কমবেশি সকলের উপরেই মানসিক চাপ তৈরি হয়েছে ৷ তাই এই পরিস্থিতিতে কে কার পাশে দাঁড়াবে সেটাই প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে? এমন একটা প্রশ্ন যার উত্তর নেই কারও কাছেই ৷