কলকাতা, 9 মার্চ: 'যুব কল্যাণ ও ক্রীড়া মন্ত্রক'-এর অধীনস্ত নেহরু যুব কেন্দ্র (Nehru Youth Centre), ভারত সরকারের সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে বেহালার সরশুনা স্যাটেলাইট টাউনশিপ-এর বিবেক ভবনে একটি নারী সম্মাননা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে 'শ্রাবন্তী কলাকেন্দ্র'। উল্লেখ্য, 30 বছরেরও বেশি সময় ধরে বাংলার বুকে বছরভর নারীদের নিয়ে নানারকম সাংস্কৃতিক ও সামাজিক কাজ করে এই সংগঠন। সেখানেই উঠে এল এক স্কুল তৈরির গল্প ৷
চলতি বছরে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে 'আজকের নারী' শীর্ষক একটি আলোচনার পাশাপাশি সম্মানজ্ঞাপন করা হয় সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রের কৃতী নারীদের। সম্মানিতদের তালিকায় ছিলেন শিক্ষিকা সোনালী মুখোপাধ্যায়, সঙ্গীত ভারতী দীপশ্রী, ডাঃ দেবযানী ভট্টাচার্য, মানব ভারতী ডঃ বলাকা বন্দ্যোপাধ্যায়, শিক্ষিকা অনন্যা ভট্টাচার্য এবং সমাজসেবী অর্চিতা দাস। প্রত্যেকেই এই দিনটি ঘিরে নিজেদের বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বলেন, "নারীর জন্য আলাদা করে কোনও দিন বরাদ্দ করার দরকার পড়ে না। প্রত্যেকটা দিনই তাঁদের দিন।"
শ্রাবন্তী কলাকেন্দ্রের অধ্যক্ষা নৃত্যগুরু শ্রাবণী রায়ের পরিচালনায় ও উইমেন্স ক্রিয়েশনের বিশেষ সহযোগিতায় আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব দেবাশিস দাস ও অন্যান্য বিশিষ্টজনদের উপস্থিতিতে শ্বেতা মোদকের 'ডিমওয়ালা' ও ইন্দ্রাণী গঙ্গোপাধ্যায়ের 'বাঁশরী', এই দু'টি নারী উদ্যোগকেও বিশেষ সম্মান জানানো হয়। দীর্ঘ 30 বছর ধরে সব বয়সের মেয়েদের সাংস্কৃতিক চর্চায় উদ্বুদ্ধ করার পাশাপাশি কখনও বিশেষভাবে সক্ষম শিশু, কখনও দৃষ্টিহীন ছেলেমেয়ে কিংবা একেবারে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির ছেলেমেয়েদের মধ্যে সাংস্কৃতিক চেতনার উন্মেষের সঙ্গে আত্মবিকাশের প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে শ্রাবন্তী কলাকেন্দ্র। শুধুমাত্র নাচ, গান শেখা এবং বছরান্তে একটি সার্টিফিকেট প্রাপ্তি নয়, বহু বছর ধরে সেই শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে নারীকে স্বনির্ভর হওয়ার পথ দেখিয়ে যাচ্ছে 'শ্রাবন্তী কলাকেন্দ্র'।
আরও পড়ুন: রামোজি ফিল্ম সিটিতে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন
এদিন মঞ্চে উপস্থিত প্রত্যেকেই জানান, নিজেদের নানান অভিজ্ঞতার কথা। শিক্ষিকা অনন্যা ভট্টাচার্যর কথায় উঠে আসে, তিনি এসএসসি (SSC) পাশ করে যখন সরকারি স্কুলে পড়াতে গেলেন, দেখলেন স্কুলের নিজস্ব কোনও বাড়িই নেই। ফান্ড আছে। উদ্যোগ নিয়ে বিল্ডিং তুলতে হবে। উদ্যোগ নেবে কে? কারণ সেই স্কুলের হেডমাস্টারমশাই স্কুল ছেড়ে চলে গিয়েছেন। শিক্ষকরা কেউই এগিয়ে আসেন না স্কুল বিল্ডিং গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়ে। বিডিও অফিসে গিয়ে স্কুলের এই হালের কথা জানালে তাঁকেই উদ্যোগ নিতে বলা হয়। তিনি যখন বলেন, "আমার পক্ষে তো ছোটাছুটি করা সম্ভব নয়। শিক্ষকদের কাছে সাইকেল, বাইক আছে। তাঁদের কাছে কাজটা সহজ।" তখন তাঁকে শুনতে হয়, আপনি কি কোনও পুরুষ কর্মীর থেকে বেতন কম নেবেন? জেদ চেপে যায় তাঁর মনে।" সেদিন স্কুলের বিল্ডিং গড়ে তোলার দায়িত্ব নিজের কাঁধেই তুলে নেন তিনি। সেই স্কুল আজ তিনতলা।...