ETV Bharat / state

ভুল চিকিৎসায় বাদ জরায়ু,কলকাতা মেডিকেল কলেজে এসে প্রাণে বাঁচল বিহারের যুবতি - Cancer

ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন ৷ তৈরি হয়েছিল জীবন সংশয় ৷ কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় ফিরে পেলেন জীবন ৷

যুবতি
author img

By

Published : Sep 2, 2019, 5:43 AM IST

Updated : Sep 2, 2019, 7:48 AM IST

কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর : নিজের রাজ্যে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছিলেন বিহারের এক যুবতি ৷ বাদ দেওয়া হয় তাঁর জরায়ু ৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি ইউরেটার তথা কিডনির নালি । তৈরি হয় প্রাণহানির আশঙ্কা ৷ শেষপর্যন্ত কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় জীবন ফিরে পেলেন বছর 27-র সুষমা দেবী ৷

বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা সুষমা । দুই সন্তান রয়েছে তাঁর ৷ সম্প্রতি ফের অন্ত্বঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি ৷ কিন্তু, কয়েকদিন পর তাঁর যৌনাঙ্গ থেকে শুরু হয় রক্তক্ষরণ । ভরতি করা হয় ভাগলপুরের সদর হাসপাতালে । সেখানে গত বছর সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে দু'দফায় সুষমার অস্ত্রোপচার হয় ৷ বাদ দেওয়া হয় তাঁর জরায়ু ৷ তাতে সমস্যার সুরাহা হয়নি ৷ হতে থাকে রক্তক্ষরণ ৷ এরপর বাধ্য হয়ে সুষমাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ৷ আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয় । চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয় ৷ কিন্তু, বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ ৷ 27 ফেব্রুয়ারি তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা ৷ তখন তাঁর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক ৷ প্রাণ বাঁচানো নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকরা ৷ তবে, হাল ছাড়েননি তাঁরা ৷ শুরু হয় কেমোথেরাপি ৷ বৃহস্পতিবার তা শেষ হয়েছে ৷ পরদিন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় ৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থ রয়েছেন সুষমা ৷ তবে, ছয় সপ্তাহ পর হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ফের তাঁর চিকিৎসা শুরু হবে ।

কিন্তু, ঠিক কী হয়েছিল সুষমার ? মেডিকেল কলেজের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তারাশংকর বাগ বলেন, "সুষমার মোলার প্রেগনেন্সি হয়েছিল । কোনও কারণে বিহারে এটা ধরা পড়েনি । এই ধরনের প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় । যদি দেখা যায় hCG হরমোনের মাত্রা বাড়ছে, তা হলে কেমোথেরাপি দিতে হয় । বিহারে এটা ধরা না পড়ার কারণে রোগীর পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা হয় । দু'বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল । তাঁর জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয় । এটা যথাযথ চিকিৎসা নয় । সেজন্য রক্তক্ষরণ কমছিল না । এরপর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যুবতির রোগ নির্ণয় হয়েছিল । কিন্তু, এই হাসপাতালেও এই রোগীর পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা হয় । তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনির একটি নালি । তার জেরে সবসময় ইউরিন(মূত্র) বের হচ্ছিল । অন্য উপসর্গগুলির কোনও পরিবর্তন হচ্ছিল না ।" সুষমাকে যখন মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁকে প্রাণে বাঁচানোই ছিল চ্যালেঞ্জ ৷ এক বছর আগেই সুষমার কেমোথেরাপি শুরু করা প্রয়োজন ছিল বলে জানান তারাশংকরবাবু ৷ একই বক্তব্য চিকিৎসক অজন্তা সামন্তেরও ৷ তিনি বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের এখানে ভরতি হন, তখন তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল । তখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল । এর পাশাপাশি ছিল অ্যানিমিয়া ৷ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম ছিল ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

মেডিকেল কলেজে কেমোথেরাপি শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ কিন্তু, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকায় প্রথমে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন চিকিৎসকরা ৷ অজন্তা বলেন, "কেমোথেরাপি শুরুর পর অনেকবার এমন হয়েছে যে বাকি রক্তকণিকাগুলির পরিমাণ অনেক কমে গেছে । পরে তা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ।" তারাশংকরবাবু বলেন, "তিনটি অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সমস্যা তৈরি হয়েছিল । এখন ভালো আছেন তিনি । বিপদ মুক্ত বলা যেতে পারে । মোলার প্রেগনেন্সির কারণে এখন তাঁর আর জীবন সংশয় নেই । এরপর ইউরেটর ঠিক করতে হবে । তবে, এক্ষেত্রে রোগী যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তাঁকে ফলো-আপে রাখতে হবে ৷"

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রেগনেন্সির সময় জরায়ুতে যে প্লাসেন্টা তৈরি হয়, সেখানে টিউমার তৈরি হয় । এটাকেই মোলার প্রেগনেন্সি বলে । 16 থেকে 18 শতাংশ ক্ষেত্রে এই টিউমার ক্যানসারে পরিণত হয় । ভারতে 400টির মধ্যে একটি ক্ষেত্রে মোলার প্রেগনেন্সি হয় । যদি ঠিক মতো রোগনির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা হয়, তা হলে এটা কোনও সমস্যা নয় বলে বক্তব্য চিকিৎসকদের ৷ তারাশংকরবাবু বলেন, "এটাই একমাত্র ক্যানসার, যেখানে কেমোথেরাপির ফলে রোগী 100 শতাংশ সেরে ওঠেন ৷ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না ‌। তবে, কেমোথেরাপি না দেওয়া হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে ।"

তবে জরায়ু বাদ দেওয়ার কারণে সুষমা আর কখনও মাতৃত্বের স্বাদ পাবেন না বলে জানান তারাশংকরবাবু ৷ তবুও মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসে মুখে হাসি ফুটেছে সুষমার ৷ বলেন, "চিকিৎসকরা প্রথমে বলেছিলেন, আমি বাঁচতে পারব না । কিন্তু, এখন ভালো আছি ।" তাঁর মা কৌশল্যা দেবী বলেন, "(কলকাতার) ওই বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল । জানতে পারি, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো যাবে । আগে আমরা জানতাম না, এই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে । তা হলে আগেই আমরা মেডিকেল কলেজে আসতাম ।"

কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর : নিজের রাজ্যে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছিলেন বিহারের এক যুবতি ৷ বাদ দেওয়া হয় তাঁর জরায়ু ৷ কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালেও একই অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন ৷ ক্ষতিগ্রস্ত হয় একটি ইউরেটার তথা কিডনির নালি । তৈরি হয় প্রাণহানির আশঙ্কা ৷ শেষপর্যন্ত কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকদের তৎপরতায় জীবন ফিরে পেলেন বছর 27-র সুষমা দেবী ৷

বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা সুষমা । দুই সন্তান রয়েছে তাঁর ৷ সম্প্রতি ফের অন্ত্বঃসত্ত্বা হয়ে পড়েন তিনি ৷ কিন্তু, কয়েকদিন পর তাঁর যৌনাঙ্গ থেকে শুরু হয় রক্তক্ষরণ । ভরতি করা হয় ভাগলপুরের সদর হাসপাতালে । সেখানে গত বছর সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বরে দু'দফায় সুষমার অস্ত্রোপচার হয় ৷ বাদ দেওয়া হয় তাঁর জরায়ু ৷ তাতে সমস্যার সুরাহা হয়নি ৷ হতে থাকে রক্তক্ষরণ ৷ এরপর বাধ্য হয়ে সুষমাকে কলকাতায় নিয়ে আসা হয় ৷ আনন্দপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে ভরতি করা হয় । চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেখানে তাঁর অস্ত্রোপচার হয় ৷ কিন্তু, বন্ধ হয়নি রক্তক্ষরণ ৷ 27 ফেব্রুয়ারি তাঁকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে যান পরিবারের সদস্যরা ৷ তখন তাঁর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক ৷ প্রাণ বাঁচানো নিয়ে সংশয়ে ছিলেন চিকিৎসকরা ৷ তবে, হাল ছাড়েননি তাঁরা ৷ শুরু হয় কেমোথেরাপি ৷ বৃহস্পতিবার তা শেষ হয়েছে ৷ পরদিন তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় ৷ চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, আপাতত সুস্থ রয়েছেন সুষমা ৷ তবে, ছয় সপ্তাহ পর হাসপাতালের নেফ্রোলজি বিভাগে ফের তাঁর চিকিৎসা শুরু হবে ।

কিন্তু, ঠিক কী হয়েছিল সুষমার ? মেডিকেল কলেজের স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ তারাশংকর বাগ বলেন, "সুষমার মোলার প্রেগনেন্সি হয়েছিল । কোনও কারণে বিহারে এটা ধরা পড়েনি । এই ধরনের প্রেগনেন্সির ক্ষেত্রে রোগীকে পর্যবেক্ষণে রাখতে হয় । যদি দেখা যায় hCG হরমোনের মাত্রা বাড়ছে, তা হলে কেমোথেরাপি দিতে হয় । বিহারে এটা ধরা না পড়ার কারণে রোগীর পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা হয় । দু'বার অস্ত্রোপচার করা হয়েছিল । তাঁর জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয় । এটা যথাযথ চিকিৎসা নয় । সেজন্য রক্তক্ষরণ কমছিল না । এরপর কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে যুবতির রোগ নির্ণয় হয়েছিল । কিন্তু, এই হাসপাতালেও এই রোগীর পেট কেটে অস্ত্রোপচার করা হয় । তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনির একটি নালি । তার জেরে সবসময় ইউরিন(মূত্র) বের হচ্ছিল । অন্য উপসর্গগুলির কোনও পরিবর্তন হচ্ছিল না ।" সুষমাকে যখন মেডিকেল কলেজে নিয়ে আসা হয়, তখন তাঁকে প্রাণে বাঁচানোই ছিল চ্যালেঞ্জ ৷ এক বছর আগেই সুষমার কেমোথেরাপি শুরু করা প্রয়োজন ছিল বলে জানান তারাশংকরবাবু ৷ একই বক্তব্য চিকিৎসক অজন্তা সামন্তেরও ৷ তিনি বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের এখানে ভরতি হন, তখন তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল । তখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল । এর পাশাপাশি ছিল অ্যানিমিয়া ৷ রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম ছিল ।"

ভিডিয়োয় শুনুন বক্তব্য

মেডিকেল কলেজে কেমোথেরাপি শুরুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ৷ কিন্তু, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কম থাকায় প্রথমে সমস্যার মুখে পড়েছিলেন চিকিৎসকরা ৷ অজন্তা বলেন, "কেমোথেরাপি শুরুর পর অনেকবার এমন হয়েছে যে বাকি রক্তকণিকাগুলির পরিমাণ অনেক কমে গেছে । পরে তা আবার নিয়ন্ত্রণে আনা হয় ।" তারাশংকরবাবু বলেন, "তিনটি অপ্রয়োজনীয় অস্ত্রোপচারের পর রোগীর সমস্যা তৈরি হয়েছিল । এখন ভালো আছেন তিনি । বিপদ মুক্ত বলা যেতে পারে । মোলার প্রেগনেন্সির কারণে এখন তাঁর আর জীবন সংশয় নেই । এরপর ইউরেটর ঠিক করতে হবে । তবে, এক্ষেত্রে রোগী যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন তাঁকে ফলো-আপে রাখতে হবে ৷"

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, প্রেগনেন্সির সময় জরায়ুতে যে প্লাসেন্টা তৈরি হয়, সেখানে টিউমার তৈরি হয় । এটাকেই মোলার প্রেগনেন্সি বলে । 16 থেকে 18 শতাংশ ক্ষেত্রে এই টিউমার ক্যানসারে পরিণত হয় । ভারতে 400টির মধ্যে একটি ক্ষেত্রে মোলার প্রেগনেন্সি হয় । যদি ঠিক মতো রোগনির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা হয়, তা হলে এটা কোনও সমস্যা নয় বলে বক্তব্য চিকিৎসকদের ৷ তারাশংকরবাবু বলেন, "এটাই একমাত্র ক্যানসার, যেখানে কেমোথেরাপির ফলে রোগী 100 শতাংশ সেরে ওঠেন ৷ অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয় না ‌। তবে, কেমোথেরাপি না দেওয়া হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে ।"

তবে জরায়ু বাদ দেওয়ার কারণে সুষমা আর কখনও মাতৃত্বের স্বাদ পাবেন না বলে জানান তারাশংকরবাবু ৷ তবুও মৃত্যুর দোরগোড়া থেকে ফিরে এসে মুখে হাসি ফুটেছে সুষমার ৷ বলেন, "চিকিৎসকরা প্রথমে বলেছিলেন, আমি বাঁচতে পারব না । কিন্তু, এখন ভালো আছি ।" তাঁর মা কৌশল্যা দেবী বলেন, "(কলকাতার) ওই বেসরকারি হাসপাতালে অস্ত্রোপচারের পর সব টাকা শেষ হয়ে গিয়েছিল । জানতে পারি, কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে বিনামূল্যে চিকিৎসা করানো যাবে । আগে আমরা জানতাম না, এই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে । তা হলে আগেই আমরা মেডিকেল কলেজে আসতাম ।"

Intro:EXCLUSIVE

কলকাতা, 1 সেপ্টেম্বর: তিনি প্রেগন্যান্ট হয়েছিলেন। তবে, আর কোনও দিন তিনি মা হতে পারবেন না। কারণ, অপারেশনে তাঁর জরায়ু বাদ দেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র এমনও নয়। তিন দফায় অপারেশনের জেরেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাঁর একটি ইউরেটার অর্থাৎ, কিডনির নালি। অথচ, এই রোগীকে সুস্থ করে তুলতে অপারেশনের প্রয়োজনই ছিল না বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। এ দিকে, আশঙ্কাজনক অবস্থায় এই রোগীকে যখন নিয়ে আসা হয়েছিল কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে, তখন তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ ছিল চিকিৎসকদের। অবশেষে, ক্যান্সার আক্রান্ত এই রোগীকে প্রাণে বাঁচালেন চিকিৎসকরা।


Body:বছর 27-এর এই রোগীর নাম সুষমা দেবী। তিনি বিহারের ভাগলপুরের বাসিন্দা। দুই সন্তানের মা সুষমা দেবী আবার প্রেগন্যান্ট হয়ে পড়েন। কিছুদিন পরে দেখা যায়, তাঁর যৌনাঙ্গ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ভাগলপুরের সদর হাসপাতালে। কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভাগলপুরের ওই হাসপাতালে গত বছরের সেপ্টেম্বর এবং ডিসেম্বর মাসে দুই দফায় অপারেশন করা হয়। এর পরেও সমস্যার সমাধান হয়নি। রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এর পরে রোগীকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার আনন্দপুরে EM বাইপাসের ধারে অবস্থিত বেসরকারি একটি হাসপাতালে। গত জানুয়ারি মাসে সুষমা দেবীর অপারেশন করা হয় এই হাসপাতালে। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ হচ্ছিল না। এর পরে গত ফেব্রুয়ারির মাসের শেষের দিকে তাঁকে নিয়ে আসা হয় কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে।

এই হাসপাতালের গাইনোকলজি ডিপার্টমেন্টের ডাক্তার তারাশঙ্কর বাগ বলেন, "সুষমা দেবীর মোলার প্রেগনেন্সি হয়েছিল। কোনও কারণে বিহারে এটা ধরা পড়েনি। এই ধরনের প্রেগনেন্সিতে ফলোআপে রাখতে হয় রোগীকে। যদি দেখা যায় hCG হরমোনের মাত্রা বাড়ছে, তা হলে কেমো দিতে হয়। বিহারে এটা ধরা না পড়ার কারণে রোগীর পেট কেটে অপারেশন করা হয়। দুই বার অপারেশন করা হয়েছিল বিহারে। তাঁর জরায়ু কেটে বাদ দেওয়া হয়। এটা যথাযথ চিকিৎসা নয়। এর জন্য রক্তক্ষরণ কমছিল না।" তিনি বলেন, "এর পরে রোগীকে নিয়ে আসা হয় কলকাতার বেসরকারি এক হাসপাতালে। এই হাসপাতালে রোগনির্ণয় হয়েছিল। কিন্তু, এই হাসপাতালেও এই রোগীর পেট কেটে অপারেশন করা হয়। এই অপারেশনে কিডনির একটি নালি, ইউরেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর জন্য সব সময় ইউরিন বের হতে শুরু করেছিল। অন্য উপসর্গগুলির কোনও বদলও হচ্ছিল না।"

কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, রোগীর পরিজনরা এর পরে দেউলিয়া হয়ে পড়েন অথবা, বেসরকারি ওই হাসপাতালে তাঁরা আর চিকিৎসা করাতে পারছিলেন না। এর পরে রোগীকে এই মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রোগীর শারীরিক অবস্থা তখন যেমন ছিল, তাতে তিনি আর কোনও দিন মা হতে পারবেন না, কিন্তু, তখন তাঁকে প্রাণে বাঁচানোটাই চ্যালেঞ্জে ছিল। ডাক্তার তারাশঙ্কর বাগ বলেন, "এর পরে এই রোগীর জন‍্য আমরা কেমোথেরাপি শুরু করি। রোগী এখন ভালো আছেন।" এর পরে এই রোগীর চিকিৎসা শুরু হবে নেফ্রোলজি বিভাগে। কারণ, তাঁর একটি ইউরেটর ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে, এটা ঠিক করতে হবে। কিডনি থেকে ইউরেটরের মাধ্যমে ইউরিন এসে জমা হয় মূত্রথলিতে। গত বৃহস্পতিবার শেষ সাইকেলের কেমোথেরাপি শেষ হয়েছে সুষমা দেবীর। ছয় সপ্তাহ পরে নেফ্রোলজি বিভাগের তাঁর চিকিৎসা শুরু হবে। এর জন্য আপাতত গত শুক্রবার তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়েছে।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ভারতে 400 টির মধ্যে একটি ক্ষেত্রে মোলার প্রেগনেন্সি হয়। 16 থেকে 18 শতাংশ ক্ষেত্রে এই প্রেগনেন্সি ক্যান্সারে পৌঁছে যায়। যদি ঠিক মতো রোগনির্ণয় এবং যথাযথ চিকিৎসা শুরু হয়, তা হলে এটা কোনও সমস্যা নয়। ডাক্তার তারাশঙ্কর বাগ বলেন, "কিন্তু, তিনটি অপ্রয়োজনীয় অপারেশনের পরে এই রোগীর সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অথচ, এটাই একমাত্র ক্যান্সার, কেমোথেরাপিতে যেখানে 100% সেরে যায়। অপারেশনের প্রয়োজন হয় না‌। তবে, কেমোথেরাপি না হলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে।" প্রেগনেন্সির সময় জরায়ুতে যে প্লাসেন্টা তৈরি হয়, সেখানে টিউমার তৈরি হয়। এটাকে মোলার প্রেগনেন্সি বলে। 16 থেকে 18 শতাংশ ক্ষেত্রে এই টিউমার ক্যান্সারে পরিণত হয়।

ডাক্তার তারাশঙ্কর বাগ বলেন, "আমাদের এখানে যখন এই রোগীকে নিয়ে আসা হয়ছিল, তখন আমাদের সন্দেহ ছিল এই রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হবে কি না, তা নিয়ে। কারণ, এই রোগীকে একটিও কেমো দেওয়া হয়নি। অন্তত এক বছর আগে এই রোগীর কেমোথেরাপি শুরু হওয়া উচিত ছিল।" তিনি বলেন, "এই রোগী এখন বিপদমুক্ত বলা যেতে পারে। মোলার প্রেগনেন্সির কারণে এই রোগীর লাইফ থ্রেটনিং এখন আর নেই। এর পরে ইউরেটর ঠিক করতে হবে। তবে, এই ধরনের রোগী যতদিন বেঁচে থাকবেন, ততদিন ফলোআপে রাখতে হবে।"

ডাক্তার অজন্তা সামন্ত বলেন, "এই রোগী যখন আমাদের এখানে এসে ভর্তি হন, তখন তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। তখনও রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এর পাশাপাশি অ্যানিমিয়া ছিল, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম ছিল। রোগীকে কেমোথেরাপি দেওয়ার জন্য সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু প্রথম দিকে আমরা শুরু করতে পারছিলাম না, কারণ, হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ খুবই কম ছিল। কেমোথেরাপি শুরু করার পরে অনেকবার এমন হয়েছে, বাকি রক্তকণিকাগুলির পরিমাণ অনেক কমে গিয়েছিল। তখন সে সব আবার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।" তিনি বলেন, "3 বার অপারেশনের কারণে এই রোগীর কিডনির সমস্যা, ইউরেটর ইনজুরি হয়েছে। আমরা প্রথমে আশা করতে পারিনি এই রোগীকে এত ভালো অবস্থায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।"


Conclusion:সেকেন্ড ইয়ারের পোস্ট গ্রাজুয়েট ট্রেনি ডাক্তার সোলাঙ্কি হালদার বলেন, "আমাদের কাছে এই রোগী যখন প্রথমে আসেন, তখন সত্যিই আমরা আশা করিনি তিনি ভালো হয়ে যাবেন। রোগীর বাড়ির লোককে বলা হয়েছিল, হয়তো বেশি দিন বাঁচানো সম্ভব হবে না, কারণ প্রচন্ড পরিমাণে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।" শেষ পর্যন্ত অবশ্য রোগীর মুখে হাসি ফুটেছে। এই রোগী সুষমা দেবী বলেন, "ডাক্তার প্রথমে বলেছিলেন, আমার পেটে ক্যান্সার হয়েছে। প্রথমে ডাক্তার বলেছিলেন আমি বাঁচতে পারব না। এখন ভালো আছি।" গত 27 ফেব্রুয়ারি থেকে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে এই রোগীর চিকিৎসা চলছিল। এই রোগীর মা কৌশল্যা দেবী বলেন, "ওই বেসরকারি হাসপাতালে অপারেশনের পরে সব টাকা শেষ হয়ে যায়। ডাক্তাররা বলেন, বিনামূল্যে কলকাতা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে চিকিৎসা করানো যাবে। আগে আমরা জানতাম না এই হাসপাতালে চিকিৎসা হবে। তা হলে আগেই আমরা এই হাসপাতালে আসতাম।"
_______

বাইট:
wb_kol_01a_rare_case_cmch_bite_7203421
রোগী এবং রোগীর মায়ের বক্তব্য

wb_kol_01b_rare_case_cmch_bite_7203421
ডাক্তার তারাশঙ্কর বাগের বক্তব্য

wb_kol_01c_rare_case_cmch_bylte_7203421
ডাক্তার অজন্তা সামন্ত এবং সেকেন্ড ইয়ারের PGT ডাক্তার সোলাঙ্কি হালদারের বক্তব্য



Last Updated : Sep 2, 2019, 7:48 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.