কলকাতা, 7 নভেম্বর: রাজভবনে আটকে একাধিক বিল । এই নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন রাজ্যপাল জগদীপ ধনকরের সময় থেকেই বারবার ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে । বিল আটকে থাকা নিয়ে সংঘাত বর্তমান রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসের সময় মতো জারি রয়েছে । সোমবার সুপ্রিম কোর্ট বিল দিনের পর দিন আটকে রাখা নিয়ে পঞ্জাবের রাজ্যপালের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করেছেন । সেই মামলায় রেফারেন্স হিসাবে উঠে এসেছিল বাংলা, কেরালার প্রসঙ্গও । উল্লেখ্য, সোমবার রাজ্যপালের ভূমিকার সমালোচনা করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা বলেছেন, দেরির রোগ সারাতে দু’পক্ষেরই কিছুটা আত্ম-অনুসন্ধানের প্রয়োজন । সেখান থেকেই উঠছে প্রশ্ন এবার কি বদলাবে চিত্র ?
এই মুহূর্তে রাজ্য বিধানসভার পাশ করা একাধিক বিল রাজভবনে আটকে রয়েছে । সংখ্যাটা কোনোভাবেই দশের কম নয়। কোনও কোনও বিল তো আবার পড়ে রয়েছে প্রাক্তন রাজ্যপাল তথা বর্তমান উপ-রাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনকরের সময় থেকেই ।
তালিকাটা বেশ দীর্ঘ । সেখানেই যেমন রয়েছে গণপিটুনি সংক্রান্ত বিল, একইভাবে রয়েছে হাওড়া ও বালি পৌরসভাকে একত্রিত করতে দু’টি বিল, রয়েছে মুখ্যমন্ত্রীকে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য করা সংক্রান্ত প্রায় আটটি বিল, একইভাবে আটকে রয়েছে উপাচার্য নিয়োগে সার্চ কমিটি নিয়ে বিল । তৃণমূল পরিষদীয় দলের তরফ থেকে বলা হচ্ছে, তালিকাটি আরও দীর্ঘ । বর্তমান রাজ্যপালের তরফ থেকে যে বিল পাঠানো হচ্ছে প্রায় কোনও বিলেই অনুমোদন দিচ্ছেন না ।
আরও পড়ুন: রাজ্য-রাজভবন বিতর্কের মাঝেই 6টি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ বোসের
প্রসঙ্গত, কয়েকদিন আগেই প্রকাশ্যে বলতে গিয়ে বিল আটকে রাখা প্রসঙ্গে ক্ষোভ উগরে দিয়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । বলেছিলেন, ‘‘আমরা বিধানসভায় বিল পাশ করে রাজভবনে পাঠানোর পর একটা বিলও ফেরত পাঠান না । প্রত্যেকটা বিল উনি আটকে রেখে দেন । এটা ওঁর অধিকার নেই ।’’
এরই জবাবে অতি সম্প্রতি রাজ্যপাল জানিয়েছিলেন, রাজভবনে মাত্র আটটি ফাইল পড়ে রয়েছে । এরমধ্যে সাতটি ক্ষেত্রে তিনি কিছু বিষয় জানতে চেয়ে তা সংশ্লিষ্ট দফতরে পাঠিয়ে দিয়েছেন । সেই প্রশ্নের উত্তর তিনি পাননি ৷ ফলে যদি কোথাও বিল পড়ে থাকে, তা রয়েছে সরকারের ঘরে, রাজভবনে নয় ।
যদিও মুখ্যমন্ত্রী এবং রাজ্যপালের এই বক্তব্যের পর অনেকটা সময় কেটে গিয়েছে । এর মাঝেই গতকাল সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ রাজভবনের জন্য একটা বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল । কী করবে রাজভবন, সেদিকে এখন চোখ রাজনৈতিক মহলের ।
যদিও এই অবস্থায় সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে স্বাগত জানিয়েছেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় । তিনি বলেন, ‘‘এই বিল আটকে রাখা নিয়ে আমাদের অল ইন্ডিয়া স্পিকারস কমিটির বৈঠকে অনেকবার আলোচনা হয়েছে । রাজ্যপালের কাছে কোনও বিল পাঠানো হলে তিনি তিনটি কাজ করতে পারেন । হয় বিলে মঞ্জুরী দিতে পারেন, অথবা কিছু পরামর্শ দিয়ে তা ফেরত পাঠাতে পারেন অথবা সেটাকে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন । যেহেতু এর জন্য কোনও নির্দিষ্ট সময় বাঁধা নেই, তাই আমাদের পরামর্শ ছিল, সংবিধান সংশোধন করে এই বিষয়ে একটা নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেওয়া হোক ।’’
আরও পড়ুন: চরমে রাজ্য-রাজ্য়পাল সংঘাত! রাজভবনকে চিঠি দিল রাজ্য সরকার
তিনি আরও বলেন, ‘‘এক্ষেত্রে ছয় মাসের মধ্যে উনি বিলটি নিয়ে কোনও পদক্ষেপ করবেন, না হলে ধরে নিতে হবে এটি পাশ হয়ে গিয়েছে । এই উদ্যোগ আর বেশিদূর এগোয়নি । তবে সুপ্রিম কোর্ট এই উদ্যোগ নেওয়ায় আমি খুব আনন্দিত । একটা সরকার বিল আনে মানুষের স্বার্থের কথা চিন্তা করে । কিন্তু দিনের পর দিন এভাবে পড়ে থাকলে বিল সাধারণ মানুষের স্বার্থ বিঘ্নিত হয় । সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণকে আমি স্বাগত জানাই এবং আমি মনে করি সব রাজ্যের রাজ্যপাল এবার সুপ্রিম কোর্টের এই স্পিরিটটাকে মাথায় রাখবেন ।’’
এ দিন এই নিয়ে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেস পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ । তিনি বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের কাজ হল বিজেপির মুখপাত্রের মতো কাজ করা আর রাজ্যকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করা । সুপ্রিম কোর্টের এই পর্যবেক্ষণে আশা করছি জনহিতে সরকার যে বিল আনে, তা অনুমোদনের সুবিধা করে দেবে ।’’
অন্যদিকে বিজেপির পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, ‘‘আমরা দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে সম্মান করি, কিন্তু রাজ্যপাল যদি কোনও বিলের বিষয়ে ব্যাখ্যা চান, সংশ্লিষ্ট দফতরের কাছ থেকে তার জবাব দিতে অসুবিধা কোথায় ?’’ আরেক বিজেপি নেতা রাহুল সিনহা বলেন, ‘‘রাজভবনে একাধিক বিল আটকে আছে, তার একাধিক কারণ আছে । সুপ্রিম কোর্ট কোথাও বলেনি রাজ্যপালকে বিল পাঠানো মাত্রই চোখ বন্ধ করে তাতে সই করে দিতে হবে । রাজ্যপাল যা করছেন সংবিধান মেনেই করছেন । তিনি যা পদক্ষেপ করবেন সংবিধান অনুসরণ করেই করবেন ।’’
আরও পড়ুন: রাজ্যে-রাজ্যে সরকার ও রাজ্যপালের সংঘাত নিয়ে উদ্বিগ্ন সুপ্রিম কোর্ট