ETV Bharat / state

অমিতাক্ষর স্বরে উত্তরের জানালা দিয়ে গেরুয়া বাতাস আসবে তো...

লক্ষ্য রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ক । আজ কোচবিহারের মাটি থেকে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিলেন অমিত শাহ । শুরু করলেন রথযাত্রার, থুড়ি পরিবর্তন যাত্রার । কোচ-রাজবংশীদের নিয়ে পরিবর্তন সেনা গঠন করে রাজ্য সু-শাসন প্রতিষ্ঠান ডাক দিলেন । আশ্বাস দিলেন পর্যটন কেন্দ্র গড়ার । প্রতিবেদনটি লিখেছেন শীর্ষেন্দু চক্রবর্তী ৷

author img

By

Published : Feb 11, 2021, 10:11 PM IST

অমিত শাহ
অমিত শাহ

বছর খানেক আগের লোকসভা ভোটে ভাঙনের ছবিটা ধরা পড়েছিল । তার পর থেকেই উত্তরের জানালা 'বন্ধ' করার জন্য বাড়তি উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছিল নেত্রীকে । বাংলায় পদ্ম ফোটানোর জন্য সেই উত্তরের জানালাকেই পাখির চোখ করে যাত্রা শুরু করলেন অমিত শাহ ।

সৌজন্যে সেই রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ক । আজ কোচবিহারের মাটি থেকে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিলেন অমিত শাহ । শুরু করলেন রথযাত্রার, থুড়ি পরিবর্তন যাত্রার । কোচ-রাজবংশীদের নিয়ে পরিবর্তন সেনা গঠন করে রাজ্য সু-শাসন প্রতিষ্ঠান ডাক দিলেন । আশ্বাস দিলেন পর্যটন কেন্দ্র গড়ার । আধা-সেনায় নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গঠন করার কথা বললেন । দেওয়ার চেষ্টা করলেন কীভাবে 'পিসি-ভাইপো'র সরকার বাংলার মাটিকে 'কলুষিত' করছে, তার প্রমাণ ।

মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের মতোই রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির । পৃথক রাজ্যের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই জোট বেঁধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এবং কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি) । এই আন্দোলনে প্রথম থেকেই খবরের শিরোনামে রয়েছেন দুই জন । গ্রেটার কোচবিহারের বংশীবদন বর্মণ এবং কেপিপির সভাপতি অতুল রায় । প্রথম দিকে তাঁরা দুই জনই ছিলেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কমিটি বা বোর্ডে । কিন্তু, রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে থাকলেও এবং প্রথমে পৃথক রাজ্যের কথা বললেও, বাস্তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে । আর তাই বার বার তারা দাবি করেছেন, রাজবংশীদের ভোটে জিতে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতায় বসে আমাদের ভুলে গিয়েছেন । এবার থেকে আমাদের ভোটব্যাঙ্ক আমরাই সামলাব । পৃথক রাজ্যের পাশাপাশি ভাষার স্বীকৃতি, পাঠ্যক্রম চালু ইত্যাদি নিয়েও তৎপরতা দেখা গিয়েছিল ।

আজ কোচবিহার থেকে মতুয়াদের পাশাপাশি রাজবংশীদের নিয়ে ভোটের সুর বেঁধে দিলেন অমিত শাহ । দাবি করলেন, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজবংশীদের জন্যও বিশেষ পদক্ষেপ করা হবে । গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট যেমন বিজেপিকে বড় সমর্থন দিয়েছিল, তেমনই রাজবংশীর একটা বড় অংশও তাদের পাশে ছিল দাবি করেছে গেরুয়া শিবির । দিন কয়েক আগেই কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন । এক সময় তৃণমূলের তুরুপের তাস মিহিরকে হারিয়ে কিছুটা ব্যকফুটে চলে যায় তৃণমূল। এর পরই রাজবংশী সম্প্রদায় অধ্যুষিত জমি শক্ত করতে উঠে পড়ে লাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্য সরকার পুলিশে ‘নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন’ চালু করা, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা, পঞ্চানন বর্মার জন্মভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেওয়ার মতো উদ্যোগও চোখে পড়ে ।

অন্য দিকে, বিজেপিও দাবি করেছে—‘নারায়ণী রেজিমেন্ট’ তৈরি করার । সেই দাবি জানিয়ে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে বেশ কয়েকবার সরব হতে দেখা গিয়েছে । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি । নিশীথের মতো সাংসদকে ভোটের আগে কোনওভাবেই চটাতে চান না মোদি-শাহরা । এর ফলে শুধু রাজবংশী ভোট ব্যাঙ্কে হাত পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হত তাই নয়, উত্তরের জানালা দিয়ে নতুন বাতাস ঢোকার পথটাও অনেকটা কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত । এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কোনওভাবেই চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব । এ বার তাই রাজবংশী মন পেতে খোদ অমিত দিল্লি থেকে কোচবিহার আসেন । রথ যাত্রার সূচনা করেন । (প্রসঙ্গত, অতীতের ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে, রথযাত্রার সূচনার জন্য এমন জায়গাই বিজেপি নেতৃত্ব বেছেছেন, যে জায়গার ভোট ব্যাঙ্ককে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ) ।

নিশীথের দাবি মতোই আজ শাহ কোচবিহারের সভা থেকে সেন্ট্রাল প্যারামিলিটারি ফোর্সে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গড়ার কথা ঘোষণা করেন । রাজবংশী বীর চিলা রায়ের নামে ট্রেনিং সেন্টার করার প্রতিশ্রুতি দেন । এছাড়া কোচবিহারের মণীষী পঞ্চানন বর্মার জন্মস্থান-সহ কোচবিহারের ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গাগুলিকে নিয়ে অল ইন্ডিয়া ট্যুরিজমের পরিকল্পনার কথা জানান ।

কোচবিহারের জমিকে শক্ত করতে আজ প্রথমেই অসমে উড়ে গিয়েছিলেন শাহ । কারণ এই অসমেই রয়েছেন এনডিএ সরকারের শরিক দল ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্‌স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর নেতা অনন্ত রায় । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসমের ভোট ব্যাঙ্কের থেকে অনন্ত রায়ের ভোট ব্যাঙ্ক শাহর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কারণ কোচবিহারের ‘স্বঘোষিত মহারাজা’ অনন্তকে হাতে রাখতে পারলে অনেকটা কাজ করে ফেলতে পারবেন অমিতজি ।

আরও পড়ুন :- "আমি গোলরক্ষক, দেখি ক'টা গোল দিতে পারেন..."

কিন্তু, আজ রাজবংশীদের কাছে টানা মমতাকে আক্রমণ করাই প্রধান হয়ে উঠেছিল অমিত শাহের কাছে । নিজের ভাষণে অনেকটা শাহ খরচা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে । নবান্নের ভুল নীতি এবং কেন্দ্রের সঙ্গে অসহযোগিতার ফলে কৃষকরা টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করলেন । বললেন, মোদি সরকার যে ভাবে সাধারণ মানুষের জন্য একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে তা শুধু মাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নবান্নের জন্য বাংলায় ঠিক মতো কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না । পাশাপাশি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতেও পিছপা হলেন না শাহ । শুভেন্দু এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়র স্বরে সুর মিলিয়ে ভাইপোকে তোলাবাজ আখ্যা দিতেও দেরি করেননি বিজেপির 'সেকেন্ড ম্যান' ।

শাহ যখন মাঠ থেকে বাংলায় পরিবর্তনের আওয়াজ তুললেন, তখন বাধ্য জনতার মতো হাজার হাজার মানুষের স্বর তীব্র হল । অমিতাক্ষর স্বরে সকলে বলে উঠলেন বাংলায় পরিবর্তন তাঁরা চান । কিন্তু, এই পরিবর্তন কি উত্তরের জানালা দিয়ে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে ? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে । কারণ, রাজবংশীদের মতো উত্তরের মাটিতে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে । এবারের বিধানসভা ভোটে কী ভাবে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ককে সামলাবেন মোদি-শাহরা সেটাও দেখার ।

আরও পড়ুন :- বঙ্গে ক্ষমতায় এলে ‘মুখ্যমন্ত্রী শরণার্থী কল্যাণ যোজনা’ চালু করবে বিজেপি : অমিত শাহ

পাশাপাশি, কোচবিহারের মাটি বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের কাছে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি করছে । কারণ; রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়, বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, মিহির গোস্বামীর মতো নেতারা বার বার বিক্ষুব্ধ হয়েছেন । এঁদের মধ্যে কেউ কেউ দল বদলে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন । গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ঘাসফুলে দ্বন্দ্ব প্রকট ভাবে চোখে পড়েছিল । প্রশান্ত কিশোরোর ধাক্কায় কয়েক জনকে কিছু দিন এক মঞ্চে দেখা গেলও লাভের লাভ কিছুই হয়নি । দলই আরও ভেঙেছে । সেই ভাঙনকে কতটা কাজে লাগাতে পারবেন বিজেপি নেতারা সেটাও দেখার ।

বছর খানেক আগের লোকসভা ভোটে ভাঙনের ছবিটা ধরা পড়েছিল । তার পর থেকেই উত্তরের জানালা 'বন্ধ' করার জন্য বাড়তি উদ্যোগী হতে দেখা গিয়েছিল নেত্রীকে । বাংলায় পদ্ম ফোটানোর জন্য সেই উত্তরের জানালাকেই পাখির চোখ করে যাত্রা শুরু করলেন অমিত শাহ ।

সৌজন্যে সেই রাজবংশী ভোটব্যাঙ্ক । আজ কোচবিহারের মাটি থেকে বাংলায় পরিবর্তনের ডাক দিলেন অমিত শাহ । শুরু করলেন রথযাত্রার, থুড়ি পরিবর্তন যাত্রার । কোচ-রাজবংশীদের নিয়ে পরিবর্তন সেনা গঠন করে রাজ্য সু-শাসন প্রতিষ্ঠান ডাক দিলেন । আশ্বাস দিলেন পর্যটন কেন্দ্র গড়ার । আধা-সেনায় নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গঠন করার কথা বললেন । দেওয়ার চেষ্টা করলেন কীভাবে 'পিসি-ভাইপো'র সরকার বাংলার মাটিকে 'কলুষিত' করছে, তার প্রমাণ ।

মতুয়া ভোটব্যাঙ্কের মতোই রাজবংশী ভোটব্যাঙ্কের দিকে নজর রয়েছে তৃণমূল এবং বিজেপির । পৃথক রাজ্যের দাবিতে বেশ কিছু দিন ধরেই জোট বেঁধে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে গ্রেটার কোচবিহার পিপলস অ্যাসোসিয়েশন এবং কামতাপুর প্রগ্রেসিভ পার্টি (কেপিপি) । এই আন্দোলনে প্রথম থেকেই খবরের শিরোনামে রয়েছেন দুই জন । গ্রেটার কোচবিহারের বংশীবদন বর্মণ এবং কেপিপির সভাপতি অতুল রায় । প্রথম দিকে তাঁরা দুই জনই ছিলেন রাজ্য সরকারের বিভিন্ন কমিটি বা বোর্ডে । কিন্তু, রাজ্য সরকারের গুরুত্বপূর্ণ কমিটিতে থাকলেও এবং প্রথমে পৃথক রাজ্যের কথা বললেও, বাস্তবে কাজের কাজ কিছু হয়নি বলেই অভিযোগ উঠেছে । আর তাই বার বার তারা দাবি করেছেন, রাজবংশীদের ভোটে জিতে যাঁরা মন্ত্রী হয়েছেন, তাঁরা ক্ষমতায় বসে আমাদের ভুলে গিয়েছেন । এবার থেকে আমাদের ভোটব্যাঙ্ক আমরাই সামলাব । পৃথক রাজ্যের পাশাপাশি ভাষার স্বীকৃতি, পাঠ্যক্রম চালু ইত্যাদি নিয়েও তৎপরতা দেখা গিয়েছিল ।

আজ কোচবিহার থেকে মতুয়াদের পাশাপাশি রাজবংশীদের নিয়ে ভোটের সুর বেঁধে দিলেন অমিত শাহ । দাবি করলেন, বাংলায় বিজেপি ক্ষমতায় এলে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি রাজবংশীদের জন্যও বিশেষ পদক্ষেপ করা হবে । গত লোকসভা নির্বাচনে মতুয়া ভোট যেমন বিজেপিকে বড় সমর্থন দিয়েছিল, তেমনই রাজবংশীর একটা বড় অংশও তাদের পাশে ছিল দাবি করেছে গেরুয়া শিবির । দিন কয়েক আগেই কোচবিহার দক্ষিণ কেন্দ্রের বিধায়ক মিহির গোস্বামী বিজেপি-তে যোগ দিয়েছেন । এক সময় তৃণমূলের তুরুপের তাস মিহিরকে হারিয়ে কিছুটা ব্যকফুটে চলে যায় তৃণমূল। এর পরই রাজবংশী সম্প্রদায় অধ্যুষিত জমি শক্ত করতে উঠে পড়ে লাগেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় । রাজ্য সরকার পুলিশে ‘নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন’ চালু করা, ঠাকুর পঞ্চানন বর্মার জন্মদিনে ছুটি ঘোষণা, পঞ্চানন বর্মার জন্মভূমিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের অনুমোদন দেওয়ার মতো উদ্যোগও চোখে পড়ে ।

অন্য দিকে, বিজেপিও দাবি করেছে—‘নারায়ণী রেজিমেন্ট’ তৈরি করার । সেই দাবি জানিয়ে কোচবিহারের বিজেপি সাংসদ নিশীথ প্রামাণিককে বেশ কয়েকবার সরব হতে দেখা গিয়েছে । কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকে চিঠিও দিয়েছিলেন তিনি । নিশীথের মতো সাংসদকে ভোটের আগে কোনওভাবেই চটাতে চান না মোদি-শাহরা । এর ফলে শুধু রাজবংশী ভোট ব্যাঙ্কে হাত পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হত তাই নয়, উত্তরের জানালা দিয়ে নতুন বাতাস ঢোকার পথটাও অনেকটা কঠিন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হতে পারত । এমন পরিস্থিতি তৈরি হোক, তা কোনওভাবেই চায়নি বিজেপি নেতৃত্ব । এ বার তাই রাজবংশী মন পেতে খোদ অমিত দিল্লি থেকে কোচবিহার আসেন । রথ যাত্রার সূচনা করেন । (প্রসঙ্গত, অতীতের ইতিহাস ঘাঁটলেই দেখা যাবে, রথযাত্রার সূচনার জন্য এমন জায়গাই বিজেপি নেতৃত্ব বেছেছেন, যে জায়গার ভোট ব্যাঙ্ককে তাঁরা বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন ) ।

নিশীথের দাবি মতোই আজ শাহ কোচবিহারের সভা থেকে সেন্ট্রাল প্যারামিলিটারি ফোর্সে নারায়ণী ব্যাটেলিয়ন গড়ার কথা ঘোষণা করেন । রাজবংশী বীর চিলা রায়ের নামে ট্রেনিং সেন্টার করার প্রতিশ্রুতি দেন । এছাড়া কোচবিহারের মণীষী পঞ্চানন বর্মার জন্মস্থান-সহ কোচবিহারের ইতিহাস প্রসিদ্ধ জায়গাগুলিকে নিয়ে অল ইন্ডিয়া ট্যুরিজমের পরিকল্পনার কথা জানান ।

কোচবিহারের জমিকে শক্ত করতে আজ প্রথমেই অসমে উড়ে গিয়েছিলেন শাহ । কারণ এই অসমেই রয়েছেন এনডিএ সরকারের শরিক দল ‘গ্রেটার কোচবিহার পিপল্‌স অ্যাসোসিয়েশন’ (জিসিপিএ)-এর নেতা অনন্ত রায় । বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অসমের ভোট ব্যাঙ্কের থেকে অনন্ত রায়ের ভোট ব্যাঙ্ক শাহর কাছে বেশি গুরুত্বপূর্ণ । কারণ কোচবিহারের ‘স্বঘোষিত মহারাজা’ অনন্তকে হাতে রাখতে পারলে অনেকটা কাজ করে ফেলতে পারবেন অমিতজি ।

আরও পড়ুন :- "আমি গোলরক্ষক, দেখি ক'টা গোল দিতে পারেন..."

কিন্তু, আজ রাজবংশীদের কাছে টানা মমতাকে আক্রমণ করাই প্রধান হয়ে উঠেছিল অমিত শাহের কাছে । নিজের ভাষণে অনেকটা শাহ খরচা করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতে গিয়ে । নবান্নের ভুল নীতি এবং কেন্দ্রের সঙ্গে অসহযোগিতার ফলে কৃষকরা টাকা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করলেন । বললেন, মোদি সরকার যে ভাবে সাধারণ মানুষের জন্য একাধিক পদক্ষেপ ঘোষণা করেছে তা শুধু মাত্র মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নবান্নের জন্য বাংলায় ঠিক মতো কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না । পাশাপাশি, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করতেও পিছপা হলেন না শাহ । শুভেন্দু এবং কৈলাস বিজয়বর্গীয়র স্বরে সুর মিলিয়ে ভাইপোকে তোলাবাজ আখ্যা দিতেও দেরি করেননি বিজেপির 'সেকেন্ড ম্যান' ।

শাহ যখন মাঠ থেকে বাংলায় পরিবর্তনের আওয়াজ তুললেন, তখন বাধ্য জনতার মতো হাজার হাজার মানুষের স্বর তীব্র হল । অমিতাক্ষর স্বরে সকলে বলে উঠলেন বাংলায় পরিবর্তন তাঁরা চান । কিন্তু, এই পরিবর্তন কি উত্তরের জানালা দিয়ে সহজেই প্রবেশ করতে পারবে ? সেই প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে । কারণ, রাজবংশীদের মতো উত্তরের মাটিতে সংখ্যালঘু ভোট ব্যাঙ্কও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এসেছে । এবারের বিধানসভা ভোটে কী ভাবে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্ককে সামলাবেন মোদি-শাহরা সেটাও দেখার ।

আরও পড়ুন :- বঙ্গে ক্ষমতায় এলে ‘মুখ্যমন্ত্রী শরণার্থী কল্যাণ যোজনা’ চালু করবে বিজেপি : অমিত শাহ

পাশাপাশি, কোচবিহারের মাটি বেশ কিছুদিন ধরেই তৃণমূলের কাছে অস্বস্তির পরিবেশ তৈরি করছে । কারণ; রবীন্দ্রনাথ ঘোষ, পার্থপ্রতিম রায়, বিনয়কৃষ্ণ বর্মণ, মিহির গোস্বামীর মতো নেতারা বার বার বিক্ষুব্ধ হয়েছেন । এঁদের মধ্যে কেউ কেউ দল বদলে বিজেপিতে নাম লিখিয়েছেন । গত পঞ্চায়েত নির্বাচন থেকেই ঘাসফুলে দ্বন্দ্ব প্রকট ভাবে চোখে পড়েছিল । প্রশান্ত কিশোরোর ধাক্কায় কয়েক জনকে কিছু দিন এক মঞ্চে দেখা গেলও লাভের লাভ কিছুই হয়নি । দলই আরও ভেঙেছে । সেই ভাঙনকে কতটা কাজে লাগাতে পারবেন বিজেপি নেতারা সেটাও দেখার ।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.