কলকাতা, 16 ডিসেম্বর : 2021-22 আর্থিক বছরের শেষে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঞ্চিত ঋণের (Accumulated debt) পরিমাণ যে পাঁচ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে তা একপ্রকার নিশ্চিত । বিশেষজ্ঞদের ধারণা, রাজস্ব আদায়ের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বেহিসেবি খরচ বাড়ালে অদূর ভবিষ্যতে রাজ্যের কোষাগারের অবস্থা আরও করুণ হবে ৷
কয়েকটি পরিসংখ্যানের দিকে নজর দিলেই ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে । গত 14 ডিসেম্বর সবমিলিয়ে সাতটি রাজ্য সর্বমোট 7 হাজার 53 কোটি টাকা বাজার থেকে ঋণ নেয় । এই সাতটি রাজ্যের মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ঋণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, 2 হাজার 500 কোটি টাকা (Accumulated Debt of West Bengal in 2021-22)।
দৈনন্দিন খরচ চালানোর জন্য রাজ্য যে ঋণের উপরই নির্ভরশীল সেটি আরেক একটি পরিসংখ্যান থেকেই পরিষ্কার । আর্থিক বছরের শুরুতে বাজার থেকে ধারের লক্ষ্যমাত্রা ছিল 48 হাজার 738 কোটি টাকা৷ যেটা আর্থিক বছরের মাঝামাঝি বেড়ে দাঁড়ায় 56 হাজার কোটিতে । সাম্প্রতিককালে সেই লক্ষ্যমাত্রা বেড়ে হয়েছে 73 হাজার কোটি টাকা ।
আরও পড়ুন : Tata Motors ties up with Bandhan Bank : উৎসবের মরশুমে টাটা মোটর্সের গাড়ি কিনলে ঋণ দেবে বন্ধন ব্যাঙ্ক
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের অর্থ দফতরের এক কর্তার মতে লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের মতো জনমোহিনী প্রকল্পের ক্ষেত্রে, যেখানে সরাসরি সরকারি কোষাগার থেকে টাকা যায় প্রাপকদের কাছে, সেই সমস্ত প্রকল্পে আবেদন জমা পড়েছে প্রচুর এবং প্রতিদিন আবেদনকারীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে। কাজেই এই ক্রমবর্ধমান খরচ মেটাতে বারবার বাজার থেকে ধার করতে হচ্ছে এবং ধারের লক্ষ্যমাত্রাও সংশোধন করতে হচ্ছে । চলতি বছরে তিনবার সংশোধন করা হয়েছে ৷
বিশ্লেষকদের মতে, লক্ষ্মীর ভাণ্ডার-সহ কন্যাশ্রী বা রূপশ্রীর মতো প্রকল্পে যেহেতু টাকা সরাসরি প্রাপকের অ্যাকাউন্টে জমা পড়ে, তাই এই প্রকল্পগুলি নিঃসন্দেহে তৃণমূল কংগ্রেসকে একের পর এক নির্বাচনী সাফল্য এনে দিয়েছে । কিন্তু একই সঙ্গে রাজস্ব বাড়ানোর কোনও বিকল্প উপায় করতে পারেনি রাজ্য ৷ রাজ্য সরকারের রাজস্ব আদায় এখন ভীষণভাবে আবগারি শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই রাজস্ব বাড়ানোর কোনও বিকল্প উপায় বের না করতে পারলে কতদিন এই সমস্ত জনমোহিনী প্রকল্পগুলিকে চালু রাখা যাবে সেটাই উদ্বেগের ।
আরও পড়ুন : রাজস্ব বাড়াতে বারে লাইভ পারফরম্যান্সের অনুমতি, মদের ব্যবসায় মন্দা কাটবে ?
এই বিষয়ে অর্থনীতির অধ্যাপক সান্তনু বসু ইটিভি ভারতকে জানান, রাজস্ব আদায়ের বিকল্প ব্যবস্থা না করে বেহিসেবি, বিশেষ করে পরিকল্পনা ছাড়া (Non- plan expenditure) খরচ বাড়ালে, যা হয় তাই হয়েছে। আমার ধারণা যে বেশিদিন এই সমস্ত জনমোহিনী প্রকল্প চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবেনা রাজ্য সরকার ৷ টাকার অভাবে অল্পদিনের মধ্যেই এই প্রকল্পগুলো মুখ থুবড়ে পড়বে । কারণ খরচ বাড়লেও একই হারে রাজস্ব আদায় তো বাড়ছে না ৷
একই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং তৎকালীন প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ, ডঃ অমল কুমার মুখোপাধ্যায়ের ৷ তাঁর কথায়, এটা ঠিক যে এই জনমোহিনী প্রকল্পগুলি যদিও তৃণমূল কংগ্রেসকে এখনকার মতো রাজনৈতিক সাফল্য এনে দিচ্ছে ৷ কিন্তু একই সঙ্গে এই বেহিসেবি খরচের ফলে সরকারি কোষাগারে হাঁড়ির হাল হয়েছে । সরকারের উচিত এই সমস্ত বেহিসেবি খরচ অবিলম্বে বন্ধ করা । রাজনীতির জন্য বেহিসেবি খরচ বেশি করলে, রাজ্যের অর্থনীতি পুরোপুরি ভেঙে পড়বে এবং রাজ্যের মানুষ অশেষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়বে ৷
আরও পড়ুন : Liquor Price reduce in WB : বিদেশি মদে আবগারি শুল্ক কমিয়ে রাজস্ব বাড়াতে চলেছে রাজ্য