কলকাতা, 15 জানুয়ারি: এমনিতে রয়েছে নাগরিকত্ব আইন নিয়ে বিতর্ক ৷ এরই মধ্যে ওপার বাংলা থেকে অবৈধভাবে এ রাজ্যে এসে হুজ্জুতির অভিযোগ উঠল হিজড়েদের বিরুদ্ধে ৷ যার জেরে অস্তিত্ব সংকটে এপার বাংলার আদি হিজড়েদের ৷ তাঁদের অভিযোগ, গত কয়েক বছরে বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে প্রচুর সংখক হিজড়ে তাঁদের দলবল নিয়ে এই দেশে প্রবেশ করেছে । শুধু তাই নয়, এ দেশে এসে তাঁরা এ রাজ্যের হিজড়েদের উপর অত্যাচার চালিয়ে তাঁদের প্রায় একঘরে করে দিয়েছে ৷ ফলে উপার্জনের রাস্তা হারিয়েছেন রাজ্যের বহু হিজড়ে সম্প্রদায়ের মানুষ ৷
হিজড়া ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য সম্রাজ্ঞী দত্ত বলেন যে, বারুইপুর পুলিশ থানা এবং সোনারপুর পুলিশ থানা এলাকায় এই সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে । এই সব হিজড়েরা তাঁদের জীবিকা কেড়ে নিচ্ছেন । হিজড়েদের জীবিকার একমাত্র মাধ্যম হল কোনও বাড়িতে সন্তান জন্ম নিলে বা কোনও বাড়িতে বিয়ে বা কোনও শুভ অনুষ্ঠান হলে সেখান থেকে উপহার স্বরূপ কিছু পাওনা নেওয়া । সম্রাজ্ঞী বলেন যে, খুশি হয়ে যে যা দেন, তাই হাসিমুখে গ্রহণ করেন তাঁরা ৷ পাওনার জন্য কখনও কারও উপর জোর জুলুম করেন না ।
মূলত এঁরা ছোট ছোট অনেকগুলি দলে বিভক্ত হয়ে কাজ করেন । এবং অলিখিত নিয়ম মাফিক নিজেদের নির্দিষ্ট এলাকার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থেকে স্থানীয় মানুষজনের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলেন ৷ সম্রাজ্ঞীর দাবি, বাংলাদেশ থেকে একদল হিজড়ে অবৈধ ভাবে এই দেশে ঢুকে পড়েন, তারপর দালাল ধরে বা কারওকে প্রভাবিত করে তাঁরা এই দেশের পাসপোর্ট-সহ যা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র টাকার বিনিময়ে তৈরি করিয়ে নিচ্ছেন । ওখানকার হিজড়েদের সঙ্গে আরও অনেকে এই দেশে ঢুকে পড়েছেন । প্রকৃতপক্ষে হিজড়ে না হয়েও তাঁদের অনেকে এখন নিজেদের হিজড়ে বলে দাবি করে পরিচয়পত্র বের করে নিয়েছেন ।
সম্রাজ্ঞী দত্ত বলেন, "এখন আমাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকে গিয়েছে । ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ড থেকে শুরু করে পুলিশ কমিশনারকে ও দক্ষিণ 24 পরগনার জেলাশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে ৷ জানানো হয়েছে সোনারপুর এবং বারুইপুর থানা ও পঞ্চায়েত প্রধানকে । সম্প্রতি আমরা আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি এবং মামলাও করেছি । এখনও শুনানির দিন পড়েনি।"
পূজা কিন্নর বলেন, "এরা কিন্তু নিজেদের পরিচয়পত্রই দেখাতে পারবে, তবে তাঁদের বাপ ঠাকুরদা এই দেশের নাগরিক বলে পরিচয় পত্র দেখাতে পারবেন না । কিন্তু আমরা পারব । আমরা এখানকার আদি বাসিন্দা । আমাদের পূর্ব পুরুষরাও এখানকার । এরা এখন আমাদের উপরে অকথ্য জুলুম করছে । আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যাওয়ার হুমকি দিচ্ছে । আমাদের মারধর করছে । আমরা চরম ভয় ও সংকটের মধ্যে দিন কাটাচ্ছি । শুধু তাই নয়, সবার এলাকার মধ্যে ঢুকে পড়ে ক্লায়েন্টদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুজ্জুতি করে টাকা নিচ্ছে । আমাদের বিরুদ্ধে বাড়ি বাড়ি গিয়ে বদনাম করছে ।"
ট্রান্সজেন্ডার অ্যাকটিভিস্ট ও ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সজেন্ডার ডেভলপমেন্ট বোর্ডের প্রাক্তন সদস্য রঞ্জিতা সিনহা জানান যে, এটা সত্যিই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না । পুলিশ এবং রাজ্য প্রশাসন সব জায়গায় সমস্যাটি জানানো হয়েছে । এমনিতেই হিজড়ে সম্প্রদায়ের আর্থিক দুরবস্থা রয়েছে ৷ তার উপর যদি বয়স্ক হিজড়ে যাঁরা আর উপার্জন করতে পারেন না, তাঁদের উপরে অত্যাচার করে তাহলে সেইটা সত্যিই খুব দুঃখজনক । এবং বাংলাদেশি হিজড়েরা এমন ভয় দেখাচ্ছে যে, অন্যান্য হিজড়েদের একরকম বাড়ি থেকে বেরোনো বন্ধ হয়ে গিয়েছে । উপার্জনের পথ বন্ধ হওয়ার মতো অবস্থা । তাহলে এঁরা নিজেরা কী খাবেন, আর তাঁদের উপর নির্ভরশীল বয়স্ক হিজড়েরাই বা কী খাবেন ?"
এ দিকে, যে হিজড়েদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তাঁদেরই অন্যতম শ্রাবণ হিজড়ের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি খুব স্পষ্ট করেই জানান যে, গত 10 বছর হল তাঁরা বাংলাদেশ থেকে এই দেশে এসেছেন । লোক ধরে পরিচয় পত্র করিয়েছেন । তাঁদের পেট চালাতে তাঁরা সব এলাকায় ঢুকেই কাজ করেন ।
শ্রাবণ আরও বলেন, "ওরা আমাদের সঙ্গে ঝামেলা করেছে । ওরাও আমাদের এলাকায় ঢুকে পাওনা নিয়ে যাচ্ছে । তাই ওদের মেরেছি । আমাদের মধ্যে মারপিট সব হয় । আমরা খেতে এসেছিলাম । খাব । পিছনে হাঁটব না । ওরা যা পারে করে নিক । সব এলাকা আমাদের, ওদের খেতে দেব না । ওদের আরও মেরে তাড়াব ।"
আরও পড়ুন: