কলকাতা, 20 জুন: পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কি পর্যাপ্ত পুলিশ নেই ? মঙ্গলবার এই প্রশ্নই তুলেছে সুপ্রিম কোর্ট ৷ এ দিন শীর্ষ আদালতে কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনের দায়ের করা মামলার শুনানি হয় ৷ সেই শুনানিতেই এই প্রশ্ন তোলে সুপ্রিম কোর্ট ৷
প্রসঙ্গত, কলকাতা হাইকোর্ট এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে পশ্চিমবঙ্গে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেয় ৷ সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয় রাজ্য সরকার ও রাজ্য নির্বাচন কমিশন ৷ কিন্তু শীর্ষ আদালত রাজ্যের আবেদন খারিজ করে দেয় ৷ মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি বিভি নাগরত্ন ও বিচারপতি মিশ্রার বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে হস্তক্ষেপ করার প্রয়োজন নেই ৷
তবে এই নির্দেশ দেওয়ার আগে শুনানি চলাকালীন বিচারপতিদের একাধিক প্রশ্নের মুখে পড়তে হয় রাজ্য সরকারকে ৷ এ দিন শুনানিতে রাজ্যের তরফে জানানো হয়, কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্যের সব জেলায় কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দিয়েছে ৷ কিন্তু পরিস্থিতি বিচার করে যদি অতিরিক্ত পুলিশ ফোর্স লাগে, তাই পাঁচটি রাজ্যকে বলে রাখা হয়েছে ৷ পাশাপাশি প্রায় 99 শতাংশ মনোনয়ন জমা দিতে পেরেছে বিরোধীরা । রাজ্যের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, সেখানে রাজ্যের পক্ষে কোথায় খামতি রয়েছে যে রাজ্য তড়িঘড়ি কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করতে অনুমতি দেবে ?
এই কথা শোনার পর বিচারপতি বলেন, ‘‘তার মানে আপনাদের পর্যাপ্ত পুলিশ ফোর্স নেই ? সেই জন্য পাঁচটি রাজ্য থেকে পুলিশ ফোর্স চেয়েছেন আপনারা ?’’ এর পর বিচারপতি 2013 ও 2018 সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রসঙ্গ তোলেন ৷ বলেন, ‘‘2013 এবং 2018 সালের নির্বাচনে হিংসার রেকর্ড রয়েছে আপনাদের । হিংসামুক্ত নির্বাচন হওয়া জরুরি । শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া জরুরি ।’’
আরও পড়ুন: সব জেলায় 48 ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ হাইকোর্টের
যদিও নির্বাচন কমিশনের তরফে বলা হয়, কমিশন স্পর্শকাতর জায়গা চিহ্নিত করার কাজ করছে । নির্বাচন কমিশন কিছু করছে না বলে হাইকোর্ট যে পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, তা ঠিক নয় । কারণ, 189 পোলিং স্টেশন বেশি স্পর্শকাতর বলে চিহ্নিত করা গিয়েছে । এখানে বেশি ফোর্স লাগবে । এই প্রক্রিয়া চলছে । জেলা নয়, কোন কোন বুথ স্পর্শকাতর, তা চিহ্নিত করা হচ্ছে ।
একই সঙ্গে কমিশন জানায়, পঞ্চায়েত মামলার পরের নির্দেশে 15 জুন হাইকোর্ট নির্দেশে জানায় সব জেলায় ফোর্স দিতে ।মূল্যায়ন করে রাজ্য ঠিক করবে, কত ফোর্স লাগবে । ফোর্স চাওয়ার কাজ কমিশনের নয় । তখন রাজ্যের তরফে প্রশ্ন তোলা হয়, তাহলে স্পর্শকাতর বুথে নয় গোটা রাজ্যকে ঘিরে রাখতে হবে কেন্দ্রীয় বাহিনী দিয়ে ? এর পর বিচারপতি বলেন, ‘‘এটা শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য । রাজ্য পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর পারস্পরিক সহযোগিতার মধ্যে দিয়ে শান্তিপূর্ণ নিরপেক্ষ নির্বাচন করবে সেটাই কাম্য ।’’
অন্যদিকে বিরোধী দলনেতার তরফে আইনজীবী হরিশ সালভে বলেন, ‘‘কেন্দ্রীয় বাহিনীতে রাজ্যের সমস্যা কোথায় ? নির্বাচন কমিশন হাইকোর্টের প্রথম নির্দেশ দেওয়ার পর চুপচাপ ছিল কেন ? কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন কি না, তার থেকে বেশি এখানে রাজ্যের মনোভাব আমরা কেন্দ্রীয় বাহিনী নেবো না । রাজ্য ও নির্বাচন কমিশনকে নির্দেশ দেওয়ার পরও তাদের কাছে 15 জুন পর্যন্ত কেন কোনও মূল্যায়ন রিপোর্ট ছিল না ? তার মানে রাজ্যের নিরপেক্ষ নির্বাচন করানোর কোনও ইচ্ছে নেই বলতে হয় । কেন্দ্রীয় বাহিনী রাজ্য নেবে না যেহেতু কেন্দ্রীয় বাহিনী তাদের নিয়ন্ত্রাধীন নয় ?’’ কংগ্রেসের তরফে আইনজীবী ঋজু ঘোষাল জানান, সিসিটিভি লাগানোর নির্দেশ ও ভিডিয়োগ্রাফ করার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনও কিছুই করা হয়নি ।
সমস্ত সওয়াল-জবাব শেষে তাই সুপ্রিম কোর্ট এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশ দেয় ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েনের নির্দেশই বহাল সুপ্রিম কোর্টে, খারিজ রাজ্যের আবেদন